ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের প্রধান আনোয়ার গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবারmzamin

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আলোচিত ‘কব্জি কাটা’ গ্রুপের প্রধান মো. আনোয়ার ওরফে শুটার আনোয়ার ওরফে কব্জি কাটা আনোয়ার (৩৬)কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মোহাম্মদপুর, আদাবর ও রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির রাজত্ব গড়ে তোলে গ্রুপের সদস্যরা। এই রাজত্ব কায়েম করতে গিয়ে আনোয়ার বিভিন্ন সময়ে ৭ জনের হাতের কব্জি কাটাসহ বহু মানুষকে কুপিয়ে আহত ও পঙ্গু করেছে। শুধু কব্জি কেটেই ক্ষান্ত হয়নি আনোয়ার গ্রুপ; কব্জি কেটে টিকটকে ভিডিও করে উল্লাস করতো আনোয়ার ও তার গ্রুপের সদস্যরা। গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খালিদুল হক হাওলাদার।

তিনি আরও বলেন, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর আনোয়ার স্বীকার করেছে সে তিনজনের কব্জি কেটেছে। কিন্তু র‌্যাবের তদন্তে আনোয়ার সাত জনের কব্জি কেটেছে বলে তথ্য মিলেছে। হামলা ও ছিনতাইয়ের সময়ে আনোয়ার যে ব্যক্তির ওপর হামলা করবে তার আশপাশের রাস্তায় কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে। এরপর তারা যানজট কমাতে সহযোগিতা করার নামে কৃত্রিম ব্লক সৃষ্টি করে। এরপর আনোয়ার এসে টার্গেট ব্যক্তির ওপর হামলা করে। পাশাপাশি সে আসার আগে তার সামনে ও পেছনে একাধিক টিম থাকে। সিসি ক্যামেরা থাকলে সেগুলো ভাঙচুর ও নজর রাখে। রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের আদলে যানজট নিয়ন্ত্রণের নাটক সাজিয়ে রাস্তা ব্লক করে। এরপর তারা ফিল্মি স্টাইলে ভুক্তভোগীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাতের কব্জি কেটে সবার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে যায়।

খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, কব্জি কাটা আনোয়ার ছাড়াও এদিন তার দুই সহযোগী মো. ইমন (২০) এবং ফরিদ (২৭)কে আদাবর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র সামুরাই একটি, ছুরি, গাঁজা ৮ কেজি, একটি প্রাইভেটকার ও একটি হাত ঘড়ি উদ্ধার করা হয়। 

আনোয়ার ২০০৫ সালে জীবিকার সন্ধানে বাগেরহাট জেলা থেকে ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে আসে। ঢাকায় এসে বিশুদ্ধ খাবার পানি পরিবহন করতো। প্রথম পর্যায়ে আনোয়ার অপরাধ জগতে ছিনতাই ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি শুরু করলেও ২০২৪ সালে মানুষের কব্জি কেটে ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। সেই থেকে নিজেকে কব্জি কাটা গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং কব্জি কাটা ভিডিওটি টিকটক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে এলে ধারাবাহিক অভিযানের মুখে বাহিনীর অন্যতম সদস্য ভাগ্নে বিল্লালসহ আরও অনেকে গ্রেপ্তার হয়। এ অবস্থায় আনোয়ার আত্মগোপনে থেকে দুর্ধর্ষ এক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। 

র‌্যাব জানায়, কব্জি কাটা আনোয়ার গ্রুপ নিজের শক্তি বৃদ্ধি এবং আধিপত্য বজায় রাখার জন্য এলাকার কিশোরদের মাদক, অস্ত্র ও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নিজস্ব দলের ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে তাদের ব্যবহার করে অপরাধ জগৎ থেকে উপার্জিত টাকার মাধ্যমে সে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়। অত্যন্ত কৌশলে বার বার সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়িয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। এলাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। কব্জি কাটা আনোয়ার বাহিনী প্রথমে যাকে টার্গেট করে তাকে যেকোনোভাবে হামলা করে। গত কয়েক মাসে আনোয়ারের হাতেই ৭ থেকে ৮ জন হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ হারিয়েছেন পা, কেউ হাত, আবার কেউ পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তার হামলার শিকার ব্যক্তিদের বেশির ভাগই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তার ভয়ে কেউ মামলা করেন না। মামলা করলে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায় আনোয়ারের গ্রুপের সদস্যরা।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ই আগস্টের পর যৌথ বাহিনীর অভিযানে পাঁচ শতাধিক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মোহাম্মদপুরে অপরাধের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫ই আগস্টের পর দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এই পরিবর্তনের জের ধরে সন্ত্রাসীরা তৎপর হয়ে ওঠে। ৫ই আগস্টের পর মোহাম্মদপুরে যে পরিমাণ অপরাধ বেড়েছিল, যৌথভাবে অভিযান করে জেনেভা ক্যাম্পসহ মোহাম্মদপুরের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। মোহাম্মদপুর ও আদাবরকেন্দ্রিক কোনো সন্ত্রাসী ও গডফাদারের স্থান হবে না। আনোয়ারের পেছনে দীর্ঘদিন লেগেছিলাম। আমাদের কাছে তথ্য আসে মোহাম্মদপুরের এক্সেল বাবু নামে এক ব্যক্তি তাকে মদত দিচ্ছে। সে আড়ালে থেকে আনোয়ারকে ছত্রছায়া দেয়।

পাঠকের মতামত

আগে কব্জি কাটা হোক এই জানোয়ারের তারপর বিচার।

Hori
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২:৪৩ পূর্বাহ্ন

এর আবার কিসের বিচার, কব্জি দুইটা কেটে রাস্তায় নামিয়ে দিন l সবাই তার পরিণতি দেখুক, বাকি জীবন মানুষের করুনা ভিক্ষা করে বেঁচে থাকুক l প্রশান্ত

Rahat
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

ওকে জেলে রেখে জাতীয় সম্পত্তি থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভরপোষন, জাতীয় সম্পদ অপচয়। তার চেয়ে ওর চারটি কব্জি কেটে ওর আহার রুঝি ওর উপরই ছেড়ে দেওয়া হোক।

Khokon
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ২:২৮ অপরাহ্ন

He shouldn’t be bail from the court. No lawyer shouldn’t be work for him.

Alam
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১২:০১ অপরাহ্ন

প্রশান্তদার সাথে সহমত পোষণ করছি।

কামরুল হাসান
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

ওকে এমন ভাবে পিটাতে হবে শেষ জিবনে ভিক্ষা করে খেতে পারে।

Rubayet
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৫:১৫ পূর্বাহ্ন

এর আবার কিসের বিচার, কব্জি দুইটা কেটে রাস্তায় নামিয়ে দিন l সবাই তার পরিণতি দেখুক, বাকি জীবন মানুষের করুনা ভিক্ষা করে বেঁচে থাকুক l

প্রশান্ত
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status