ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

খোলা চোখে

তবুও আমলারা উড়বেনই

৫ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার
mzamin

আমলাদের আইনি, বেআইনি, নৈতিক, অনৈতিক সব রকম সুযোগ-সুবিধার ফিরিস্তি দিলাম একারণে যে, জনগণের করের টাকায় তারা এত সুযোগ-সুবিধা পান অত্যন্ত নিম্নমানের সেবা দেয়া সত্ত্বেও। একটা গরিব দেশের মানুষের করের টাকায় রাজার হালে জীবনযাপন করা মানুষগুলো দেশের একটা চরম অর্থনৈতিক সংকটেও কিছু দিনের জন্য নানা ফন্দিফিকির করে বিদেশে যাবার চর্চা বাদ দিতে পারেন না

 

জনাব হেলালুদ্দীনকে মনে আছে আপনাদের? ২০১৮ সালে রাতে ব্যালট বাক্স ভরার তথাকথিত নির্বাচনের সময় এই ভদ্রলোক ছিলেন নির্বাচন সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত মানুষ, নির্বাচন কমিশন সচিব। রাতের ভোটের কথা বিএনপিসহ সরকারের বিরোধীরাই শুধু বলে না, বলেন নির্বাচন পরিচালনাকারী নির্বাচন কমিশনাররা, এমন কি বলেন সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের জোটসঙ্গী হিসেবে অংশগ্রহণ করা জাতীয় পার্টির মহাসচিব স্বয়ং। এ ছাড়াও সেই নির্বাচনের পর পর আরেক জোটসঙ্গী বাংলাদেশ জাসদ (শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন) পার্টির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতের ভোটের অফিসিয়াল স্বীকৃতি দিয়েছিল। এমন কি খোদ আওয়ামী লীগেরই কেউ কেউ মুখ ফস্কে বা নিজের হিসাব বুঝতে হঠাৎ হঠাৎ স্বীকার করে বসেন রাতের ভোটের কথা।  যাই হোক, আজকের এই কলামে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকে একেবারে ধ্বংস করায় জনাব হেলালুদ্দীনের ভূমিকা নিয়ে আলাপ করছি না। এই কলামে তিনি এসেছেন অন্য এক প্রসঙ্গে। নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবে দায়িত্বে থেকে সরকারের দেয়া মিশন শেষ করার পর বড় পুরস্কার তার প্রাপ্য ছিল। তিনি পেয়েছিলেনও সেটা- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয় তাকে। পদোন্নতি পেয়ে হন সিনিয়র সচিব।

 কিছুদিন আগে পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি) যান তিনি।

বিজ্ঞাপন
 আওয়ামী সরকারের একনিষ্ঠ সেবক এই মানুষটি তার অবসরের আগে এক চমৎকার ‘অফিসিয়াল ফেয়ারওয়েল’ পেয়েছিলেন। ‘ডলার বাঁচাতে’ রাষ্ট্রীয় টাকায় আমলাদের ঢালাও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ১০ দিনের জন্য নেদারল্যান্ডস ও স্পেন সফর করে দেশে ফিরেছিলেন জনাব হেলালুদ্দীন। এটা নাকি ছিল ‘শিক্ষা সফর’, যার সম্পূর্ণ খরচ বহন করা হয়েছে সরকারি তিনটি প্রকল্পের তহবিল থেকে। ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে ‘শিক্ষা সফর’ শেষ করে দেশে ফেরার একদিন পরেই তিনি পিআরএলে (অবসরোত্তর ছুটি) যান। শিক্ষা সফরের  এই ঘটনাটি এতই উদ্ভট এবং বিশ্বাস অযোগ্য যে কী কী ‘শিক্ষা’ তিনি পেয়েছেন আর কীভাবে সেটা দিয়ে দেশকে ‘শিক্ষা দেবেন’ সেই ব্যাপারে ব্যাখ্যা করার মতো যথেষ্ট যৌক্তিক গল্প বানাতে পারেননি বলেই বোধ করি তিনি সংবাদ প্রকাশকারী শীর্ষ দৈনিকটির কোনো যোগাযোগের চেষ্টায় সাড়া দেননি। বিদেশ থেকে তার নিয়ে আসা তথাকথিত শিক্ষা আসলে কী, সেটা মানুষ জানে। তবে এদেশের মানুষকে আমলাদের দেয়া একটা পুরনো শিক্ষা আবার নতুন করে দিলেন তিনি, এটা নিশ্চিত। ‘চাকরি করলে সরকারি, ব্যবসা করলে তরকারি’- করোনার সময় এ কথাটি ফেসবুকে অনেকেই খুব হালকা ঢঙে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনার সময়ে যখন বেসরকারি চাকরি করা বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, অনেকের বেতন কমেছে, বেতন অনিয়মিত হয়েছে, তখন সরকারি চাকরিজীবীদের নিশ্চয়তার জীবন দেখে মানুষ বুঝেছে চরম সংকটের সময় সরকারি চাকরির উপযোগিতা কী।

