নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
রাতে কাজটা করা চুন্নু পদত্যাগ করবেন নাকি মেননের পথটা ধরবেন?
তারিক চয়ন
৪ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবার
জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অনেকেই মজা করে বলেন, এই দলের নেতারা সকালে এক কথা আর বিকালে অন্য কথা বলেন। বলাবাহুল্য, রাজনীতিতে অনেকেই সেটি করে থাকেন। এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে অনেকেই ‘ক্ষমতার রাজনীতি’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেন। কিন্তু, জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছরেরও কম সময় বাকি বিধায় মুজিবুল হক চুন্নু তথা জাতীয় পার্টির জন্য সেই ক্ষমতার রাজনীতিরও আর বেশি দিন বাকি নেই। এই সামান্য ক’দিনের ক্ষমতার রাজনীতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজ বক্তব্য অনুযায়ী ‘ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার সাহস একজন বিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে মুজিবুল হক চুন্নু রাখেন কিনা, সে প্রশ্ন নিশ্চয়ই করতে পারি। নাকি তিনি জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেননকেই অনুসরণ করবেন?
২০১৯ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকার চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করে দেয় র্যাব। অভিযোগ- ওইসব ক্যাসিনোতে অবৈধভাবে জুয়া খেলা হতো। সে সময় অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর যুবলীগের আরেক নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে সাতজন দেহরক্ষীসহ আটক করা হয়। ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, এফডিআর জব্দ করা হয়।
ক্যাসিনো কাণ্ডে যখন সারা দেশ উত্তাল তখন (১৯শে অক্টোবর) বরিশালে ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাশেদ খান মেনন ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত (একাদশ) জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে নিজেকে সাক্ষী রেখে বলেন, বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীসহ আমিও বিজয়ী হয়ে এমপি হয়েছি। এরপরও আমি সাক্ষী বিগত নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বিগত জাতীয়, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ। মেনন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, কেন দেশের মানুষ বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোট দিতে পারেনি? প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি-আমি মিলে যে ভোটের জন্য লড়াই করেছি, মনোনয়ন জমা দেয়ার পরও আজিজ কমিশনকে ঘেরাও করেছি, আমরা ১ কোটি ১০ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা ছিঁড়ে ফেলে নির্বাচন বর্জন করেছি- তা এ নির্বাচনের জন্য নয়। উন্নয়ন মানে গণতন্ত্র হরণ নয়, উন্নয়ন মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ নয়। আজ দেশের মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে সরকার। তাই মুখ খুলে কেউ স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারছে না। এ ছাড়াও, চলমান ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্যাসিনো মালিকদের ধরা হচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের ধরা হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতির আসল জায়গাগুলোতে হাত দেয়া হয়নি। তারা নির্বিঘ্নেই রয়েছে।
সেই দুর্নীতিবাজদের বিচার কবে হবে, তাদের সাজা কবে হবে, তাদের সম্পদ কবে বাজেয়াপ্ত হবে? ক্ষমতাসীন জোটের শীর্ষ নেতা এবং ওই জোটের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে একাধিকবার মন্ত্রী-এমপি হওয়া মেননের এমন বক্তব্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাস্তবিক বোমা ফাটে। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বিধ্বংসী অস্ত্র খুঁজে পান। তখন তারা সবাই একসুরে বলতে শুরু করেন, ‘আমাদের কথাই সত্য প্রমাণিত হলো। ২০১৮ সালে নিশিরাতে নির্বাচন হয়েছে। মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। সুতরাং, এ সংসদ অবৈধ।’ মুখে অবৈধ বললেও ওই ‘অবৈধ সংসদে’ বিএনপি’র ছয়জন সদস্য সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে নিজেরাই নিজেদের অবৈধ প্রমাণ করেছেন কিনা এ নিয়ে জনমনে খুব স্বাভাবিকভাবেই এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। যাই হোক, রাশেদ খান মেনন জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বক্তব্য দেয়ার ঠিক পরের দিনই বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হয় যে, ক্যাসিনো কাণ্ডে এবার তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। ওইদিন কয়েকটি পত্রিকার এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম ছিল- ক্যাসিনো থেকে মাসে ১০ লাখ টাকা নিতেন মেনন (যুগান্তর), জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে মেননকেও/রিমান্ডে নাম বলেছেন সম্রাট ও খালেদ (সমকাল), রাশেদ খান মেনন পেতেন ক্যাসিনোর টাকা! (বিবার্তা)। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯শে অক্টোবর (যেদিন মেনন নির্বাচনে কারচুপির কথা বলেন) রাতে র্যাব থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ এ তথ্য জানিয়েছেন যে, তার কাছ থেকে প্রতি মাসে ক্যাসিনোর টাকা চাঁদা নিতেন মেনন।
