মত-মতান্তর
মেপলের দেশে চির নিদ্রায় কর্ণেল ওয়ালিউল্লাহ
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ বায়েজিদ সরোয়ার, এনডিসি (অবসরপ্রাপ্ত)
(২ সপ্তাহ আগে) ৪ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৫:২০ অপরাহ্ন

কর্ণেল ওয়ালিউল্লাহ
সাবেক সেনাকর্মকর্তা, পাবনা ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও লেখক লেঃ কর্ণেল ওয়ালিউল্লাহ গত ২৬ জুলাই ২০২২, কানাডার সেন্ট জোনস শহরে মৃত্যুবরন (৬৯) করেন। বিএসএস- ১৮৮১ লেঃ কর্ণেল ওয়ালিউল্লাহ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সেনা শিক্ষা কোরে কমিশন লাভ করেছিলেন। তাঁর কর্মময় জীবনে তিনি বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমির প্রশিক্ষক, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা পরিদপ্তর, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর, সেনা সদরের স্টাফ অফিসার সিয়েরালিওনে শান্তিরক্ষী ও পাবনা ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।কর্ণেল ওয়ালি ১৯৫৪ সালের ১ জানুয়ারী ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে মাধ্যমিক, নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ ইংরেজী সাহিত্যের মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্ণেল ওয়ালি ১৯৭৭ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে (এমসিসি) ইংরেজীর প্রভাবক হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। অল্প সময়েই এই তরুন সুদর্শন, স্মার্ট শিক্ষক তার ব্যক্তিত্ব, বাচনভঙ্গি, বন্ধুত্বপূর্ন আচরণ ও বিষয় জ্ঞান দিয়ে “মেধাকুঞ্জের” কিশোর-তরুন ক্যাডেটদের মুগ্ধ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রিয় “শশিকাপুর স্যারের” বিষয়ে পুরনো ছাত্রদের সেই মুগ্ধতার পরশ তাদের ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমসিসির প্রাক্তন ক্যাডেটদের অনেকের এখনো মনে পড়ে প্রিয় ওয়ালি স্যারের পড়ানোউইলিয়াম সেক্সপিয়রের“টেমিং অব দা শ্রু” বা উইলিয়াম কুপারের“দি সলিচিউড অব আলেকজান্ডার সেলক্লার্ক” এর কবিতার অনুপম উচ্চারণ। প্রভাষক ওয়ালি সেই শিক্ষকদের অন্যতম ছিলেন, যারা সেই সব কিশোরের জীবনকে রাঙ্গিয়ে তুলতে শিল্পীর মতো হাতে তুলি নিয়েছিলেন। এভাবেই শিক্ষক ওয়ালি ছাত্রদের স্বপ্নগুলোকে প্রানিত করেছিলেন। ২০২১ সালের একদিনে,প্রযুক্তির কল্যানে চার মহাদেশ ও ৪৪বছরের দুরত্বকে অতিক্রম করে এমসিসির কয়েকজন প্রাক্তন ক্যাডেট কর্ণেল ওয়ালিসহ কয়েকজন উজ্জ্বল ও আলোকিত শিক্ষকের সঙ্গে তুমুল অর্ন্তজালীয় আড্ডায় মেতেছিল।লেঃকর্নেল ওয়ালি পরবর্তিকালে পাবনা ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরেতিনি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সেনাসদরের গোয়েন্দা পরিদপ্তরে (এমআই পরিদপ্তর) দায়িত্ব পালনকালে (১৯৮৮-১৯৯১) তৎকালীন মেজর ওয়ালি সেনাবাহিনীর প্রচার, প্রকাশনা ও মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ওউন্নয়নে অসাধারন ভূমিকা পালন করেছিলেন।বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সংবাদ, প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সেই সময় সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকান্ডের উপর বিটিভির ‘অনির্বান’ অনুষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। অনির্বান অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার কারণে তিনি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর প্রথম প্রামান্য চলচ্চিত্র, দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত বিভিন্ন সংবাদ ও প্রামান্য চিত্র নির্মানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। সেই সময় সেনা সদর থেকে প্রকাশিত নতুন প্রকাশনা ‘সেনাবার্তৃার’ প্রকাশনার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহনের (২০০৭) পর কর্ণেল ওয়ালি সংবাদপত্রে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। সাম্প্রতিক বিষয় সমূহ ছাড়াও সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষন শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম, আন্ত:বাহিনীর কার্যক্রমসহ গোয়েন্দা কার্যক্রমের মতো স্পর্শকাতর বিষয়সমূহ নিয়ে জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকায় তার লেখাপ্রকাশিত হতে থাকে। লিখার ক্ষেত্রে ইংরেজী ও বাংলা উভয় ভাষাতেই তিনি সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।