 আর মানুষের অর্থনৈতিক সংকট, লকডাউন মিলিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে অনেক রকম পণ্যের চাহিদা কমে গিয়ে ব্যবসায়ীরা চরম সংকটে পড়লেও তরকারির মতো অত্যাবশ্যক পণ্যের ব্যবসা চলেছে রমরমিয়ে।  করোনার সময় নতুন করে গুরুত্ব বোঝা গেলেও, গত বেশ কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে দেড় দশকে এদেশের শিক্ষিত তরুণদের কাছে বিসিএস পরীক্ষা স্রেফ এক উন্মত্ততায় পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বিসিএস পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের রেকর্ড। এর ব্যাখ্যায় অনেকেই বলেছেন, সরকারি চাকরির বেতন এক দফায়  দ্বিগুণ করে দেয়ার কারণে বিসিএসের প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে। কথাটা ঠিক না, বিসিএস নিয়ে উন্মত্ততা শুরু হয়েছে বেতন দ্বিগুণ হওয়ারও বেশ আগে।  কেবল তো বৈধ/অবৈধ পথে বিপুল টাকা উপার্জনই নয় আমলা মানেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ভোগের লাইসেন্স। নিজেদের বৈধ দায়িত্ব/ক্ষমতার সঙ্গে বিচার বিভাগ পৃথক্‌করণ সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক বিধানের (অনুচ্ছেদ ২২) সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারক হওয়ার স্বাদ পান প্রশাসনিক আমলারা। নানা আইন এবং বিধির মাধ্যমে স্থানীয় সরকারগুলোর ওপরে ছড়ি ঘোরানোর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদের। 

সব কিছুর সঙ্গে আমলাদের আছে সামাজিক প্রতিপত্তি, দাপট। সামপ্রতিক সময়ে বেশ কিছু ঘটনায় আমরা পরিষ্কার হয়েছি নিজেদের ক্ষমতাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে কীভাবে অপব্যবহার করেন তারা।  বেতন ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তাদের আছে আরও নানা রকম সুবিধা। আবাসিক সুবিধা, সরকারি প্রাপ্য গাড়ি, বেহিসেবিভাবে প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার, মূল্যের ক্ষুদ্র একটা অংশ পরিশোধ সাপেক্ষে নিজস্ব গাড়ি কেনা, গৃহনির্মাণ ঋণ এবং পেনশন। সর্বোপরি এদেশের সরকারি খাতে দুর্নীতির যে অকল্পনীয় রকম অঙ্কের তথ্য আমরা পাই তাতে এটা নিশ্চিত, বহু সরকারি আমলার কাছে তাদের সার্বিক উপার্জনের তুলনায় চাকরির সব সুযোগ-সুবিধাই তুচ্ছ। এত কিছুও যথেষ্ট নয়, দরকার আরও কিছু।  এই সরকারের আমলে আমলাদের জন্য সরকারের উপহার হচ্ছে মাঝেমাঝেই প্রমোদ ভ্রমণ, যদিও এর ওপরে শিক্ষা সফর, প্রশিক্ষণ, সম্মেলনে অংশগ্রহণসহ নানা মোড়ক লাগিয়ে দেয়া হয়। এক হিসেবে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর ২০০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচ হয় বিদেশে প্রশিক্ষণ এবং সফরের নামে। অথচ দুর্নীতিপরায়ণতার কথা বাদ দিলেও এই দেশে সরকারি আমলাতন্ত্রের অযোগ্যতা, অদক্ষতা দেশের সব মানুষ জানে। 

