খেলা
শান্তর ব্যাটিংয়ে ট্রলের প্রভাব
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার
ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে আবাহনীর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চার ম্যাচের তিন ইনিংসে কোন ফিফটিও হাঁকাতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস। বলার অপেক্ষা রাখে না ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না ঘরোয়া ক্রিকেটে। অন্যদিকে সবশেষ আন্তর্জাতিক ৬ ওয়ানডে ম্যাচে তিনি হাঁকিয়েছেন একটি ফিফটি। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলেছে ৭৭ রানের ইনিংস। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টিতে যেন ব্যাট করতেই ভুলে গেছেন। শেষ ১৯ ইনিংসে কোনো ফিফটি হাঁকাতে পারেননি। এরই মধ্যে ২০ ওভারের ফরম্যাট থেকে তিনি নেতৃত্বও ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, অধিনায়ক হিসেবেই তিনি থাকতে চান না বলেই জানা গেছে। যদিও এখনো শান্ত টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে দুই টেস্ট সিরিজের নেতৃত্ব দিবেন। এরপরই পাকিস্তান যাবে দ্বি-পাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজ খেলতে। কিন্তু তার আগে অধিনায়ক ব্যাটিংয়ে অফ ফর্ম দলের জন্য চিন্তার কারণ। বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ দল থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। অধিনায়কের ফর্মে না থাকার শঙ্কা মানছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ সারওয়ার ইমরান। তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশই নয়, যখন কোনো দলের অধিনায়ক ফর্মে থাকে না সেটি অবশ্য শঙ্কার কারণ।
কারণ তার বাজে ফর্মের প্রভাব কোনো না কোনো ভাবে পড়বেই। শান্তর বেলাতেও তা ব্যতিক্রম হওয়ার কথা না। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একটি ম্যাচে রান পেলেও তার বাজে ফর্মের প্রভাব কিন্তু ছিল। সামনে জিম্বাবুয়ে আসতে তার আগে যদি রানে ফিরতে পারে আশা করি দলের জন্য ভালো। যদিও এখন খেলছে ওয়ানডে ফরম্যাটে, কিন্তু রানে থাকলে আত্মবিশ্বাসও থাকে।’ আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে আসবে জিম্বাবুয়ে। খেলবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অধিনায়ক বদলের কোনো সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে সেই সিরিজে শান্তই নেতৃত্ব দেবেন। ইনজুরির কারণে সবশেষ চারদিনের জাতীয় ক্রিকেট লীগে খেলা হয়নি শান্তর। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচে তিনি ফর্মেও আছেন। ভারতের বিপক্ষে একটি খেলেছেন ৮২ রানের ইনিংস। সবশেষ টেস্ট খেলেছে গেল বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। মিরপুর ও চট্টগ্রামে তিনি ব্যাট হাতে ব্যর্থ। দুই টেস্ট ৪ ইনিংসে সব মিলিয়ে করেছেন ৭৫ রান। এই ফরম্যাটে তার সবশেষ সেঞ্চুরি ২০২৩ এ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে। তার আগের ম্যাচে অবশ্য আফগানদের বিপক্ষে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে ৩৩ টেস্ট খেলা এই ব্যাটার করেছেন ২৮.৪৮ গড়ে ১৭৬৬ রান যেখানে হাঁকিয়েছেন পাঁচ সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটি। অন্যদিকে দেশের হয়ে ৪৯ ওয়ানডে ম্যাচে ৩৪.৩৭ গড়ে ১৫৬৫ রান। যেখানে হাঁকিয়েছেন ৩ সেঞ্চুরি ও ১০ ফিফটি। তবে জাতীয় দলের শুরু থেকেই তার ফর্ম নিয়ে চলছে দারুণ সমালোচনা। মাঝে রানে ফিরলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। ফের হারিয়েছেন ফর্ম। কী কারণে তার ব্যাটিংয়ে এমন উত্থান-পতন! মানসিক না কৌশলগত সমস্যাতে ভুগছেন তিনি! এ নিয়ে সারোয়ার ইমরান বলেন, ‘আমার শান্তর কথা শুনে মনে হয় সে খুব বেশি সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি ও সংবাদপত্র ফলো করে। যেখানে তাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়, ট্রল হয়। যার প্রভাবটা তার মানসিকতা ও ব্যাটিংয়ে পড়ে ভীষণভাবে। আর ব্যাটিং টেকনিকে ভুলের চেয়ে তার মনোসংযোগের অভাবটাই আমি বড় করে দেখবো এমন ফর্ম হারানোর পেছনের কারণ হিসেবে।’ অন্যদিকে জাতীয় দল থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছেন সিনিয়র ক্রিকেটাররা। তামিম ইকবালের পর সব ফরম্যাট থেকে অবসরে গেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মুশফিকুর রহীম টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে থেকেও অবসর নিয়েছেন। সাকিব আল হাসান দেশেই আসতে পারছে না। প্রশ্ন হচ্ছে তাদের বিকল্প নিয়ে। শান্ত, লিটন দাস, সৌম্য সরকারারা এখনো নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি ধারাবাহিক ভাবে। যে কারণে সামনে বাংলাদেশ দল পড়তে বড় চ্যালেঞ্জই। এ নিয়ে সারওয়ার ইমরান বলেন, ‘এটা হওয়ারই কথা ছিল। তিনজন অভিজ্ঞ নেই। আর শান্ত, লিটনরা তাদের বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি। হ্যাঁ, বড় একটা গ্যাপতো হবেই। কিন্তু এখন পিছনে তাকালে হবে না যারা আছে তাদের সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নষ্ট হওয়া সিস্টেমটা ঠিক করতে হবে। পাইপ লাইন শক্তিশালী করলে আশা করি কয়েক বছরে কিছুটা হলেও শূন্যতা পূরণ হবে।’