ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

বাংলাদেশের ওপর ভারতের আঞ্চলিক দাপট কি চীনের সঙ্গে নৈকট্য বাড়ার কারণ

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ সপ্তাহ আগে) ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১:৩১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

mzamin

চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। তাই ঢাকা এবং বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ভারতের প্রভাব বিস্তার করার পরিকল্পনা ধাক্কা খেতে পারে। গত বছর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি আলোচনা চালিয়েছে চীন। এদিকে হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ-ভারত ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব উপভোগ করে আসলেও বর্তমানে  এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় আগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। দিল্লিতে হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া, ঢাকার কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হস্তান্তর না করা এবং ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধির একের পর এক প্রতিবেদন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও খারাপ দিকে নিয়ে গেছে।

লন্ডন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের একজন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো চিতিগজ বাজপেয়ী বলেছেন, যেসব দেশের সাথে ভারতের ঐতিহাসিকভাবে বৈরি সম্পর্ক রয়েছে- শুধুমাত্র চীন নয়, এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গেও, তাদের প্রতি বাংলাদেশের   অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সহানুভূতিশীল। 

গত মাসে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বেইজিংয়ে তার চীনা সমকক্ষ ওয়াং ইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। ডেকান হেরাল্ডের একটি প্রতিবেদন অনুসারে ওয়াং তৌহিদ হোসেনকে বলেছেন- চীন তার সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় মর্যাদা রক্ষায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে। দেশের অবস্থার সঙ্গে মানানসই একটি উন্নয়ন পথ অন্বেষণ করে। চীন বাংলাদেশি জনগণের পছন্দকে সম্মান করে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে ইচ্ছুক। 

থিঙ্ক ট্যাঙ্ক তক্ষশীলা ইনস্টিটিউশনের চীন বিষয়ক বিশ্লেষক রক্ষিত শেঠি বলেছেন- ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বেইজিংয়ের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে সবুজ রপ্তানি বাড়াতে চীনের সোলার প্যানেল কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব করেছে বেইজিং। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ফেলো জোশুয়া কুরলান্টজিক বলেছেন, ইউনূস ঢাকার জন্য আরও সাহায্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে শিগগিরই বেইজিং সফর করবেন। কুরলান্টজিক বলেন, ইউনূস নতুন চীনা  বিনিয়োগ আনতে  আগ্রহী। তিনি চীনের কাছ থেকে ঋণ মাফ এবং বাংলাদেশে নতুন চীনা প্রকল্পে সুদের হার কমানোরও চেষ্টা করছেন। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে কয়েকশ চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সেতু  প্রকল্পে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

চীনের উন্নয়ন মডেল এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে ঢাকার ক্রমবর্ধমান সারিবদ্ধতা দিল্লির দর কষাকষির ক্ষমতাকে আরও দুর্বল করতে পারে বলে মনে করেন রক্ষিত শেঠি। চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৩ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মোট ১৬৮.৪ বিলিয়ন ইউয়ান (২৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ) ছিল, যার বেশিরভাগই বাংলাদেশে চীনা রপ্তানি ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষা ফ্রন্টেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়েছে। পাকিস্তানের পর বাংলাদেশ চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র ক্রেতা এবং চীনা J-10C ফাইটার জেট অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ তার বিমান বাহিনীকে উন্নত করতে চাইছে বলে জানা গেছে। শেঠি মনে করেন , চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তা কৌশলকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে , বিশেষ করে তার পূর্ব সীমান্তে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার চিহ্ন হিসেবে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)  চুক্তি লঙ্ঘনের উল্লেখ করে তার বাংলাদেশী প্রতিপক্ষদের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। ইউনূসের প্রশাসনের দ্বারা জেলে বন্দী ‘ইসলামপন্থীদের’ সাম্প্রতিক মুক্তি ভারতে নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে, ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ব্যস্ততাও দিল্লিতে শঙ্কা জাগিয়েছে। গত মাসে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একজন সিনিয়র অফিসার এস এম কামরুল হাসান পাকিস্তানে গিয়ে  দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব মোহাম্মদ আলী এবং শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেন। একই মাসে পাকিস্তানের একটি সামরিক প্রতিনিধি দল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সংবেদনশীল এলাকাও পরিদর্শন করেছে বলে জানা গেছে ।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সৈন্যদের সমর্থনে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। বাজপেয়ী বলেন, হাসিনার পতনের পর দিল্লির তোয়াক্কা না করেই ইসলামাবাদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে ঢাকা দ্বিধাবোধ করেনি। তিনি আরও বলেন, ঢাকার সাম্প্রতিক পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসার নিয়ম শিথিল করা এবং নভেম্বরে বাংলাদেশের বন্দরে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের ডকিং এর প্রমাণ। 
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব হ্রাস দক্ষিণ এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভূ-রাজনৈতিক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কুরলান্টজিক  বলছেন , কর্তৃত্ববাদী  হাসিনা সরকার হোক বা ইউনূসের সরকার- উভয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেই  চীন বাস্তবতা  দেখিয়েছে।  অন্যদিকে, ভারত এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তারা এতদিন  হাসিনা এবং তার দলকে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে। বাজপেয়ী মনে করেন , পাকিস্তানের পাশাপাশি, নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে সম্পর্কের  টানাপোড়েনের মাঝে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নৈকট্য ভারতের পূর্বমুখী সম্পর্ককে জটিল করে তুলবে। কারণ নয়াদিল্লির ‘অ্যাক্ট ইস্ট’নীতিতে বাংলাদেশ একটি মূল ফ্যাক্টর ।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
 

পাঠকের মতামত

চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। চোরকে তোয়াক্কা করার প্রশ্নই উঠে না।

মূসা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৭:৩১ অপরাহ্ন

আঞ্চলিক নয় - অন্যায় দাপট এর কারণ

জনতার আদালত
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৩:৪৯ অপরাহ্ন

Arrogant and disrespectful language of Indians- southeast Asian mobster.

Robert
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ২:৫১ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

ফারুক খানের ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস/ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আর চাই না

ছাত্রদের নতুন দল / সদস্য সচিব পদ নিয়ে টানাপোড়েন

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status