কর্ণেল ওয়ালি মোট ৯টি বই লিখেছেন। প্রথম বই ‘এ গাইড টু সিভিলিটি এন্ড ডিসেন্ট বিহেভিয়ার’। পরে বইটির বাংলা রূপান্তর হয়েছিল-“জীবনাচরনের মৌলিক নীতি”। ২০০৪ সালে সিয়েরালিওনের জাতিসংঘ মিশনের অভিজ্ঞতার উপর লিখেন ‘এ্যাজ আই সি সিয়েরালিওন’। বইটির ভূমিকায় অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ইংরেজীতে লিখেছিলেন ”অল্প কথায় এখানে অনেক কিছু বলা হয়েছে। এটি একটি বিরল গুন”। পরবর্তীতে তিনিসিয়েরালিওনের উপর আরো একটি বই লিখেন “সিয়েরালিওনঃ ল্যান্ড অব প্রমিজেস”। ২০০৭ সালে প্রকাশিত হয় ভ্রমনকাহিনী “আটলান্টিক পাড়ের দেশগুলো”। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয়- “আমার কথা লেখায়”। এটি মূলত পত্রিকায় প্রকাশিত কলাম/প্রবন্ধের সংকলন। এরপর প্রকাশিত হয় ইংরেজিতে লেখা বই ‘সিন আনসিন’। পরবর্তীতে এটি ‘দেখা-অদেখা’ নামে বাংলায়ও প্রকাশিত হয়েছে। কিছুটা আত্মজীবনীমূলকস্ট্যাইলে লেখা বইটিতে তার জীবনের ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা, বিশেষত সামরিক জীবনে দেখা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপর তিনিআলোক রশ্মি ফেলেছেন। তিনি এক সময় কানাডায় অভিবাসীহয়েছিলেন। কর্ণেল ওয়ালীর শেষ বই- ‘মাই স্টোরি’। প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে। এটি কানাডায় প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার উপর লেখা। বেশ প্রাঞ্জল ভাষায় লিখিত বইগুলো বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
১৯৮৩ সালে, বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমীতে (বিএমএ) ক্যাডেট হিসেবেআমার সামরিক প্রশিক্ষনের শুরুতেই তৎকালীন সপ্রতিভ ক্যাপটেন ওয়ালিকে প্রশিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলাম। তিনি ১২ লংকোর্সের আমাদের প্লাটুন- ১৮ এর একাডেমিক প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন। সেনা কর্মকর্তাদের কর্ম জীবনের জন্য ইংরেজীতে পারদর্শিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা জাতীয় ও আন্তজাতিক অঙ্গনে দায়িত্ব পালনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সৌভাগ্যবশত, বিএমএতে সেই সময় আমরা ইংরেজী বিভাগের এক ঝাঁক দক্ষ প্রশিক্ষক পেয়েছিলাম। তারা হলেন:মেজরমির্জাতোজাম্মেল বেগ (পরে ব্রিগেডিয়ার), মেজর এসএম আমান উল্লাহ (পরে লেঃ কর্ণেল), মেজর মোহাম্মদ বশীরউদ্দিন (পরেলেঃ কর্ণেল),ক্যাপটেন সৈয়দ আলী আহমদ (পরে লেঃ কর্ণেল) ও ক্যাপটেন ওয়ালিউল্লাহ(পরে লেঃ কর্ণেল) প্রমুখ। প্রশিক্ষণরত ক্যাডেটদের ইংরেজীতে শুদ্ধ উচ্চারনগত পারদর্শিতা অর্জনে ইংরেজীর প্রশিক্ষকগণ অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন । অনেক সেনা কর্মকর্তার কর্ম জীবনে এর প্রায় স্থায়ী প্রভাব থাকে।
উল্লেখ্য, কর্মদক্ষ সেনা অফিসার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিএমএ’তে ক্যাডেটদের একই সঙ্গে চারিত্রিক, সামরিক ও একাডেমিক এই ত্রিমুখী প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। সেনা শিক্ষা কোরের নিবেদিত প্রান প্রশিক্ষকগন একাডেমিক বিষয়ে ক্যাডেটদের আলোকিত করে থাকেন।বেশ কঠিন একটি পরিবেশে কর্ণেল ওয়ালির মতো অভিভাবক সুলভ ও পরিপক্ক প্রশিক্ষকগন আমাদের মননকে শানিত করেছেন। কঠোর সামরিক প্রশিক্ষনের সময়ে,- ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির পাঠগুলো জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের দিয়েছিল চমৎকার খোলা জানালা।
পরবর্তীকালে বিএমএ’তে আমার পোষ্টিং হলে ওয়ালি স্যারকে সহকর্মী হিসেবে পাই। আমার প্রতি তার স্নেহ ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরনে এক সময়ের শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের আড়ষ্ঠতা কেটে যায়। পড়ানো ছাড়াও বিএমএ’তে তাকে প্রকাশনা, লেখালেখি, প্রামান্য চিত্র তৈরি ও মিডিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে দেখেছি। কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা এক সঙ্গেও কাজ করেছি।
তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর (২০০৭) গ্রহনের অব্যাহত পরে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তিতে অবসর জীবন-যাপনের পাশাপাশি সংবাদ পত্রে লেখালেখি করতেন।
