শেষের পাতা
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা জটিলতায় ধুঁকছেন শিক্ষার্থীরা
পিয়াস সরকার
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
উচ্চশিক্ষা ও উন্নত জীবনের জন্য জার্মানি থাকে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায়। কিন্তু বাদ সেধেছে অপেক্ষার সময় বা ওয়েটিং পিরিয়ড। শিক্ষার্থীদের এমনই অবস্থা যে, এখন নতুন করে কেউ জার্মানিতে পড়তে যেতে চাইলে তার অপেক্ষা করতে হতে পারে ৪০ বছর। দেশটির ১৬টি প্রদেশের মধ্যে ১৪টিতে শিক্ষার্থীদের দিতে হয় না কোনো টিউশন ফি। আর সেমিস্টার ফি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। বছরে ৪০০ থেকে ৮০০ ইউরো। লাগে না পরিবহন ভাড়া। রয়েছে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ। এসব কারণে জার্মানি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। কিন্তু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সহজে মিলছে না সিরিয়াল। যার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে ভর্তিচ্ছু ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর জার্মানি যাওয়ার স্বপ্ন।
ঢাকায় অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে এক হাজার ৭২৩ জনের ভিসা দিয়েছে জার্মানি। যা করোনার আগের বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী অফার লেটার ও ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও যেতে পারছেন না। ভর্তিচ্ছুরা চাচ্ছেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত জার্মান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এর সমাধানে আসা।
২০২৫ সালের ২৫শে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন অপেক্ষমাণ তালিকায়। যা বাড়ছে নিয়মিত। অন্যদিকে জার্মান দূতাবাসের বার্ষিক সক্ষমতা মাত্র দুই হাজার। জুবায়ের হাসান নামে এক ভর্তিচ্ছু বলেন, আড়াই বছর ধরে জার্মানির অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। এপয়েন্টমেন্টের সময় বলা হয়েছিল অপেক্ষায় থাকতে হবে ১৬/১৭ মাস। কিন্তু আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও পাননি সিরিয়াল। তিনি যোগ করেন জার্মানি যেতে পারবেন কিনা জানেন না; তবে ‘সেমিস্টার কন্ট্রিবিউশান ফি’ বাবদ প্রায় এক লাখ টাকা দিতে হয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু এখনো যেতে পারি নি। যেতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তাও পাচ্ছি না। ইকবালুর রহমান সরকার। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তিনি জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। হাতে অফার লেটার নিয়ে করছেন অপেক্ষা। বলেন, আমি মাস্টার্সের জন্য যেতে চাই। দু’বছরের কোর্স কিন্তু আমার দেশেই মাস্টার্স শেষ হওয়ার পথে কিন্তু এখনো যেতেই পারলাম না।
জার্মানি যাওয়ার পথ সহজকরণের জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান আলম নামে এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যোগাযোগ করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইতিমধ্যে একাধিকবার ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলমান ভিসা সমস্যার আশু সমাধানের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন, সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান ভিসা আবেদন সংখ্যার অনুপাতে দূতাবাসে আবেদন প্রক্রিয়াকারী জনবলের সংকট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে ওয়েটিং পিরিয়ড ছিল ১২-১৫ মাস। এরপর তা দাঁড়ায় ১৫-১৯ মাস। পরে তা বাড়িয়ে করা হয় ২৪ মাস। বর্তমানে দূতাবাস নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারাও জানে না অপেক্ষার সময়কাল কতোদিন হবে।
জার্মান দূতাবাস বাংলাদেশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবেদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায়, আপনার জন্য অপেক্ষার নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণা দিতে পারছি না। অনুগ্রহ করে ধৈর্য ধরুন এবং প্রক্রিয়ার জন্য যথাযথভাবে অপেক্ষা করুন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একই সমস্যা হয়েছিল পাকিস্তানেও। তারা গত ২০শে জানুয়ারি থেকে নতুন পদ্ধতি চালু করে। আবেদনকারীরা কনস্যুলার সার্ভিস পোর্টাল ব্যবহার করে আবেদন করছে। যার কারণে উঠে গেছে সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার সুযোগ। অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে মিলছে সুবিধাজনক সময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। ভারতের নয়াদিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও কলকাতা সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়া হচ্ছে না। তারাও আবেদন করছে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক খবরে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মতো একই ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছিলেন পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা। তবে, এখন সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে দেশটি। প্রতিবেদন তথ্যমতে, ২০২২ সালের পর থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের পর ১২ মাস বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছিলো দেশটির শিক্ষার্থীদের।
এবিষয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের সঙ্গে টুইটারে যোগাযোগ করেন। সেখানে তিনি বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন জমা দেয়ার প্রক্রিয়া আমাদের বহিরাগত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ভিএফএস ঢাকাকে আউটসোর্স করেছে। যদিও প্রতিটি ভিসা আবেদনের সিদ্ধান্ত এখনো অ্যাম্বাসির দ্বারাই নেয়া হয়, তবে ভিএফএস অ্যাম্বাসির কাজের চাপ কমিয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে আরও বেশি আবেদন প্রসেসিং সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া জার্মানির বাসস্থান আইনে পরিবর্তন এসেছে, যা শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন প্রসেসিংয়ের সময় জার্মানির স্থানীয় অভিবাসন অফিসের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা কমিয়েছে। এটি আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে এবং আগের তুলনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের সংখ্যাকে অ্যাম্বাসির প্রসেসিং সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য আরও ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করছি।