ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ রজব ১৪৪৬ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

কয়েকটি দাবির ক্ষেত্রে আব্দুল কাদের নিজস্ব অভিমত দেন

এস এম ফরহাদ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন শুরু হওয়ার আগে আমাদের কাছে স্পষ্ট তথ্য ছিল যে খুব শিগগিরই নেটওয়ার্ক শাটডাউন করে দেয়া হবে। আবু সাঈদ ভাইসহ সারা বাংলাদেশে অসংখ্য ভাই শাহাদতবরণ করার পর আন্দোলনকে কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। সেজন্য সাদিক কায়েম ভাই, সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ ভাই সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কয়েকজন সভাপতি ও অন্যান্য দায়িত্বশীল মিলে পরামর্শ করে আন্দোলনের পরবর্তী গতিপথ কী হতে পারে তা নির্ধারণ করি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা ৯টি কৌশলী দাবি প্রস্তুত করি। দাবির ভাষা এমনভাবে ব্যবহার করা হয় যে, দাবিগুলো  যেন সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই মানা সম্ভবপর না হয় এবং মানলেও সরকারের ফ্যাসিবাদী কাঠামো যেন ভেঙে যায়। তখনো ইন্টারনেট সচল ছিল। দাবিগুলোর খসড়া যখন প্রস্তুত করা হয় সর্বপ্রথম রাখা হয়- ‘শেখ হাসিনাকে বক্তব্য প্রত্যাহার ও শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে’। পরে সাবেক সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রথম দফায় কিছুটা সংশোধন করে শেখ হাসিনাকে ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি যুক্ত করা হয়। ছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে আমরা দুইটা অপশন রাখি। ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ অথবা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, পরিস্থিতি বিবেচনায় যেন যেকোনো একটি ঘোষণা দেয়া যায়। আন্দোলনের সময়ে হলের যে শিক্ষার্থীরা দুঃসাহসী ভূমিকা রেখে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে হল ও ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছিল, ওই সকল শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ৯ দফায় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি যুক্ত করা হয়েছিল। যেহেতু তখনো আন্দোলন একদফায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য এই দফার সংযুক্তি সময় বিবেচনায় অত্যন্ত যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল। বর্তমানে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের মাধ্যমে সেই সংকট সমাধান হয়েছে একইসঙ্গে ছাত্ররাজনীতির পুরো সিস্টেমে পরিবর্তন আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ইন্টারনেট শাটডাউন হয়ে গেলে ১৯ জুলাই দাবিগুলোকে পুনরায় পর্যালোচনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিবগাতুল্লাহ ভাই ও কেন্দ্রের অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক ভাইসহ আমরা মিলিত হই। এখানে দায়িত্বশীল ভাইয়েরা পরামর্শ দেন যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে এখনই সরকার পতনের ডাক দিলে তা প্ল্যাটফর্মটিকে বিতর্কিত করবে এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রেরকসহ সকল নেতৃবৃন্দের ওপর অসহনীয় চাপ, জুলুম ও নির্যাতন নেমে আসতে পারে। আব্দুল কাদেরের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপচারিতায়ও অনেকটাই সেরকম পর্যালোচনা হয়। তাই আমরা কৌশলী ভূমিকা হিসেবে উল্লেখ করি ‘ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে শেখ হাসিনাকে জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে’। দাবিটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যেটি মেনে নিলে শেখ হাসিনার সরকারে থাকার নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হয়ে যায়। উল্লেখ্য, তারও কয়েকদিন আগে থেকেই সভাপতি সাদিক ভাই সাবেক দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বিভিন্ন দফা নির্ধারণ করেন ও ইন্টারনেট শাটডাউনের আগেই আসিফ-নাহিদ ভাইকে তার বেশ কয়েকটি দফা পাঠিয়ে নিজেদের মধ্যে পর্যালোচনা-পরামর্শ করতে বলেন। এর আগের কর্মসূচির ক্ষেত্রেও নিয়মিত তাদের সঙ্গেই যোগাযোগ করা হতো, কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই বাকি সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হয়। এদিকে, ৯ দফা প্রস্তুত শেষে আব্দুল কাদেরকে ফোন দিয়ে জানালে সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি জ্ঞাপন করে। তবে, কয়েকটা দাবির ক্ষেত্রে আব্দুল কাদেরের নিজস্ব অভিমত থাকে যা আমরা আবারো আলোচনা করে চূড়ান্ত করি। আব্দুল কাদেরকে নতুন একটা নম্বর নিতে বলা হয়, যেখানে সাংবাদিকরা ফোন দিয়ে নিশ্চিত হবে ৯ দফা সম্পর্কে। সে অনুযায়ী সাংবাদিকরা নিশ্চিত হন। 

কীভাবে আব্দুল কাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্বার সাহসিকতার সঙ্গে ৯ দফা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, আমাদের টিম কোন উপায়ে কতটা কৌশল ও ঝুঁকির সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের হাউজে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছিল, কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে কীভাবে সারা দেশে কঠিন সময়ে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল, ঠিক কীভাবে নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকা অবস্থায় বিকল্প নেটওয়ার্ক মেইনটেইন করে স্থানীয় শাখাগুলোর ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলমান ছিল এবং নিয়মিত কর্মসূচিগুলো কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল- ঘটনার পেছনের বিস্তৃত ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমরা অন্য কোনো সময়ে লিখবো, ইনশাআল্লাহ। 
আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের অংশ হতে পেরেছিলাম ও আমাদের দেয়া ৯ দফা সাদরে গ্রহণ করে জনগণ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে সেসময় দাঁড়িয়ে যায় বুলেটের সামনে। আমরা সেই শ্রমজীবী, পেশাজীবী, প্রবাসী, আলেম সমাজের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি; যারা দেশের স্বার্থে ৯ দফার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। বলতে চাই, ৯ দফার কৃতিত্ব একক কোনো ব্যক্তি বা প্ল্যাটফর্মের নয়। এর কৃতিত্ব সেই শিশুটির যে বারান্দায় খেলতে গিয়ে শহীদ হয়েছে, যারা অকুতোভয় সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে গেছে ময়দানে। যাদের জন্য ‘৯ দফা’ হয়েছে ‘ফ্যাসি মুক্তির ৯ দফা’; রূপান্তরিত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত ‘১ দফা’।

আমি সশ্রদ্ধ চিত্তে ওই সকল শহীদ ও আহত ভাইদের প্রতি বিনম্র সালাম জ্ঞাপন করছি মূলত যারা এই আন্দোলনের স্পিরিট নিয়ে মাঠে লড়াই করে গেছেন। একইসঙ্গে সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তাদের জন্য শাহাদতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোক।
লেখক: সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

পাঠকের মতামত

আল্লাহ আপনাকে সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুক।

Mizan
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৮:৫৬ পূর্বাহ্ন

May Allah grant all of urs sacrifices, Ameen

Mohammad Zillur Rahm
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১:১৭ অপরাহ্ন

আল্লাহ আপনাকে সুস্থ ও নেক হায়াত দান করুক।

তাওহিদ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Bangladesh Army

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ/ এক যুগ আগে ড. ইউনূসকে যা বলেছিলাম

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি

সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status