বাংলারজমিন
লক্ষ্মীপুর জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবদুর রসিদের রাজত্ব
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার
লক্ষ্মীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকৌশলীর স্টনোগ্রাফার ও ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রসিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার কেরোয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রসিদ। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি কর্মরত রয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের ম্যানেজ করে অধিদপ্তরে দুর্নীতির আখড়া গড়ে তুলেছেন। তিনি কাজ করেন স্টনোগ্রাফার হিসেবে। তিনি সিন্ডিকেট তৈরি করে গোপন টেন্ডারের মাধ্যমে কয়েকজন ঠিকাদারকে ম্যানেজ করে মোটা অঙ্কের কমিশন আদায় করে কাজ ভাগ-বাটোয়ারা করে দেন। যখন যে রাজনৈতিক দলের প্রভাব বেশি রসিদ তখন তার দলীয় কর্মী পরিচয়ে কাজ করেন। সকল কাজেই ঠিকাদারের সঙ্গে মিলে ভাগ-বাটোয়ারা করেন সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিনসহ সকলে। গত ১৭ বছর ধরে ওই দপ্তরে নিয়মিত চলছে লুটপাটের রাজত্ব। তবে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলে খোলস পাল্টাতে শুরু করেন নির্বাহী বিলকিস, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও আবদুর রসিদ।
ঠিকাদাররা বলছেন, দলীয় পরিচয় থাকলেও কমিশন ছাড়া কেউ কাজ পাননি। কাজ পেতে প্রধান নির্বাহী বিলকিস আকতার ও আবদুর রসিদ গংদেরকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আগেই দিতে হয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিলকিস।
প্রকৌশলী বিলকিস আকতার লক্ষ্মীপুরে যোগদান করেছেন ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। যোগদানের পর থেকেই কমিশন বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে পড়েন তিনি। গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। ১৫ সদস্যের ওয়াটসান কমিটির মাধ্যমে শুধুমাত্র সহায়ক চাঁদা ৭ হাজার টাকা নেয়ার বিধান। আর পথচারীদের সুবিধার্থে খোলা জায়গায় বসবে এই নলকূপ। কিন্তু ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে নিম্নমানের রিং স্লাব বিতরণ। যেনতেনভাবে ওয়াশ রুম তৈরি। নলকূপের নিচের পাটাতনের কাজ ঠিকাদারের কাছ থেকে বাগিয়ে নেন প্রধান প্রকৌশলী বিলকিস আকতার ও সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন। পরে নিজের লভ্যাংশ রেখে কাজ বিক্রি করে দেন তিনি।
জানা গেছে, দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সারা দেশে গভীর নলকূপ স্থাপন করে থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন করে সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা। তবে কে প্রান্তিক আর কে অসচ্ছল তা যাচাই না করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী নলকূপ বিতরণ করা হয়। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং এমপিদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী এসব নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। প্রান্তিক অনেক এলাকায় এখনো নিরাপদ পানি প্রকল্পের সুফল পাচ্ছেন না নাগরিকরা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা হচ্ছেন- ভূঁইয়া বিল্ডার্সের মালিক যুবলীগের নেতা তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া তাজু, আহাদ ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের পিএস পরিচয় দেয়া শিপন, আওয়ামী লীগ নেতা মজু মিয়া, আমজাদ হোসেন, মো. সেলিমসহ আওয়ামী লীগের আরও অনেক নেতা। তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতা দেখিয়ে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার ভাগ-বাটোয়ারা করে কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সময়ও আওয়ামী লীগকে অর্থ জোগান দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এসব ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানেও ১৫ বছর একটি অফিস আদেশের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে প্রতিবারই গুটি কয়েক ব্যক্তি টেন্ডারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার দরপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে নাসির ও প্রধান প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত সহকারী রসিদ। তবে নাসির বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদের লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এই সুবাদে দুর্নীতিই নিয়মে পরিণত করেন তিনি।
এ বিষয়ে রসিদ বলেন, কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত নই। বা টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করা আমার কাজ নয়। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। অপরদিকে, নির্বাহী প্রকৌশলী বিলকিস আকতারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।