ঢাকা, ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

দ্য হিন্দুকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে হতে হবে

মানবজমিন ডেস্ক

(১ মাস আগে) ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১:৩১ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে হতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন তিনি। এছাড়া ভারতে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতেও ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে সোমবার। এতে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষ করে ভারতে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে যে বিষয়গুলো অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেগুলোর ওপর জোর দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
ওমানের রাজধানী মাসকাটে ৮ম ভারত সমহাসগরীয় সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনার পর দ্য হিন্দুকে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ‘ক্ষমতাকেন্দ্রিক’ হওয়া উচিত নয়। আসন্ন এপ্রিলে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।  

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব (২০০৬-২০০৯) দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পরীক্ষা করে এমন বেশ কয়েকটি কণ্টকাকীর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, যার মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, ভারতে থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদান, সীমান্ত হত্যা এবং জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বিষয়গুলি। দ্য হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের উদ্দেশে নিচে তুলে ধরা হলো: 

প্রশ্ন: সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে আপনার সাক্ষাতের কথা বলুন।
উত্তর: সত্যি বলতে, (যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে) সম্পর্কগুলো খুব উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। আমি যেমনটি দেখছি, এটা খুব উত্তেজনার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল, কেননা ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরণে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই খুব দ্রুত তা ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, ফলত সম্পর্কের ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব এবং অস্বস্তি ছিল। তবে আমার মনে হয় ছয় মাস পর এটি শেষ হওয়া উচিত। এছাড়া আমাদের এমন একটি পরিবেশ প্রয়োজন যেখানে আমরা একে অপরের সঙ্গে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। ছয় মাস আগের তুলনায় যেন আমরা একে অপরের সঙ্গে মজবুত যোগাযোগ করতে পারি।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ নিয়ে ওয়াশিংটনে আলোচনা করেছেন মোদি। আপনি কি জয়শঙ্করকে এই উদ্বেগগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন?
উত্তর: সত্যি বলতে জিজ্ঞাস করা হয়নি। জিজ্ঞাস করা হয়নি, কারণ এটা ভারতের বিষয় (তারা অন্য দেশের সঙ্গে কী আলোচনা করছে)।
আমি মনে করি না যে, খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা উচিত, যা ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হয়েছে। যেমন, বাণিজ্য। এই খাতে অল্প সময়ের জন্য কিছুটা বাধা ছিল, কিন্তু এখন দুই দেশের বাণিজ্য আবার বাড়ছে। সুতরাং এগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, উভয় দেশের মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়। এতে বুঝা যায় এতে আমাদের উভয়ের স্বার্থ রয়েছে। দুই দেশের একে অপরের প্রতি আগ্রহ রয়েছে, এ বিষয়গুলোর ওপর আমাদের যত্ন নেয়া উচিত। 
প্রশ্ন: ভারত বারবার যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে- বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। আপনি কি মনে করেন, আপনার সরকার এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে? এবং ভারত কি একমত? কারণ এ বিষয়টি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উত্তর: আচ্ছা, বিষয়টি আমাকে স্পষ্ট করতে দিন। বাংলাদেশে যেসকল হিন্দু বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রয়েছে তারা অন্যান্য সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায়ের মতোই সমান। নাগরিক হিসেবে তাদের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার সমান। কেননা বাংলাদেশ সরকারের কাজ হচ্ছে তাদের (সংখ্যালঘুদের) নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। যেমনটি অন্যরাও পেয়ে থাকেন। 
দুর্ভাগ্যবশত, ৫ই আগস্টের পর (২০২৪ সালে, যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন) ভারতীয় মিডিয়াতে এ বিষয়টি নিয়ে সত্যিকার অর্থে- প্রায় ব্যাখ্যাতীত উন্মাদনা প্রদর্শন করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগ খবর মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে প্রচার করা হয়েছে। আমি আপনাকে জাতিসংঘের অনুসন্ধান প্রতিবেদনগুলো পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যা দুই দিন আগে প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহিংসতায় জড়িত ছিল না)। জাতিসংঘ আমাদের অনুরোধে এসেছিল কারণ আমরা পরিস্থিতির সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ একটি প্রতিবেদন চেয়েছি। 
প্রশ্ন: আমি জাতিসংঘের রিপোর্ট পড়েছি, সেখানে হাসিনা সরকারের কিছু বাড়াবাড়ির কথা বলা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর প্রভাব সম্পর্কেও বলা হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে আপনার সরকার কি কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেবে?
উত্তর: অবশ্যই, জাতিসংঘের রিপোর্টের আগেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব এবং তারা এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমি মনে করি না যে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবে। এটি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়, এবং বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে কমপক্ষে চারজন সদস্য আছেন যারা মানবাধিকার কর্মী, যারা বহু বছর ধরে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে আসছেন। তারা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। 