এসব তথাকথিত প্রশিক্ষণের মানে যে জনগণের অর্থের নয়ছয় এর বেশি কিছু না, সেটা একেবারেই স্পষ্ট। মনে পড়ছে সেই সময়কার কথা যখন দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রথম পাতায় বড় করে রাজনৈতিক কার্টুন ছাপতো। তখনকার একটা কার্টুনের কথা খুব মনে পড়ে- বিদেশমন্ত্রী দু’ডানা মেলে উড়ে চলেছে সুদূরের পানে। বিদেশমন্ত্রী বিদেশ যাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তারপরও সম্ভবত কার্টুনটি ছাপা হয়েছিল তার প্রশ্নবিদ্ধ অতিরিক্ত বিদেশ সফরকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু এখন যা জানতে পারছি তাতে আর কার্টুনের মতো হাল্কা, অস্থায়ী নয়, মনুমেন্ট বানিয়ে বিষয়গুলোকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী করে রাখা উচিত। শুরু হয়েছিল কবে তা জানি না, কিন্তু গত কয়েক বছরে একটির পর একটি খবর মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এই খবরগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের নানা কারণে-অকারণে বিদেশ ভ্রমণ। মনে পড়ছে, ‘খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ ভ্রমণ’ এমন খবর নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ভীষণভাবে মেতে উঠেছিল। তখন মন্ত্রীকে ব্যাখ্যা দিয়ে জানাতে হয়েছিল- প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থাপনা দেখতে কর্মকর্তারা বিদেশে যাবেন। ঐ ভ্রমণের প্রস্তাবকাণ্ডে মানুষ চমকে গিয়েছিল। 

কিন্তু একটু চোখ-কান খোলা রাখা মানুষের আসলে এতে অবাক হওয়ার কারণ ছিল না। গত কয়েক বছরে এমন অনেক বিদেশ ভ্রমণের খবর বা প্রস্তাবের কথা আমরা জানতে পেরেছি যেগুলো এর চেয়ে কম উদ্ভট, অস্বাভাবিক নয়। এর মধ্যে খুব আলোচিত কয়েকটি হলো-    পুকুর খননে দক্ষতা অর্জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট কিনতে, বিল্ডিং দেখতে, গরুর কৃত্রিম প্রজনন উন্নয়ন কার্যক্রম দেখতে, টেংরা-পাবদার মতো দেশি মাছ চাষের বিদেশি প্রশিক্ষণ নিতে, তেলজাতীয় ফসলের চাষ শিখতে ও মৌ পালনে প্রশিক্ষণ নিতে, বোয়িংয়ের একটি বিমান ডেলিভারি আনতে (৪৫ জন), ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পে ফল চাষ দেখতে, নলকূপ খনন শিখতে। এ ছাড়াও আলোচিত আরেকটি ঘটনা হলো- নাসার স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ জেতা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী ভিসা জটিলতায় যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেননি। অথচ প্রতিযোগীদের ছাড়াই ৮ জন কর্মকর্তা ঠিকই গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।   পত্রিকায় আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি প্রধানমন্ত্রী এই অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি এমনকি তার নিজের দপ্তরের অধীনে ‘এক বাড়ি এক খামার’ প্রকল্পে বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেটা বাতিল করেন। কিন্তু থেমে থাকেনি আমলাদের উদ্ভট বিদেশ ভ্রমণের প্রস্তাব আর সেটা বাস্তবায়ন।

 করোনার সময়ে সরকার চেয়েছিল আর্থিক সংকটে বিদেশ ভ্রমণে রাশ টানতে। কিন্তু সে সময়ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ দেশে যাওয়া বন্ধ ছিল, কিন্তু অন্যান্য দেশে আমলাদের প্রমোদ ভ্রমণ থেমে থাকেনি।  এবার যখন দেশে ডলারের রিজার্ভ খুব দ্রুত কমতে শুরু করলো, ডলারের বিপরীতে টাকা তার মূল্য দ্রুত হারাতে থাকলো, প্রবাসী কর্মীদের রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেল, তখন সরকার বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। যার মধ্যে মে মাসেই পরিপত্র জারি করে সরকার অতি জরুরি কিছু প্রয়োজন ছাড়া আমলাদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বাতিল করতে বলে। কিন্তু তারপরও থামেনি আমলাদের বিদেশ যাওয়া।  কতো অদ্ভুত যুক্তিতে বিদেশ ভ্রমণ হতে পারে তার কিছু উদাহরণ হলো বাংলাদেশের চরের মানুষের উন্নয়ন কীভাবে করা যায় তা দেখতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২০ জন সরকারি কর্মকর্তা- নয়জন এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়া ঘুরে এসেছেন। বাকিরা যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাদের বিদেশ ভ্রমণের সরকারি আদেশ জারি হয়েছে। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের ১৮ জন কর্মকর্তা মসলার চাষ শিখতে বিদেশে যাচ্ছেন। তারা ভারত, শ্রীলঙ্কা অথবা থাইল্যান্ডে যাবেন। 

সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করতে প্রশিক্ষণ নিতে ৪২ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে।  মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১২ কর্মকর্তা এক্সপোজার ট্যুরে বিদেশে গেছেন। একইভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি (এনএপিডি) ২২ জনের একটি দল বিদেশে গেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশের ৪৩ জন প্রতিনিধির একটি বহর ১৬ দিনের সফরে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি দল এলইডি বাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শিখতে নেদারল্যান্ডস গেছে।  কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রায় ১০০ কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ‘ফ্লোরিডা এক্সপো ২০২২’ পরিদর্শন করেছেন। হাইকোর্টে দায়ের করা একটি রিটের সূত্রে আমরা জানতে পারি অবিশ্বাস্যভাবে সেখানে কিছু লোককে নেয়া হয়েছে গাছে পানি দেয়ার জন্য। সরকারি অর্থের কী অবিশ্বাস্য ব্যবহার, যেকোনো ভাবে আমলাদের খুশি রাখার কি প্রাণান্ত প্রচেষ্টা।  যেহেতু সরকার কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বিদেশ সফরকে নিষিদ্ধ করেছে, তাই সব বিদেশ সফরকে এখন বিদেশ সফরের জন্য অনুমোদিত ধরনে শ্রেণিবদ্ধ করা হচ্ছে। যেমন সমপ্রতি ২৫ জন কর্মকর্তাকে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার অনুমতি দিতে ভ্রমণের ধরন পরিবর্তন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 যেহেতু এক্সপোজার ভিজিট হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেহেতু বিধিনিষেধের আওতায় তাদের পক্ষে এই সফরে যাওয়া সম্ভব হতো না। তাই মন্ত্রণালয় সমপ্রতি এই সফরের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে ‘বিদেশে প্রশিক্ষণ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।  উপরে আমলাদের আইনি, বেআইনি, নৈতিক, অনৈতিক সব রকম সুযোগ-সুবিধার ফিরিস্তি দিলাম একারণে যে, জনগণের করের টাকায় তারা এত সুযোগ-সুবিধা পান অত্যন্ত নিম্নমানের সেবা দেয়া সত্ত্বেও। একটা গরিব দেশের মানুষের করের টাকায় রাজার হালে জীবনযাপন করা মানুষগুলো দেশের একটা চরম অর্থনৈতিক সংকটেও কিছু দিনের জন্য নানা ফন্দিফিকির করে বিদেশে যাবার চর্চা বাদ দিতে পারেন না। এই যে বর্তমানে আমলাদের বিদেশ ভ্রমণে লাগাম পরানোর চেষ্টা করছে সরকার, সেটা একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মতো বিশেষ সময় না এলে নানা ধরনের উদ্ভট কারণ দেখিয়ে যেভাবে ভ্রমণ চলছিল তা নিয়ে সরকারের তেমন কোনো মাথাব্যথা ছিল না কিংবা সরকার তা বন্ধ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি। আমাদের মতো কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের দেশে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য বছরে কমপক্ষে ২০০০ কোটি টাকা আমলাদের দেয়াই প্রমাণ করে তাদের তোষণে কতোটা মরিয়া সরকার। 

আসলে ২০১৪ সালের পর থেকে অনেকটাই জবাবদিহিতাহীন সরকার তাদের মাত্রাতিরিক্ত আমলা নির্ভরতার ফলে বহু ক্ষেত্রেই আমলাদের নানান অন্যায্য আবদার মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে- যার একটা হলো বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে তাদের প্রমোদ ভ্রমণের ‘আবদার’। আমরা স্মরণ করবো, রাতারাতি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ করে দেয়া হয়েছিল ২০১৪ সালে বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন নির্বাচনটির মাস চারেক পর। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্রমাগত গৌণ হতে হতে একেবারে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া জনগণের জায়গায় নানান প্রকারে সরকারকে টিকিয়ে রাখা আমলারাই যে প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য সকল ক্ষেত্রেই মুখ্য হয়ে উঠবে এবং তাদের নানান আবদার সরকার মেটাতে বাধ্য থাকবে সেটা গত কয়েক বছরে একেবারেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। কলামের শুরুতে জনাব হেলালুদ্দীনের চাকরি জীবনের সর্বশেষ প্রমোদ ভ্রমণের যে শিক্ষার কথা বলেছিলাম, সেটা আসলে এটাই।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status