খেলা
যেভাবে ক্রিকেট ধ্বংসের ফাঁদ পাতছে আইপিএল
স্পোর্টস ডেস্ক
৩ আগস্ট ২০২২, বুধবার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও বিশ্বের অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগকে পথে বসাতে যাচ্ছে আইপিএল। তাদের পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে শুধু আইপিএলেরই দাপট থাকবে। বিপিএল, বিগব্যাশ, পিএসএল’র মতো অন্য লীগগুলো জমবে না। ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। কমে যাবে টেস্টের পরিসরও। দক্ষিণ আফ্রিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন টি-টোয়েন্টি লীগ। সেখানে দলগুলোর মালিকানা আইপিএলেরই। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (সিপিএল) তো আগে থেকেই সম্পৃক্ত তারা। সিপিএলে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা, রাজস্থান, পাঞ্জাবের দল রয়েছে। এক দশকের চেষ্টার পর আইপিএল ঢুকেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তাদের প্রচেষ্টায় ২০২৩ সাল থেকে সেখানে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি লীগ। আইপিএল কর্তৃপক্ষ চাইছে খেলোয়াড়দের সঙ্গে স্থায়ী চুক্তি করতে। যাতে বছরব্যাপী এসব ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে ক্রিকেটার পেতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়। করোনা হানা দেয়ার আগে ২০১৯ সালে আইপিএলের রেভেনিউ ছিল ৫৫ হাজার ৩৮৪ কোটি ৭১ লক্ষ্য ৪১ হাজার টাকা। করোনা কেটে যাওয়ায় আয়ের অঙ্কটা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে শুধু নিজেদের লীগ নিয়ে পড়ে থাকছে না আইপিএল কর্তৃপক্ষ। তাদের চিন্তা-ভাবনা সুদূরপ্রসারী। এ কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে দল কেনায় ব্যস্ত তারা। টাকার লোভ দেখিয়ে এসব লীগের জন্য ক্রিকেটাদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, বাংলাদেশের বিপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ এবং পাকিস্তানের পিএসএলের মতো লীগগুলোও পাবে না মানসম্পন্ন ক্রিকেটার। অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এরইমধ্যে নিজ দেশের বিগ ব্যাশ ছেড়ে বেছে নিয়েছেন আইপিএলকে। আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী ভেঙ্কি মাইসোর সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে জানান, স্থায়ী চুক্তিতে ক্রিকেটার নেয়ার বিষয়টি অবশ্যই কার্যকর হবে। মাইসোর বলেন, ‘আদর্শ বাক্যে বলতে গেলে- অবশ্যই। কারণ, এটা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেবে। যদি আমরা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রিকেটার নিতে পারি তাহলে ওদের অন্যান্য লীগেও ব্যবহার করতে পারবো। আশা করি, একদিন এমনটা ঘটবেই। এটা হলে আমি অবাকও হবো না।’ ভারতীয় ক্রিকেট বিশ্লেষক হর্শ ভোগলে মনে করেন, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ, যাদের ইনকাম ভারতের ওপর নির্ভরশীল, তারা আইপিএলের সিদ্ধান্তের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হবে। কুপ্রভাব ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল তাদের ঘরোয়া লীগের জন্য সরে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তিনটি ওয়ানডে খেলার কথা ছিল প্রোটিয়াদের। ওয়ানডে সুপার লীগের অংশ হওয়ায় সিরিজটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অজিদের কাছে মূল্যবান ৩০ পয়েন্ট ছেড়ে দিতেও দ্বিধা করেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল আথারটন দ্য টাইমসে লিখা নিজের এক কলামে বলেন, যেভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দাপট শুরু হচ্ছে তাতে সামনের দিনগুলোতে খুব বেশি দ্বিপক্ষীয় আন্তর্জাতিক সিরিজ ও টেস্ট থাকবে না। আথারটন বলেন, ‘ভালো খবর হলো ক্রিকেটারদের ব্যাংক-ব্যালেন্স মোটাতাজা হবে। কিন্তু তারা বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যাবেন যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনবে।’ ইংল্যান্ডের আরেক সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভনের ধারণা, অধিক আয়ের লোভে আগামীতে বছরে দুইবার টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারে আইপিএল। সাবেক অজি ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন কেন ওয়ার্নার টাকার পথ বেছে নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটিকে ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে দেখছেন গিলক্রিস্ট।