প্রশ্ন: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারত ঠিক কী করবে বলে আপনি আশা করেন?
উত্তর: হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা ভারতকে হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আমাদের কাছে ফেরত দিতে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার তা না করছে, আমরা আশা করব তারা অন্তত হাসিনার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে যাতে তিনি উস্কানিমূলক এবং মিথ্যা বক্তব্য না দেন। কেননা তার বক্তব্য জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কেননা তিনি যা করেছেন তা এখনও তরতাজা। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন তিনি এবং মানুষ তার কর্মকাণ্ডে তীব্রভাবে ক্ষুব্ধ। তাই তারা দেখতে চায় যে, তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন। 
প্রশ্ন: যত যাই হোক, শেখ হাসিনার বক্তৃতার কারণে বিশৃঙ্খল জনতা (মব) শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুরের অনুমতি দেয়ায় আপনি কীভাবে যুক্তি দেখাবেন?
উত্তর: এক দল বিশৃঙ্খল জনতা কিছু করতে পারে, তবে তাতে সরকারের কোনো সমর্থন নেই। 
প্রশ্ন: আপনার সরকার এখন পর্যন্ত কেবল মৌখিক নোট পাঠিয়েছে। একটি কূটনৈতিক নোট যাতে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের অনুরোধ করা হয়েছে। আপনারা কি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করবেন?
উত্তর: আমাদের (বাংলাদেশ-ভারত) একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা অনেক অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমি মনে করি, ভারত তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফিরিয়ে দিতে পারে। 
প্রশ্ন: কিন্তু সেই প্রত্যর্পণ চুক্তির জন্য, আপনাকে বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আপনার কাছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের-এমএলএটি (পারস্পরিক আইনি সহায়তা) এর জন্য পর্যাপ্ত ওয়ারেন্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কখন এই প্রক্রিয়া শুরু করার আশা করছে?
উত্তর: আচ্ছা, প্রক্রিয়াটি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। কারণ, মামলাগুলো এখন আদালতে। আমরা তাদের (তাড়াহুড়ো করে) এটি করতে বাধ্য করতে পারি না। আমরা এটাও জানি যে, তিনি (হাসিনা) ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারেন। এতে সময় লাগতে পারে, কিন্তু আমরা যা চাই তা হচ্ছে- তিনি ভারতে থাকাকালীন উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেক। 
প্রশ্ন: সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়ে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। জেলেদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া কিছু জেলের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাদের মারধর করা হয়েছে এবং তারা গুরুতর আহত হয়েছেন। আপনি কি মনে করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে?
উত্তর: আমি তেমনটি মনে করি না। প্রথম বিষয়টি হচ্ছে সীমান্ত। ২০২৪ সালে সীমান্তে ২৪ জনকে গুলি করা হয়েছে, যার অর্ধেক বিগত সরকারের আমলে। বিশ্বের আর কোথাও এটা হয়নি। আমি মনে করি, আপনি আমার সঙ্গে এই বিষয়ে একমত হবেন। কারণ, ভারতীয় পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়, যেহেতু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, সে কারণে এটা ঘটছে। বিশ্বের প্রতিটি সীমান্তেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হয়, কিন্তু কোথাও মানুষকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় না। যদি অপরাধ ঘটে, আপনি তাদেরকে গ্রেপ্তার করুন এবং আদালতে নিয়ে যান। কারাদণ্ড হোক বা আদালত যেকোনো রায় দিতে পারেন। কিন্তু আপনি তাকে হত্যা করতে পারেন না। সেখানে সীমান্তে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সরকারের সময়ে কী ঘটছে। এটা এখনো বন্ধ হয়নি। এটা এমন একটি বিষয়, আমি মনে করি, ভারত যদি চায় থামাতে পারে এবং এটা বন্ধ করা উচিত। অন্য বিষয়গুলো সমুদ্রসীমাসংক্রান্ত। 
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ও ভারত বহু বছর আগে একটি সমুদ্র চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ধারণা করা হচ্ছে এখনও একে অন্য দেশের জেলেদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
উত্তর: আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না, কিন্তু বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। আপনি জানেন যে, জেলেরা মাছ অনুসরণ করে। স্থলভাগে, আপনার একটি নির্দিষ্ট সীমানা থাকে, আপনার জানা থাকে এটিই আপনার সীমানা। কিন্তু সমুদ্রের বিষয়টি এত সহজ নয়। প্রায়শই উভয় উভয় দেশের জেলেরা অন্য দেশের সমুদ্র অঞ্চলে প্রবেশ করে।  এক্ষেত্রে আপনারা কাউকে হেফাজতে নেন। আবার আমরাও নেই। তকে আমরা উভয়েই পর্যায়ক্রমে তাদের ছেড়ে দিই। দুর্ব্যবহারের বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যেই একটি তদন্তের অনুরোধ করেছি, এবং যদি আমরা দেখতে পাই আমাদের নিরাপত্তা কর্মী সত্যি সত্যিই জড়িত ছিল, অথবা যদি তারা আইন ভঙ্গ করে, অবশ্যই আমরা এটি বিবেচনা করব। তবে সাধারণত এমন হয় না। আমি চার বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতায় একজন কূটনীতিক ছিলাম। জেলে বিনিময় নিয়ে কাজ করেছি। তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় না। যদি কোনো ব্যতিক্রম থাকে, তবে আমরা অবশ্যই এটি খতিয়ে দেখব। 
প্রশ্ন: আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি নিয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশ সরকার আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ পেতে আলোচনা করছে। আপনি কি নিশ্চিত করতে পারবেন যে, বাংলাদেশ সরকার আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহের চুক্তিটি অব্যাহত রাখতে চায়?