এরপর সরকারবিরোধী পক্ষ দাবি করতে থাকে রাশেদ খান মেনন মুখ ফস্কে অথবা বিবেকের তাড়নায়-যে কারণেই হোক নির্বাচনে কারচুপির সত্য প্রকাশ করে দিয়েছেন, সরকার এখন তাকে শাস্তি দিতে বা তার মুখ বন্ধ করতে ক্যাসিনো কাণ্ডে তার নাম জড়িয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, ক্যাসিনো কারবারের নিজের সংশ্লিষ্টতা ফাঁস হয়ে যাওয়াতেই রাশেদ খান মেনন চটে গিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে এমন কথা বলেছেন বলে দাবি করা শুরু করেন সরকার সমর্থকরা। এমন বক্তব্যের দায়ে তার পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন দলটির অনেক নেতাকর্মী। ওই সময় একটি পত্রিকাকে দেয়া তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেছিলেন, ‘রাশেদ খান মেনন অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। আর এমন বক্তব্যের দায়ে তার পদত্যাগ করা উচিত। একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে তার এমন বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। তিনি মন্ত্রী ছিলেন। সংসদ সদস্য হিসেবেও সুবিধা নিচ্ছেন। কিন্তু মন্ত্রী না করায় তার মাথা ঠিক নেই।’ এতকিছুর পরও মেনন কিন্তু সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন নি! সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় রাশেদ খান মেননের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণার দাবি করেন এক আইনজীবী। রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ জানিয়েছিলেন, ‘মেনন নিজেই বরিশালের এক সভায় ঘোষণা দিয়েছেন ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি।
যা তিনি নিজেই বিশ্বাস করেন। এই অবস্থায় তিনি পদত্যাগ না করায় রিট করা হয়েছে। মেননের বক্তব্য অনুযায়ী তার আসন ঢাকা-৮ এর ভোটে দুর্নীতি হয়েছে কিনা- তাও তদন্ত করতে হবে।’ কিন্তু, রাশেদ খান মেনন বহাল তবিয়তেই রয়ে যান। এমন বক্তব্য দেয়ার প্রায় তিন বছর হতে চললেও তিনি এখনো সংসদ সদস্য পদে রয়ে গেছেন। শুধু তিনিই নন, বারবার নির্বাচনকে ভুয়া এবং সংসদকে অবৈধ বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলা বিএনপি’র সংসদ সদস্যরাও একই পদে রয়ে গেছেন। এভাবে, সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু, বিপত্তি বাধে সংসদের প্রধান বিরোধী দলের কার্যত দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তির সামপ্রতিক এক বক্তব্যে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের শেষদিনে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল ৩১শে জুলাই সেখানে গিয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভরার বহু পুরনো অভিযোগের বিষয়টি প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘রাতে কিন্তু কাজটা (ভোট দেয়া) হয়। হয় মানে কী, আমরাই করাইছি। কী বলবো, এটা হয়। এটা হয় না, ঠিক না।’ জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়, এটি সত্য। জাতীয় পার্টিও এটি করেছে। তাই ক্ষমতাসীন সরকার সহযোগিতা না করলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’
মুজিবুল হক চুন্নুর এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কিন্তু, একটু পেছনের দিকে তাকালেও দেখা যাবে খোদ সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি অনেক অপ্রিয় সত্য এবং সাহসী বক্তব্য রেখেছেন। দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের পাশাপাশি নিজ দলের নেতাদের পাশে বসেও তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। গত ৩রা এপ্রিল অধিবেশনের অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে উদ্দেশ্য করে রাজধানী ঢাকায় ঘন ঘন সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার পাশে বসে আছেন বাংলাদেশ বাস ওনার্স সমিতির সভাপতি। ওনাদের বলবো, আপনারা মানুষের প্রতি দরদী হন। যে সমস্ত গাড়ির ব্রেক নেই, পুরনো ইঞ্জিন, রঙ নেই, সেগুলো সড়কে চলছে। এগুলো সরকারের কেউ দেখে না। আপনারা সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছেন।’ শুধু তাই নয়, ‘পদ্মা ব্রিজ করলেও সড়ক পরিবহনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পুরোপুরি ব্যর্থ মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি পদ্মা ব্রিজসহ অনেক উন্নয়ন করেন। কিন্তু আপনি টোটালি ফেইল ট্রান্সপোর্টেশনের বিষয়ে। ২৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আজ আটকা, ঢাকা শহরে আজ গাড়ি চলে না।
ভালো বাস নেই।’ গত জুন মাসে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে চুন্নু বলেন, ‘যার জন্য করি চুরি সেই যদি বলে চোর।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমরা কোথায় যাবো, কী করবো।’ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অনেকেই মজা করে বলেন, এই দলের নেতারা সকালে এক কথা আর বিকালে অন্য কথা বলেন। বলাবাহুল্য, রাজনীতিতে অনেকেই সেটি করে থাকেন। এর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে অনেকেই ‘ক্ষমতার রাজনীতি’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেন। কিন্তু, জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছরেরও কম সময় বাকি বিধায় মুজিবুল হক চুন্নু তথা জাতীয় পার্টির জন্য সেই ক্ষমতার রাজনীতিরও আর বেশি দিন বাকি নেই। এই সামান্য ক’দিনের ক্ষমতার রাজনীতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজ বক্তব্য অনুযায়ী ‘ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার সাহস একজন বিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হিসেবে মুজিবুল হক চুন্নু রাখেন কিনা, সে প্রশ্ন নিশ্চয়ই করতে পারি। নাকি তিনি জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেননকেই অনুসরণ করবেন?
