মত-মতান্তর
কবিতা উৎসব আর ওয়াজ মাহফিল-সত্য-মিথ্যার সেকাল, একাল!
যুক্তরাজ্য থেকে ডাঃ আলী জাহান
(২ সপ্তাহ আগে) ৫ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার, ৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:২০ অপরাহ্ন
১. ডিসেম্বর আসলেই প্রায় নিয়মিত একটি কবিতা উৎসব হতো। নাম না হয় নাই বললাম। কবিদের মেলা, কবিতার মেলা নিয়ে টিএসসি এবং শাহবাগের আশপাশে বড় বড় স্টেজ আর অসংখ্য মাইক লাগানো থাকলেও মঞ্চ এবং দর্শক সারিতে গিয়ে দেখতাম মূলত যারা দর্শক, তারাই কবি বা উঠতি কবি। কয়েক ডজন দর্শক সামনে বসে আছেন। কেউ বাদাম খাচ্ছেন, কেউ নিরেট আড্ডা দিচ্ছেন। মঞ্চে-মাইকে কবিতা আবৃত্তি চলছে। এ দৃশ্যগুলো আমার দেখা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পিজি হাসপাতালে যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। লোকজন হয়তো কবিতা কেমন বোঝে না। কবিতার কদর কম। সে কারণেই মঞ্চে এবং দর্শক সারিতে মুষ্টিমেয় কিছু লোক বসে থাকা দেখে আমি অবাক না হলেও অন্য কারণে অবাক হতাম।
২. নির্দিষ্ট কিছু পত্রিকা, যাদের ভেতর কেউ কেউ বাংলাদেশ কী পরিচয়ে পরিচিত হবে তা নিয়ে অহরহ জাতিকে সবক দিতো এবং এখনো দিচ্ছে, পরের দিন এমনভাবে পত্রিকার প্রথম পাতায় খবর প্রকাশ করতো যে বোঝার কোনো উপায় নেই সেই অনুষ্ঠানে আসলে কয়জন দর্শক ছিল। ছবিগুলো এমনভাবে তোলা হতো যে, দর্শক সারিতে কারা বা ক’জন বসে আছেন, তা জানার কোনো সুযোগ নেই।
৩. তাদেরকে আমার প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। থাকলে প্রশ্ন করতাম-এই ছোটখাটো ঘটনাগুলো, শাহবাগ আর প্রেস ক্লাবের সামনে ১৫-২০ জন লোকের সমাবেশ বা প্রতিবাদ মিছিলকে আপনারা এতো গুরুত্ব দিয়ে পত্রিকায় ছাপেন কীভাবে এবং কেন?
৪. ছোটখাটো সমাবেশ বা সম্মেলনকে ছোটখাটো সমাবেশ হিসেবেই পত্রিকায় ছাপেন, আপত্তি নেই। কিন্তু দেশে ঘটে যাওয়া অনেক বড় বড় সমাবেশ ও সম্মেলনের খবর কেন আপনারা প্রকাশ করেন না?
৫. বলা হতো ‘উপরের চাপ আছে তাই আমরা প্রকাশ করতে পারি না’! তাই বুঝি? সত্য বলছেন তো?
৬. জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর সেই উপরের চাপ চলে গেছে। সংবাদ প্রকাশে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে হয় না। থাকার কথাও নয়। তাহলে এখন কেন সত্য প্রকাশ করছেন না?
৭. বাংলাদেশ থেকে অন্ধকার দূরীভূত করার মহান মিশন নিয়ে যারা আমাদের প্রতিদিন ছবক দেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করি, আপনারা সত্য লুকাচ্ছেন কেন?
