বাংলারজমিন
একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ হাসপাতাল
রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা থেকে
২১ জানুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার
প্রসূতি সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত পাবনা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র (হাসপাতাল) একজন অস্থায়ী চিকিৎসক ও কিছু অস্থায়ী জনবল দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রসূতি মা ও শিশুরা। পাবনা শহরের গোবিন্দা এলাকায় দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে বৃটিশ আমলে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের অধীনে আসে হাসপাতালটি। ১০ বেড নিয়ে শুরু হওয়া হাসপাতাল পরে ৩০ বেডে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দু’ একবার অবকাঠামোগত সংস্কার হলেও নতুন বরাদ্দে কোনো সমপ্রসারণ হয়নি। বর্তমানে মাসে ৫০-৬০টি নরমাল ও ২-৩টি সিজারিয়ান ডেলিভারি হচ্ছে।
হাসপাতালটির একটি সূত্র জানায়, এখানে অনুমোদিত স্থায়ী পদের সংখ্যা ৭টি। এর মধ্যে প্রহরী, পরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তাকর্মীর পদ ৩টি। বাকি ৪টি পদের মধ্যে একজন করে মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক), ফিমেল মেডিকেল অ্যাটেনডেন্ট, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও সহকারী নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট পদ রয়েছে। তবে এসব পদের একটিতেও স্থায়ী লোকবল নেই। মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) পদে একজন চিকিৎসক অতিরিক্ত দায়িত্বে চিকিৎসা দিচ্ছেন এখানে। এছাড়া ব্যথামুক্ত ডেলিভারির জন্য স্থায়ীভাবে নেই অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসকের পদ। ৮-১০ ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও প্রসূতি সেবায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য মেশিন ও জনবল নেই। মাত্র একজন চিকিৎসকের পক্ষে মা’কে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলেও শিশুর চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ডেলিভারির পর শিশুদের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হয়।
গোবিন্দা এলাকার বাসিন্দা রাজ আলী জানান, প্রতি সপ্তাহে দু’দিন এখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। ডাক্তার কম থাকায় সঠিকভাবে রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। ওষুধ সরবরাহের পরিমাণও খুবই কম। অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকেই কিনতে হয়। তিনি বলেন, অন্যান্য ক্লিনিকে গেলে সিজারের প্রবণতা বেশি থাকলেও এখানে নরমাল ডেলিভারিকে গুরুত্ব দেয়া হয়। এজন্য প্রসূতি এখানে বেশি আসেন। চর সাধুপাড়া থেকে স্ত্রী ফেরদৌসী খাতুনের ডেলিভারি করাতে এসেছেন বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, এখানে মাত্র একজন ডাক্তার, আয়া দু’ একজন। নার্সও কম। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সমস্যা আছে। রোগীরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন কোনোমতে। ডাক্তারসহ দরকারি আয়া নার্স থাকলে এ সেবা আরও ভালো হতো।
গোবিন্দার স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ন কবির বলেন, আমি এই হাসপাতালে জন্ম নিয়েছি। আমার জন্মের পর হাসপাতালটির যে অবস্থা ছিল এখনো ঠিক সেই অবস্থাই আছে। একজন মাত্র ডাক্তার। তিনিও কখনো কখনো থাকেন না। তখন রোগীরা অন্য ক্লিনিকে যায়। ফলে অযথা সিজারের শিকার হয়, রোগীদের ব্যয় বাড়ে। কর্তৃপক্ষের উচিত হাসপাতালটির দিকে নজর দেয়া। হাসপাতালে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ঊর্মি সাহা জানান, নার্স, আয়া ও চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবখানেই আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের মাধ্যমে রোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা দেয়া সম্ভব। এরমধ্যেই আমরা প্রসূতি ও শিশুর সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। এখানে মা ও শিশুদের সেবা দেয়ার কথা। কিন্তু মায়ের পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে পারলেও শিশুর তেমন সেবা আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব হয় না। কারণ এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাচ্চার কোনো সমস্যা হলে বাইরে পাঠাতে হয়। এছাড়া আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট ও জনবল বরাদ্দসহ হাসপাতাল সমপ্রসারণ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।