পাঠকের মতামত
রাতে কাজটা হইছে এটা শুধু চুন্নু সাহেব নন, দেশের সবাই আর বিদেশের অন্তত ৫০ কোটি লোক জানে। এখন চুন্নু সাহেব স্বীকার করে কি অপ্রাধ করে ফেললেন না-কি, যে তাকে পদত্যাগ করতে হবে? স্বীকার করলে পদত্যাগ করতে হপে আর স্বীকার না করলে পদে থাকা যাবে- এটা কি আমাদের মানুষিকতা হয়ে যাচ্ছে না-কি? কেঊ স্বীকার করলেই তার উপর যদি আপনারা হুমরি খেয়ে পড়েন, তাহলে তারা স্বীকার করবে কেন??
এমন একটা গোজামিলের নির্বাচনে তেনারা গৃহপালিত প্রধান বিরোধী দল। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা কোথায় নিয়ে ছেড়েছে !
গনতন্ত্রকে কিভাবে খাইয়া ফালাইছে এখন এদেশে রাজনীতি করতে পুলিশের অনুমতি লাগে! এধরণের অনুমতি পাকিস্তান পীরিয়ডে এমনকি বৃটিশ পীরিয়ডেও নিতে হয়নি। মরহুম এরশাদকে স্বৈরাচার বলেন কোন মুখে? এরশাদের সময়ে রাজনীতি করতে কি অনুমতি লেগেছে? আইয়ুব, ইয়াহিয়া ও এরশাদকে স্বৈরাচার এবং হিটলার ও মুসোলীনিকে ফ্যাসিস্ট বললে এখনকার শাসকদের কি বলবেন? গত তের বছরে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয়েছে। আইয়ুব, ইয়াহিয়া ও এরশাদ কি এতো মায়ের বুক খালি করেছেন? এখন সহজভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে সবকিছু জায়েজ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এতো বিভৎস কেনো? যখন মুক্তিযুদ্ধ করেছি তখন তো এমনটা দেখিনি। এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যাকিছু করা হচ্ছে, ওসব মুক্তিযুদ্ধের অপমান! এখন চলছে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ করা। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন যখন বলেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি আর জাতীয় পার্টির মহাসচিব যখন বলেন রাতের অন্ধকারে ভোটের কাজ তাঁরা করেছেন তখন বুঝতে আর বাকি থাকেনা মানুষের ভোটের অধিকার কিভাবে খাইয়া ফালাইছে। পুলিশ প্রশাসন দিয়ে আন্দোলন দমন-পীড়ন করে মানুষের মুখ বন্ধ করে ক্ষমতায় কতোকাল থাকা যায় সময়ের বিবর্তনে সেটা দেখা যাবে। তবে আগামী নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে সহজে রাস্তা দখলে নিতে দেওয়া হবেনা তার বার্তা ভোলা থেকে জানান দেওয়া হয়েছে। শান্ত রাজনীতির মাঠে হঠাৎ এতো গুলি, টিয়ার সেল বিভৎস ভাবে ফ্যাসিস্ট কায়দায় আন্দোলন দমন করার ঈঙ্গিত। দেশীয় এবং বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো- যাঁরা সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায় তাঁদের কি এখন বুঝে আসছে কিনা এ সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অসম্ভব।
ভাষ্যকার কেবল পুরানো সংবাদটি নূতন রসযোগে তুলনাপূর্বক সংসদের বিরোধী দলের মাননীয় সদস্যের বিগত নির্বাচন নিয়ে তাঁর উক্তির জন্য ইতিবাচক মূল্যায়ন না করে তাঁর পদত্যাগের নসীহত পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকলেন। দোষ স্বীকার করার ওদার্য মহৎ হতে সাহার্য্য করে। আত্মসমালোচনা হলে একই ভুলের পূর্নরাবৃত্তি রোধের শক্তি যোগায়। দীর্ঘ একযুগ ধরে সংসদের বিরোধীদল বলে খ্যাত মাননীয়দের অন্তত একজন বেলচাকে বেলচা বলে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছেন। সে তুলনা কথিত ক্যাসিনের উপকারভোগির সাথে মানানসই না।
''নাকি তিনি জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেননকেই অনুসরণ করবেন?'' হ্যা, জ্যেষ্ঠ ইয়েই বটে!!!
জনাব রাশেদ খান মেনন, জনাব মোঃ মজিবুল হক চুন্নু বা জনাব গোলাম কাদের। এঁদের বক্তব্য এত গুরুত্বপূর্ণ নয়, দরকষাকষির বিষয় মাত্র। ভাগে কম পড়লে রা.... করে, ভাগ ঠিকমত হলেই চুপসে যায়।