৮. গত কয়েক সপ্তাহের সংবাদ বিশ্লেষণ করলে হাতেগোনা কিছু পত্রিকা ছাড়া, বিশেষ করে সারা দেশে আলো ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত মিডিয়া গ্রুপ, ইচ্ছে করেই কিছু সংবাদ লুকিয়েছে।
৯. কয়েক হাজার ডাক্তারের উপস্থিতিতে পেশাজীবী সংগঠন এনডিএফ ঢাকায় কেন্দ্রীয় সম্মেলন করেছে ২৫ ডিসেম্বর ‘২৪। ওরা কোনো সংবাদ করেনি। অবশ্য মানবজমিন করেছে। ওরা কেন করেনি? উত্তর দিচ্ছি পরে।
১০. ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ইবনে আল হাইসাম সাইন্স ফেস্ট’ ২৯ ডিসেম্বর থেকে কয়েকদিন ধরে চলে। অভূতপূর্ব এ আয়োজন। সারা দেশ থেকে ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা এখানে যোগদান করে। কোনো ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে এধরনের আয়োজন সম্ভবত প্রথম। কিন্তু তারা এ খবরও প্রচার করেনি।
১১. একই সংগঠনের পক্ষ থেকে ৭ ডিসেম্বর থেকে কয়েকদিনব্যাপী বৈষম্য বিরোধী আলোকচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয় জাতীয় জাদুঘরে। অনেকেই সেখানে গিয়েছেন। আয়োজকদের ধন্যবাদ এবং সাহস দিয়েছেন। একটি বহুজাতিক কোম্পানির প্রোডাক্ট (তাও আবার ভেসেলিন) প্রমোশনে ব্যস্ত পত্রিকা এ খবর প্রকাশ করেনি।
১২. প্রায় সাড়ে সাত মিলিয়ন ফলোয়ারের প্রিয় ইসলামি স্কলার ডক্টর মিজানুর রহমান আজহারী মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে এ পর্যন্ত দুটো মাহফিল করেছেন। শুক্রবার ৩ জানুয়ারি যশোরে যে মাহফিল করেছেন সেখানে প্রায় ১২-১৫ লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়েছে। তারও কয়েকদিন আগে কক্সবাজারের পেকুয়াতে তিনি মাহফিল করেছেন এবং সেখানেও কয়েক লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিল। পেকুয়া অথবা যশোরের এ মাহফিলের কোনো খবর নির্দিষ্ট মিডিয়া গোষ্ঠী প্রকাশ করেনি।
১৩. কেন তারা এক খবরগুলো প্রকাশ করছে না? নিশ্চয়ই এর একটি ব্যাখ্যা আছে। আমরা আসল সত্য জানি না। তবে ধারণা করতে পারি যে তারা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন, সেখানে এসব ওয়াজ মাহফিল বা ধর্মীয় সম্মেলনের কোনো গুরুত্ব নেই।
১৪. কিন্তু সত্য প্রকাশ তো করতেই হবে। মানুষকে বেছে নেয়ার সুযোগ দিন। আপনার পছন্দ হোক অথবা অপছন্দ হোক। কবিতা উৎসবের খবর কায়দা করে পত্রিকার প্রথম পাতায় দিলেও, ইসলামী সম্মেলনের খবর আপনারা প্রচার করতে চান না। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। সময় বদলেছে। হাতে হাতে স্মার্টফোন। আপনারা প্রকাশ না করলেও, সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে লোকজন জেনে যাচ্ছে কোথায় কী হচ্ছে।
১৫. সাময়িক সময়ের জন্য সত্যকে লুকিয়ে রাখলেও একসময় তা প্রকাশ হবেই। আপনারা একটি টের পাচ্ছেন না যে আপনাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার মতো লোকজনের জন্ম হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারবেন তো? আপনাদের প্রিয় লোকগুলো কিন্তু এই চাপ সামলাতে পারেনি। আপনারাও হয়তো পারবেন না। মানুষকে সত্য জানতে দিন। যে যার পছন্দমতো সত্যকে গ্রহণ করার সুযোগ দিন।
ডাঃ আলী জাহান
কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট, যুক্তরাজ্য
সাবেক পুলিশ সার্জন, যুক্তরাজ্য পুলিশ
সাবেক সরকারি (বিসিএস) কর্মকর্তা, বাংলাদেশ
Nice writing.
সুন্দর আলোচনা করেছেন। আমি একমত।
লেখক একটি বিশেষ দল কে প্রমোট করার জন্য আকারে ইঙ্গিতে মিডিয়া কে দোষারোপ করেছেন। শীত কালে প্রতিদিন দিন দেশের কোথাও না কোথাও বড় বড় বক্তাদের ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে। এসব ওয়াজ মাহফিলে এখন কোরআন হাদীসের আলোচনার চেয়ে রাজনৈতিক আলোচনা বেশি হয় এবং গীবত করা হয় ।সব মিডিয়া সে সব ওয়াজ মাহফিলের নিউজ কাভার করতে গেলে নিউজে শুধু ওয়াজ মাহফিলের সংবাদে বিরাট একটা সময় বরাদ্দ করতে হবে।
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ইতিহাস সমৃদ্ধ বক্তা , ইসলামী চিন্তাবিদ। যখনি জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ দলের পক্ষে কথা বলতে লাগলেন তখন থেকেই জনপ্রিয়তা হারাতে থাকলেন । ইনার ক্ষেত্রেও সেইম হবে কারণ মওদুদী মতবাদ মুসলমান মেনে নিবে না , কথাটা মনে রাইখেন। ইসলামী জালসার নামে একটা নির্দিষ্ট দলকে (এখন দুই বা ততোধিক দল) যে গালিগালাজ, গীবত করছে এদেশের মানুষ অল্প দিনের মধ্যেই মাহফিলে না যাওয়াই নেকীর কাজ মনে করবে ।
তিক্ত সত্য ধন্যবাদ!
শত ভাগ সত্য
সতভাগ সহমত
Very impotant n conscious topic