খেলা
চাকচিক্যের বিপিএলের ভেতরটাই তো ফাঁকা!
দুর্বার রাজশাহীর পারিশ্রমিক নিয়ে নাটকীয়তা
সৌরভ কুমার দাস, চট্টগ্রাম থেকে
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার
‘মালিকরা (পারিশ্রমিক) না দিয়ে তো যাবে না’- ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না পাওয়ার প্রশ্নে প্রথম ম্যাচ শেষে এমন কথা বলেছিলেন দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়। এরপর রাজশাহী খেলেছে আরও ৫ ম্যাচ, কিন্তু মেলেনি পারিশ্রমিক। গতকাল অনুশীলন বয়কট করেন দুর্বার রাজশাহীর খেলোয়াড়রা, হুমকি দেন পরের ম্যাচ না খেলার। অবশ্য শুধু রাজশাহী নয়, পুরো বিপিএলের অবস্থাই এমন। অথচ বিসিবি শুরু থেকেই এবারের আসরকে বলে আসছে ‘নতুন বিপিএল।’ কিন্তু বাইরের চাকচিক্য বাদ দিলে এ পর্যন্ত বিপিএলের ভেতরটা ফাঁকা-ই। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, গতকাল সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার কথা ছিল রাজশাহী দলের। কিন্তু এর ১২মিনিট আগে তারা বিবৃতিতে জানায়, অনুশীলন বাতিল করা হয়েছে, খেলোয়াড়রা থাকছেন বিশ্রামে। আগামীকাল চট্টগ্রাম পর্বে রাজশাহীর প্রথম ম্যাচের প্রতিপক্ষ সিলেট স্ট্রাইকার্স। এমন সময়ে অনুশীল বাতিল করায় কৌতূহল জাগে বিশ্রামের সত্যতা নিয়ে!
খোঁজ নিতে গিয়ে কেচো খুড়তে যেন কেউটে বের হওয়ার মতো অবস্থা! খেলোয়াড়রা বিশ্রাম নয়, অনুশীলনই বয়কট করেছেন। কারণ পারিশ্রমিক পাননি তারা। এবারের বিপিএল শুরুর আগেই জানা গিয়েছিল নিয়ম অনুযায়ী ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পাননি ক্রিকেটাররা। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ক্রিকেটারদের দ্রুত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি সেটা পূরণ করেনি। তবে দুর্বার রাজশাহী আরেক ধাপ এগিয়ে! তারা ক্রিকেটারদের ২৫ শতাংশ অর্থের একটি চেক দিয়েছিল। কিন্তু সেই চেক বাউন্স হওয়াতেই মূলত ক্ষুব্ধ হন ক্রিকেটাররা। মালিক বিদেশে আছেন এমন গুঞ্জনও শোনা যায়। যদিও মালিক চট্টগ্রামের টিম হোটেলেই আছেন। দলীয় একটি সূত্র জানায়, সোমবার রাতে ক্রিকেটারদের চেক দেন তিনি। তবে গতকাল সকালে সেটা বাউন্স হয়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক ক্রিকেটার জানান, তারা নিজেদের প্রতারিত মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই তো সময় মতো টাকা দেয়নি আমাদের। বারবার তাগাদা দেওয়ার পর একটা চেক দিলো সেটাও বাউন্স হলো। এটা তো সরাসরি প্রতারণা। টাকা দিতে না পারলে দল কেন নেয় এটাই বুঝি না।’ এমনকি রাজশাহীর ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন না দৈনিক ভাতাও। বেশিরভাগ ক্রিকেটারের বাকি শেষ ১০ দিনের ভাতা। কয়েকজনের ৬-৭ দিনের। আরেকটি সূত্র জানায়, দলের অল্প কয়েকজন ক্রিকেটার তাদের পারিশ্রমিকের অংশ পেয়েছেন। এ নিয়ে বাকিদের মধ্যে রয়েছে চরম অসন্তোষ। এক ক্রিকেটার তো বলেই বসেন, ‘তাহলে ওই ভিআইপি ক্রিকেটারদের নিয়েই খেলুক রাজশাহী, আমরা খেলবো না।’ মূলত দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার এ বিষয়ে একাট্টা। দলের স্থানীয় এক অলরাউন্ডার বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট কথা টাকা না পেলে আর কোনো ম্যাচই খেলবো না। বিদেশি ক্রিকেটারদের সামনে এ নিয়ে আলোচনা করলেও ইজ্জত থাকে না। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই।’ রাজশাহীর অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় এ কারণে চট্টগ্রামেও আসেননি দলের সঙ্গে। সিলেট থেকে তিনি যান ঢাকায়। গতকাল তিনি মিরপুরের ইনডোরে অনুশীলন করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।
রাজশাহীর ভিতরের এই অবস্থা গত ৮ই জানুয়ারী থেকেই জানতো বিপিএল গর্ভনিং কাউন্সিল। দলটির পাকিস্তানি হেড কোচ ইজাজ আহমেদ এ নিয়ে বিসিবিকে একটি চিঠিও দিয়েছেন। চিঠিতে জানানো হয়েছিল, পারিশ্রমিক না পেলে তারা সংবাদ সম্মেলন করবেন আর অনুশীলন বা ম্যাচ কিছুতেই অংশ নেবেন না! এরপর বিদেশি স্টাফদের পারিশ্রমিক ২৫ শতাংশ পরিশোধ করে।
তাহলে বাকি দলগুলোর কী অবস্থা? জানা যায়, সিলেট স্ট্রাইকার্সের সবাই এর মধ্যে ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পেয়েছেন। আসর শুরুর আগে ২৫, মাঝে ৫০ আর শেষে ক্রিকেটারদের ২৫ শতাংশ পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা। ফলে আসরের মাঝপথে সবমিলিয়ে ক্রিকেটারদের পাওয়ার কথা ৭৫ শতাংশ অর্থ। আবার চট্টগ্রাম কিংসে কয়েকজন সবমিলিয়ে পেয়েছেন ৫০ শতাংশ, আবার কয়েকজন ২৫ আবার অনেকে কিছুই পাননি। খুলনা ২৫ শতাংশ দিয়েছে, দলটির একটি সূত্র জানায়, বাকি ৫০ শতাংশ দ্রুত দিয়ে দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। ফরচুন বরিশালের ক্রিকেটাররা পেয়েছেন ৫০ শতাংশ। ঢাকা ক্যাপিটালস দিয়েছে ২৫ শতাংশ। রাহাত ফাতেহ আলী খানকে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিয়ে এনে মিরপুরে কনসার্ট, চট্টগ্রাম ও সিলেট দুই শহরেই কনসার্ট। বিপিএলকে চাকচিক্য দিতে কমতি ছিল না বিসিবি’র। কিন্ত যাদের ওপর বিপিএলের সফলতা নির্ভর করছে সেই ক্রিকেটাররাই পাচ্ছেন না পারিশ্রমিক। যদিও এটা নতুন কিছু নয়। গত মাসে গ্লোবাল সুপার লীগে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার ইমরান তাহির রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে পারিশ্রমিক না দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এর আগে বিসিবি কয়েক দফায় দায়িত্ব নিয়ে পারিশ্রমিক মিটিয়েছে। এবার অবশ্য ফারুক আহমেদ সভাপতি হয়ে দাবি করেছিলেন, ক্রিকেটাররা সময়মতো পারিশ্রমিক পাবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।