খেলা
হামজা কি পারবেন বাংলাদেশের সুনীল হতে!
স্পোর্টস রিপোর্টার, শিলং (ভারত) থেকে
২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার
২০২৪ সালের ৬ই জুন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে জাতীয় দলকে বিদায় বলে দেন সুনীল ছেত্রী। সুনীলকে ছাড়া মাঝে চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে ভারত। চার ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি। গোল পাচ্ছিলেন না ভারতের ফরোয়ার্ডরা। সুনীলকে ছাড়া খেলা চার ম্যাচে ভারত গোল করেছে মাত্র দুটি। এশিয়ান কাপ বাছাইকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ম্যাচের আগে সুনীল ছেত্রীকে ফিরিয়েছেন দলটির স্প্যানিশ কোচ মোনালো মার্কেজ। ১৯শে মার্চ মালদ্বীপের বিপক্ষে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে ফিরেই গোল করেন এবং গোল করান সুনীল। ভারতও জয়ের গন্ধ পায়। সুনীল মানে ভারতীয় ফুটবলের নীল আকাশ। আকাশের সীমা নেই। সুনীল ছেত্রীর অবদানও বিশাল-বিপুল ভারতের ফুটবলে। একজনের ছোঁয়ায়, একজনের উপস্থিতিতে একটা দল যে বদলে যেতে পারে তার প্রমাণ সুনীল ছেত্রী। বাংলাদেশ দলের এমন এক জনের দরকার ছিল। হামজা চৌধুরীর অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ দলের সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছে।
গত সোমবার বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন হামজা চৌধুরী। সেদিন থেকেই তাকে ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ছিল তুমুল উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা। সিলেটের ওসমানী এয়ারপোর্টে তাকে স্বাগত জানাতে ছুটে যান ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারাসহ বহু গণমাধ্যমকর্মী আর সমর্থকরা। হবিগঞ্জের বাহুবলের নিজ বাড়িতে যাওয়ার পর গ্রামবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হন হামজা। সেখানে স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। একদিন পর ঢাকায় বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেন হামজা। ভারত যাওয়ার আগের দিন বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলনেও সবার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা এই ফুটবলার। বর্তমানে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজা মাত্র পাঁচটি প্র্যাকটিস সেশনে মিশে গেছেন দলের সঙ্গে। আজ শিলংয়ে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হবে তার। এর আগে হামজা ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ৬ মৌসুম লেস্টার সিটিতে খেলেছেন। এছাড়া চার মৌসুম খেলেছেন চ্যাম্পিয়নশিপে। মাঝে ২০১৮ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে চীন অনূর্ধ্ব-২১’র বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। পরের বছর জায়গা পান উয়েফা ইউরোপিয়ান অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপেও। ২০১৯ সালের জুনে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে খেলেন তিনি। বয়সভিত্তিক দলে খেলে খেলে পরে জাতীয় দলে খেলার পরিকল্পনা ছিল তার। যদিও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এবার লাল-সবুজের জার্সিতে স্বপ্ন পূরণে এসেছেন। তার শুরুটা হবে আজ। তার আগে চার দিন শিলংয়ে দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন হামজা।
হামজাকে কেন্দ্র করেই অনুশীলন করেছিলেন হাভিয়ের কাবরেরা। সেখানে সংবাদকর্মীদের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতেও ছিলেন এই ফুটবলার। সতীর্থদের বিশ্বাস স্বল্প সময়ে দলের সঙ্গে খুব ভালো ভাবেই মানিয়ে নিয়েছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলা এই ফুটবলার। দলের কোচেরও আস্থা আছে তার উপর। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াতো হামজাকে বাংলাদেশ দলের মেসি হিসেবে আখ্যা দিয়েছন। বাংলাদেশের মেসির অভিষেক ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারত শক্তির বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে। তবে হামজা আছেন বলেই শক্তির তফাৎ অনেকটা ঘুচে যাওয়ার কথা। হামজায় চিন্তিত হয়েই ভারত ফিরিয়ে এনেছে তাদের ইতিহাসের সেরা ফরওয়ার্ড সুনীল ছেত্রীকে। তবে হামজাও পরীক্ষিত। তার রয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ ও ইংলিশ ফুটবলের বিশাল অভিজ্ঞতা। এখন পর্যন্ত পেশাদার ফুটবলে খেলেছেন ২০৩টি ম্যাচ। সব মিলিয়ে হামজা কি পারবেন বাংলাদেশের সুনীল ছেত্রী হতে!