বাংলারজমিন
পরীক্ষামূলক উৎপাদনের দ্বিতীয় ধাপেও সাফল্য
এক একরে ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
৭ আগস্ট ২০২২, রবিবার
গেল বছর পরীক্ষামূলক উৎপাদনের প্রথম পর্যায়ে এক একর জমির পুকুরে ভেনামি চিংড়ি পাওয়া যায় ৪ হাজার ১০১ কেজি। যার সময়সীমা ছিল ১০৮ দিন। ঠিক এক বছর পর পরীক্ষামূলক উৎপাদনের দ্বিতীয় ধাপে একই পুকুরে ভেনামি মিলেছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি। যার সময়সীমা মাত্র ৮৮ দিন। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার ২১ দিন কম চাষেও উৎপাদন বেড়েছে ৩৪৪ কেজির বেশি। উৎপাদনের এ চিত্র দেখে অনেকেই মন্তব্য করেন ভেনামি চিংড়ির যেন ‘খই’ ফুটেছে। যশোরের এম ইউ সি ফুড লিমিটেড নামক একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়বারের মতো এ চিংড়ির চাষ করেছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির বলেন, গত বছর হেক্টর প্রতি ভেনামি উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৪শ’ কেজি। আর এবার উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার কেজি। এমনকি ২১দিন কম চাষ করেও হেক্টর প্রতি ৬শ’ কেজি উৎপাদন বেশি হয়েছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদনের দ্বিতীয় ধাপেও সাফল্য ধরা দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এম. ইউ সী ফুড্স লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, গত বছর প্রথম চাষ করে আমরা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। যা এবার কাজে লেগেছে। যার ফলাফলও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, দু’বারের পরীক্ষামূলক চাষে আমরা সফল হয়েছি। ফলে সরকার এখন ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি দিতে পারেন। বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি মিললে বিশ্ব বাজার ধরা সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে প্রথম আমেরিকায় ভেনামি চিংড়ি চাষ হয়। বিশ্ববাজারের ৮০ শতাংশ রপ্তানি খাত দখল করে আছে এই চিংড়ি। খরচ কম উৎপাদন বেশি অল্প জায়গায় অধিক লাভ এমন সম্ভাবনা নিয়ে গত ২০ বছর ধরে বিএফএফইএ এর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার প্রথম প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রজেক্ট এর মাধ্যমে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের ৩০টি কোম্পানি আবেদন করলেও যাচাই-বাছাই শেষে ৮টি কোম্পানিকে সরাসরি লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ৪টি কোম্পানিকে শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এরমধ্যে এম ইউ সি ফুড খুলনায় প্রথম ভেনামি চিংড়ি চাষ শুরু করে। প্রথমবার অভাবনীয় সাফল্যের পর। কোম্পানি মালিকসহ সাধারণ কৃষকের মাঝে ভেনামি চিংড়ি চাষ আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশ্ববাজারে ভেনামি চিংড়ির প্রতিনিয়ত উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৩ সালে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ২৭ লক্ষ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে বাগদা হয়েছে ৬.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন গলদা হয়েছে ২ লক্ষ মেট্রিক টন। একইভাবে ২০১৪ সালে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৩২.৪০ লক্ষ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে বাগদা হয়েছে ৫.৯০ লক্ষ মেট্রিক টন, গলদা হয়েছে ২ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৫ সালে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৩১.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে বাগদা হয়েছে ৫.১০ লক্ষ মেট্রিক টন গলদা হয়েছে ২.১০ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৫ সালে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৩১.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে বাগদা হয়েছে ৫.১০ লক্ষ মেট্রিক টন, গলদা হয়েছে ২.১০ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৬ সালে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৩২ লক্ষ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে বাগদা হয়েছে ৫ লক্ষ মেট্রিক টন, গলদা হয়েছে ২.১০ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৭ সালে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৩৪.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে বাগদা হয়েছে ৫.৩০ লক্ষ মেট্রিক টন, গলদা হয়েছে ২.২০ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০১৮ সালে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে ৩৫.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে বাগদা হয়েছে ৫.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন ,গলদা হয়েছে ২.৪০ লক্ষ মেট্রিক টন। অর্থাৎ বাগদার থেকে ৬ গুণ বেশি উৎপাদন হয় এই ভেনামি চিংড়ি। এভাবে প্রতিনিয়ত ভেনামি চিংড়ি চাষের যেমন উৎপাদন বাড়ছে তেমনি বাগদা ও গলদা চিংড়ি চাষ কমে আসছে। ভেনামি চিংড়ি চাষে বিশ্বের সবচেয়ে এগিয়ে আছে চীন এরপর ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস হুমায়ুন কবির বলেন, এক হেক্টর জমিতে সনাতন পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করলে বছরে উৎপাদন হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি। অথচ একই জমিতে উন্নত পদ্ধতিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ করলে উৎপাদন হয় ১০ টনেরও বেশি। কিন্তু এখনো বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের অনুমতি দেয়নি সরকার। এ ছাড়া পাইলট প্রকল্প হওয়ায় এই খাতে কোনো ব্যাংক ঋণ দেয় না। এ কারণে অবিলম্বে বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষের অনুমতি দেয়ার দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভেনামি চিংড়ি চাষ করার জন্য আমরা গত ২০ বছর ধরে সরকারের কাছে আবেদন করে আসছি। এই ধারাবাহিকতায় সরকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে দু’বার পরীক্ষামূলক চাষের অনুমতি দেয়। এরমধ্যে এম ইউ সী ফুড লিমিটেড খুলনায় প্রথম ।