খেলা
শ্রীলঙ্কার ইতিহাস বাংলাদেশের ‘অভিজ্ঞতা’
সামন হোসেন, বার্মিংহাম (যুক্তরাজ্য) থেকে
৫ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার
সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাংলাদেশের ইমরানুর রহমানের বড় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার স্প্রিন্টার আবেকুন উপুন ও পাকিস্তাানের শাজার আব্বাস। বার্মিংহামে কমনওয়লথ গেমসে ইমরানের সঙ্গে ট্রাকে ছিলেন এই দুই স্প্রিন্টারও। ইমরান হিটে বাদ পরলেও পাকিস্তান ও লঙ্কান দুই স্প্রিন্টার জায়গা করে নিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। আব্বাসের দৌড় সেমিফাইনালে থামলেও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম স্প্রিন্টার হিসেবে কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতে ইতিহাস গড়েছেন শ্রীলঙ্কান গতিমানব আবেকুন উপুন প্রিয়দর্শনা। বুধবার রাতে বার্মিংহামের আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে ১০.১৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জেতেন এই লঙ্কান স্প্রিন্টার। এই ইভেন্টে ১০.০২ সেকেন্ডে কেনিয়ার ফার্ন্দিনাদ ওমানাল স্বর্ণ এবং ১০.১৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার আকানি সিম্বাইন রৌপ্য জেতেন।
একজন দক্ষিণ এশিয়ানকে নিয়ে যখন হইচই পড়ে গেছে বার্মিংহামের আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামে, তখন একই অঞ্চলের অন্যরা সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইমরানুর রহমান নিজের সেরাটা দিতে পারেননি। সাত নম্বর হিটে দৌড় শেষ করেন ১০.৪৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে অনুশীলনে ১০.২৭ সেকেন্ডে দৌড়েছিলেন ইমরানুর। তবে তার জাতীয় রেকর্ড ছিল ১০.৪৭ সেকেন্ড। এবারের কমনওয়েলথ গেমসেও নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়লেও আশাহত করেছেন বিলেত প্রবাসী এই স্প্রিন্টার। তার চেয়ে টাইমিংয়ে এগিয়ে ছিলেন পাকিস্তানের শাজার আব্বাস। ১০.৩৮ সেকেন্ডে ফিনিশলাইন ছুঁয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল থেকে মালদ্বীপের হাসান সাইদের তুলনায় কেবল ইমরানুরের টাইমিং ভালো ছিল। সাইদ ১০.৭৫ সেকেন্ডে দৌড়ে হন ৪৯তম। এই তুলনাটা কেবল এসএ গেমসে চোখ রেখে। ইমরানদের অভিজ্ঞতা অর্জনের আসরে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন উপুন।
গত জুলাইয়ে সুইজারল্যান্ডে ৯.৯৬ সেকেন্ডে দৌড়ে চমকে দেন সবাইকে উপুন। ২০১৯ এসএ গেমসের দ্রুততম মানব ফের চমক দেখালেন বার্মিংহামে। এবার অবশ্য দশের নিচে দৌড়াতে পারেননি। তবে ১০.১৪ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে নানা সংকটে থাকা নিজের দেশকে বিশেষ উপহার দিলেন তিনি। ২০১৫ সাল থেকে ইতালিতে ট্রেনিংয়ে থাকা ২৭ বছর বয়সী লঙ্কান অ্যাথলেট এ বছর আছেন ফর্মের তুঙ্গে। প্রতিবারই হচ্ছে টাইমিংয়ের উন্নতি। এসএ গেমসের গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি দেখতে শুরু করেন আরও বড় আসরে সাফল্যের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বুধবার ধরা দেয় তার হাতে। ৪৫ বছর পর লঙ্কান কোনো অ্যাথলেট কমনওয়লথ গেমসের অ্যাথলেটিক্সে পদক জিতলো। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম স্প্রিন্টার হিসেবে উপুন পদক জিতলেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে। মর্যাদার এই বৈশ্বিক আসরে পদক জিতে আবেকুন উপুন বলেন, ‘সত্যি আমার স্বপ্ন ছিল কমনওয়লথ গেমসের ফাইনালে দৌড়ানোর। যে লক্ষ্যে হিট ও সেমিফাইনালে বেশ সর্তক থেকেছি। ফাইনালের দৌড়টা আমার কাছে একেবারে নতুন মনে হয়েছে। আমি কোনো প্রকার প্রেসার না দিয়ে দৌড় শুরু করি। ফাইনালি আমি ব্রোঞ্জ জিতেছি। এটা আমার কাছে খুবই মূল্যবান।’
অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে থাকা শ্রীলঙ্কার এবারের কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেয়াই অনিশ্চিত ছিল। শেষ পর্যন্ত লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সহায়তায় বার্মিংহাম আসেন লঙ্কান অ্যাথলেটরা। আর শ্রীলঙ্কা এরইমধ্যে তিনটি পদক জিতেছে। বার্মিংহামে শ্রীলঙ্কা প্রথম পদক পায় ভারোত্তোলনে। দিলানকা আসুকা কুমারা ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণিতে ব্রোঞ্জ জেতেন। ছেলেদের ডিসকাস থ্রোতে রৌপ্য জেতেন পালিথা বান্দারা। দেশের এই খারাপ সময়ে দেশকে আরো সুন্দর একটি আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিয়ে আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামের মিক্সড জোনে উপুন বলেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। এটা আমার তরফ থেকে দেশকে ছোট্ট একটি উপহার।’
ভারোত্তোলনের ১০৯ কেজি ওজন শ্রেণিতে পদক জিতে চমক দেখিয়েছে পাকিস্তানও। কিন্তু খালি হাতেই দেশে ফিরছে সব ইভেন্টে ব্যর্থ বাংলাদেশ দল।