উত্তর : আমি মনে করি যে, আমরা দুটি পর্যায়ে আলোচনা করি, একটি চুক্তি স্বাক্ষরের আগে, অন্যটি চুক্তি স্বাক্ষরের পরে আমরা আলোচনা করি। আমাদের চুক্তি অনুসারে এগোতে হবে। কিন্তু যদি আমরা মনে করি, এটা সঠিকভাবে করা হয়নি তাহলে আমরা সর্বদা পারস্পরিকভাবে এটা আবার খতিয়ে দেখার জন্য সম্মত হতে পারি। আমার মতে, আমরা আদানি গ্রুপের সঙ্গে এটা দেখব এবং এটাকে আরও যৌক্তিক করার চেষ্টা করব। আমি কোনো টেকনিশিয়ান, টেকনিক্যাল ব্যক্তি নই। তাই আমি সঠিকভাবে বিশদ বলতে পারছি না। তবে অন্যান্য চুক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, বিদ্যুতের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, এটি নিয়ে আবারও সমঝোতা আলোচনা করা উচিত, বিশেষ করে কয়লা কেনার প্রশ্নে। যেকোনো যৌক্তিক ব্যক্তিই বলবেন যে, বিশ্ববাজারে সম্ভাব্য সর্বোত্তম দামে এই প্রকল্পের জন্য কয়লা কেনা উচিত। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তাই এই জায়গাগুলোতে আমরা সম্ভবত ভালো মন নিয়ে আদানির সঙ্গে আলোচনা করতে পারি এবং আমরা তা করতে চাই। আপাতত আমরা বিদ্যুৎ দিতে অনুরোধ করেছি, কারণ আমাদের বিদ্যুৎ প্রয়োজন এবং তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ভিত্তিতে আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাই আমরা চাই, তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ করুক এবং তারপর আমরা এর জন্য অর্থ প্রদান করব। 
প্রশ্ন: আপনি আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে দুবার দেখা করেছেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের এখনও সাক্ষাৎ হয়নি। আপনি কি এপ্রিলে থাইল্যান্ডে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে তাদের মধ্যে বৈঠকের আশা করেন?
উত্তর: এখন পর্যন্ত, দুই নেতা একই দিনে কোনো স্থানে যাননি, তাই তাদের দেখা করার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, উভয় পক্ষই অবাধে এবং খোলামেলাভাবে দেখা করতে এবং বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী। এই অঞ্চলে আমাদের সংস্কৃতিতে, যখন 'শীর্ষ কর্তারা' একসাথে বসেন, তখন তারা বছরের পর বছর ধরে আমাদের মতো লোকদের ওপর আলোচনার জন্য ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে, কেবল এক কথায় সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আমি মনে করি, এই অর্থে দুজনের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়া ভালোই হবে। এই সরকারের শুরুতে তারা একবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। বিমসটেকে তারা একই অনুষ্ঠানস্থলে থাকবেন। আমার জানা মতে, অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানরাও থাকবেন। যদি তারা সেখানে থাকেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পরস্পরের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ এটা একটি ছোট গ্রুপ। উদাহরণস্বরূপ, সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) শীর্ষ সম্মেলনে, সাত দেশের প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেন। তাই আমার মনে হয়, এরকম কিছু ঘটতে পারে। 
প্রশ্ন: আপনি কি জয়শঙ্করের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন?
উত্তর: আমি এইমাত্র এটি উল্লেখ করেছি। বৈঠকের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। প্রোগ্রামটি চূড়ান্ত হলে এবং সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, আমরা কয়েক দিন আগে এ বিষয়টি ঠিক করব। দেখা যাক কী হয়। 
প্রশ্ন: পররাষ্ট্রনীতি এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে, বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায়, আপনার কি মনে হয় ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্কের সেই অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে?
উত্তর: কেনইবা শুধু গত ১৫ বছর দেখব? এমনকি বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) আমলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্কটি ক্ষমতাকেন্দ্রিক হওয়া উচিত। ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি আমাদের দুই দেশের রাজধানীতে যেই সরকারই আসুক অথবা যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমাদের সম্পর্ককে তার প্রভাব ফেলা উচিত নয়, কারণ নির্বাচন পারস্পরিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে হয়। আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের উভয় পক্ষই বুঝতে পারে, উভয়ের স্বার্থ কী, এবং আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ধরে রাখতে পারি।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status