উদার মনের ও বন্ধু বৎসল কর্ণেল ওয়ালি লেখালেখি ও পড়াশোনার ব্যাপারে আমাকে অনেক উৎসাহ ও উপদেশ দিতেন। প্রতিরক্ষা, মিডিয়া, শিক্ষা ও সার্বিকভাবে বাংলাদেশ নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা আমাকে অনুপ্রানিত করতো। পরবর্তীতে কানাডা অভিবাসী হলেও প্রযুক্তির কল্যানে সেই দুরত্ব কমে আসে। প্রায়ই আমাদের কথা হতো মেসেনজারে। তবে মেসেনজারে তার শেষ কলটির উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। আই এম সো সরি,ওয়ালি স্যার। তিনি কানাডায় অভিবাসী হলেও তার মন পড়ে থাকতো প্রিয় বাংলাদেশে।
ব্যক্তি জীবনে কর্ণেল ওয়ালির রয়েছে স্ত্রী জেসমিন ওয়ালি, তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। জেসমিন ওয়ালি বাংলাদেশ টেলিভিশনের এক সময়ের সুপরিচিত উপস্থাপিকা ও সৌখিন স্কেচ- শিল্পী। তিনি ছিলেন সন্তান এবং পরিবার অন্তপ্রান একজন মানুষ।
গত এপ্রিলে,কানাডা যাওয়ার পূর্বে মিরপুর ডিওএইচএস এর “মেপল লিফ” নামে নতুন বিল্ডিং এর সামনে আমাদের দেখা। নামটা শুনে কানাডার এই জাতীয় প্রতীক নিয়ে অনেকক্ষন কথা বললেন। কানাডার জাতীয় প্রতীক মেপল লিফ বা মেপলের গাছের পাতা। তাই পর্যটন ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোন থেকে কানাডাকে ‘মেপলের দেশ’ বলা হয়। মেপল লিফের রঙ লাল।
পরিবার ও প্রিয়জনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে আমার অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় প্রশিক্ষক, ব্যক্তিত্ব কর্ণেল ওয়ালি মেপলের দেশ কানাডার এডমন্টনের এক কবরস্থানে ঘুমিয়ে আছেন। তবে হৃদয়ে তার রইলো যেন সবুজ বাংলাদেশ। সেই কবরের উপর প্রিয় মেপল গাছের লাল রঙের কয়েকটি পাতা এসে পড়েছে। ওপারে ভালো থাকুন, শান্তিতে থাকুন প্রিয় ওয়ালি স্যার।
লেখক: গবেষক।
[email protected]
পাঠকের মতামত
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাবেক সামরিক অফিসারগণ মন্তব্য করেছেন। 2007 সালে অবসর গ্রহণের পর যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলেন সেখানে দৃষ্টান্ত রেখে এসেছিলেন। এমনই এক প্রতিষ্ঠান তার অধীনে সহকর্মী ছিলাম। এমন অনন্য উচ্চতায় সে প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন কেউ তা উতরাতে পারবে না। আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি। ব্যক্তিভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ হতো প্রায়ই। এমনসব পরামর্শ দিতেন যা সত্যিই কাজে লাগত। তিনি প্রচন্ডভাবে জীবন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন,কিন্তু ভবিষ্যতবক্তা ছিলেন না। কিন্তু যা যা বলেছেন তা তাই ঘটত। আমার নিকট খুব অদ্ভুত লাগত!
ওপারে ভালো থাকুন, এই দোয়া কিরি।
উনি একজন প্রাণখোলা মানুষ ছিলেন। নানা বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
লেঃ কঃ ওয়ালী স্যারকে বিএম এ থেকেই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতাম। একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষ ছিলেন । আপনার লেখায় তার কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবন সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে । অনেক ধন্যবাদ স্যার।
May Allah bless him Jannatul Ferdous. He was one of the best person, I have ever seen.
Excellent write up dear Bayezid. Thank you very much for writing such a comprehensive, worth reading article on a very competent and smart officer who left us so early. He was like my elder brother and a caring senior in the Army Education Corps. An honest, lively, humerous and friendly companion. Can't ever forget him. May Almighty bless him with best of places in the afterworld.
Excellent write up which too me back to my old memories with Ltc Wali. A brilliant officer in Education Core. 2/3 days ago of his permanent departure from this earth we had long discussion. At one stage he told me to pray for him because his health condition was not good. His las message to me was, If I live in God’s earth…….. . Still I can’t believe that he is no more. May Allah grant him jannatul ferdous.