খেলা
অবৈধ পথে ইউরোপে গিয়ে এখন ফ্রান্স জাতীয় দলের ক্রিকেটার
স্পোর্টস ডেস্ক
৬ আগস্ট ২০২২, শনিবার
আফগানিস্তানের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন একটা সময়। রশিদ খান-মোহাম্মদ নবীদের সতীর্থ হওয়ারই কথা ছিল দাউদ আহমদজাইয়ের। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে আজ তিনি ফ্রান্স ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়। আফগানিস্তান থেকে দাউদের ফ্রান্সে যাওয়ার গল্পটা বেশ লোমহর্ষক। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে ইউরোপে ঢোকেন তিনি। প্রথমে শরণার্থী তারপর প্রতিভাগুণে পেয়ে যান ফ্রান্সের নাগরিকত্ব। আফগান সংবাদমাধ্যম পাজুক ডটকমকে ইউরোপে আসার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন দাউদ আহমদজাই। ২৬ বছর বয়সী এই স্পিন অলরাউন্ডার জানিয়েছেন, আফগান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) অবহেলাই তাকে ইউরোপে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে বাধ্য করেছিল।
দাউদ আহমদজাইয়ের জন্ম আফগানিস্তানের লোগার প্রদেশে। কাবুলে ক্রিকেট একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পরিবারের সঙ্গে সেখানে চলে যান দাউদ। ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় স্কুলেও ভর্তি হন। সেখান থেকে অর্জন করেন সার্টিফিকেট। দাউদ বলেন, ‘আমার বাবা মারা গেছেন। একবার রেডিও শুনতে পাই কাবুলে ক্রিকেট একাডেমি হয়েছে। তখন আমরা সেখানে স্থানান্তরিত হই। আফগানিস্তান দলের বর্তমান অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহিদি আমার ক্লাসমেট ছিল।’
আফগানিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৬, ১৭ ও ১৯ দলের হয়ে খেলেছেন দাউদ আহমদজাই। কিন্তু জাতীয় দলে জায়গা পাননি। দাউদের দাবি, তার মতো অনেকের সঙ্গেই ‘অবিচার’ করেছে বোর্ড। তিনি বলেন, ‘যখন বুঝতে পারলাম ওরা আমাদের প্রাপ্যটা দেবে না। আমি হতাশ হয়ে পড়ি এবং সিদ্ধান্ত নিই দেশ ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমানোর।’
বৈধ পথে ইউরোপ যাননি দাউদ আহমদজাই। মানব পাচারকারীর সহায়তায় ইরান হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেন দাউদসহ আরও অনেকে। কিন্তু যাত্রাপথে ঘটে বিপত্তি। দাউদ বলেন, ‘যখন আমরা তুর্কি-ইরান সীমানার কাছে পৌঁছালাম, সীমান্তরক্ষীরা আমাদের দিকে গুলি ছুঁড়তে লাগলো। আমার এক বন্ধুর পায়ে বুলেট লাগে। কোনোমতে সে তুরস্কে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।’
তুরস্ক থেকে গ্রিসে যাওয়ার পথ ছিল আরও বিপৎসংকুল। দালালরা ৭০ জনের নৌকায় ৯০ জনকে তুলে দেয়। রাতের বেলায় সমুদ্র পথে গ্রিসে যাওয়ার সময় নৌকা ভেঙে দু’টুকরা হয়ে যায়। দাউদ বলেন, ‘তখন আমরা চিৎকার করছিলাম। তিন ঘণ্টা কান্নাকাটির পর একটি মাছ ধরার নৌকা এসে আমাদের উদ্ধার করে এবং ব্যাপারটা গ্রিক নৌবাহিনীকে জানায়। তারপর ওরা এসে আমাদের নিয়ে যায়।’
একটি ফরাসি ক্যাম্পে কিছুদিন বাস করার পর দাউদ আহমদজাইয়ের কপাল খুলে যায়। ভালো ক্রিকেট খেলতেন বিধায় সুযোগ পেয়ে যান ফ্রান্স ক্রিকেট দলে। কিন্তু ফ্রান্সে ক্রিকেট জনপ্রিয় কোনো খেলা নয়। মূলত এশিয়ান অভিবাসীদের নিয়ে দল গড়া হয়েছে। যাদের অধিকাংশই ভারতীয়, পাকিস্তানি ও আফগান। আইসিসি’র সহযোগী সদস্য ফ্রান্স এখন টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপের ইউরোপিয়ান বাছাইপর্ব খেলছে। দাউদের আশা, একদিন তিনি আফগানিস্তানে ফিরে জাতীয় দলে খেলবেন। তিনি বলেন, ‘এটা আমার মাতৃভূমি। জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা হবে অনেক বড় সম্মানের।’