ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

খোলা চোখে

বিএনপি নেতাদের দ্বারা গঠিত নির্বাচন কমিশনও কি পারবে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে?

রুমিন ফারহানা
২৯ জুলাই ২০২২, শুক্রবার
mzamin

সামনে জাতীয় নির্বাচন। সাধারণ মানুষের এই নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ আছে কতোটা জানি না, কিন্তু নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলগুলো, গণমাধ্যমসহ নির্বাচনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তাদের উৎসাহ সীমাহীন। পত্রিকার পাতায়, কলাম লেখায়, টকশো টেবিলে সর্বত্র এই এক আলোচনা। এই যেমন আমি নিজেই লিখছি এখন।

এক সময় দেশে নির্বাচন ছিল উৎসব। মানুষের মধ্যে ‘দেশের মালিক’ হওয়া জনিত একটা আনন্দ লক্ষ্য করতাম নির্বাচন এলে। সত্যি কথা বলতে কী সংবিধান কাগজে-কলমে যতই মানুষকে দেশের রাজা বানাক, দুর্বল গণতন্ত্রের দেশে আসলে সেটা হয় না। কিন্তু নির্বাচনটা সুষ্ঠু হলে জনগণ সত্যিকার অর্থে রাজা না হলেও নির্বাচন এলে নিজেকে কিছুটা হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে পারে। নির্বাচনী মৌসুমে ভোট চাওয়া, মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়া, নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া, একটু হলেও গুরুত্ব বাড়ায় মানুষের। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হয় আর কতটা হয় না সে হিসাব দূরে সরিয়ে রেখেই বলছি, ভোট অন্তত কিছুটা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর জবাবদিহিতা তৈরি করে, তাদের মানুষের কথা ভাবতে, মানুষের ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করে। 

দুর্ভাগ্য আমাদের, নির্বাচন এখন আর সেই চিরাচরিত রূপে আসে না। নির্বাচন মানেই এখন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মামলা, গুম, ভয়ভীতি দেখানো, নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা, পুলিশ এবং প্রশাসন ব্যবহার করার মাধ্যমে মাঠ দখলে রাখা, নির্বাচন কমিশনকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করা অর্থাৎ নির্বাচনে যেকোনো উপায়ে জিততে মরিয়া সরকারি দল মোটামুটি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে।

বিজ্ঞাপন
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো যে নির্বাচন কমিশনের রেফারির ভূমিকা পালনের কথা সেই কমিশনও সরাসরি পক্ষভুক্ত হয়ে কাজ করেছে ২০১৪ সাল থেকে, সকল জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে। অর্থাৎ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছে গত কয়টি বছরে।

নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসের এই দায় যেমন এড়াতে পারে না সরকার, সরকারি দল, তাদের নেতাকর্মীরা তেমনি এড়াতে পারে না নির্বাচন কমিশন। এ দেশে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাতে জিততে মরিয়া সরকারি দল, যেকোনো মূল্যে জিততে গিয়ে পুলিশ, প্রশাসন, অর্থ, ক্যাডারের লাগামহীন ব্যবহার দুঃখজনক হলেও আশ্চর্যজনক নয়। যেটি আশ্চর্যজনক তা হলো কমিশনের আচরণ। কমিশন শুধু যে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, ব্যর্থ হয়েছেÑ নির্বাচনী আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, আইনে তাদের যে ক্ষমতা দেয়া আছে সেটি ব্যবহার করতে, একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে, ভোটার এবং প্রার্থীদের জন্য নিরাপদ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করতে, নির্বাচনী সহিংসতা ঠেকাতে, পুলিশ প্রশাসনকে সরকারের দলীয় ক্যাডারের মতো ব্যবহার করা বন্ধ করতে। ব্যর্থ হয়েছে- বিরোধী দলকে ন্যূনতম একটা স্পেস দিতে, যাতে তারা নির্বাচনে আগ্রহী হয়। সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বিরোধী দল-মতের মানুষকে আশ্বস্ত করতে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, বিরোধী দলের অভিযোগ আমলে নিতে, সরকারি দলের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে।

বিগত দুই ব্যর্থ কমিশন শুধু যে ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল তা হলো কথা বলা। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে যা যা বলা সম্ভব তার সবই বলেছেন তারা, সত্য কিংবা মিথ্যা, যৌক্তিক অথবা অযৌক্তিক। মজার ব্যাপার হলো নতুন যে কমিশন গঠিত হয়েছে জনাব হাবিবুল আউয়াল সাহেবের নেতৃত্বে তারাও শুরু থেকেই আছেন কথার উপর। তাও আবার যে সে কথা নয়, একেবারে পিলে চমকানো কথা। নতুন কমিশনের কথায় যাবার আগে শেষ দু’টি কমিশনের কথা একটু দেখে আসি। 

২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচন উপহার দেন রকিব কমিশন। এই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে ইতিহাসে রেকর্ড করে আওয়ামী লীগ। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের যে শর্ত আছে তাকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে একটি ভোট পড়ার আগেই গঠিত হয় সংসদ। নজিরবিহীন এই নির্বাচনে শেষমেশ মহাজোট থেকেই অভিনব কায়দায় এক প্রকার জোর করেই গঠিত হয় বিরোধী দল যা গৃহপালিত বিরোধী দল নামেই বেশি পরিচিত।

এখানেই শেষ নয়। আইনে অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। কিন্তু সেই কমিশন ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম-সংক্রান্ত প্রার্থীদের অভিযোগ আমলেই নেয়নি। উল্টো এক চিঠিতে সব প্রার্থীকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের চরভৈরবী ইউনিয়নের এক প্রার্থী হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্ট কমিশনকে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। কমিশন সেই আদেশও আমলে নেয়নি। এ জন্য হাইকোর্ট কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় সিইসি ও চার কমিশনার আদালতে গিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। উপজেলা নির্বাচনের পর বিরোধী দলসহ সমালোচকদের অনেকে সেই কমিশনকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। এ বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে গিয়ে কমিশনার জাবেদ আলী টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কোমর দুলিয়ে বলেছিলেন, ‘মেরুদণ্ড তো ঠিকই আছে।’ এই হলো আমাদের নির্বাচন কমিশন। 

‘কোমর দোলানো’ নির্বাচন কমিশনের পর আমরা পেলাম নুরুল হুদা কমিশন। যারা দিনের ভোট রাতে করে পুরো নির্বাচনের সংজ্ঞাই পালটে দিলেন মানুষের কাছে। ২০১৮ সালের নির্বাচন কেবল যে বিরোধী দলের কাছে সমালোচিত হয়েছে তাই নয় বরং সুজন, টিআইবি’র মতো সংগঠন, মহাজোটের শরিক দলগুলো, বিদেশি গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষকরা পর্যন্ত বলেছেন এই নির্বাচন ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার মতো নির্বাচন ছিল না। টিআইবি দৈবচয়নের ভিত্তিতে নেয়া ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭ (৯৪%)টিতেই অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ (৬৬%)টি আসনে নির্বাচনের আগের রাতেই সিল মারা হয়ে গেছে। 

সুজন ২০১৮ সালের নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল থেকে দেখিয়েছে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ এই কেন্দ্রগুলোতে কেউ মারা যায়নি, কেউ অসুস্থ হয়নি, কেউ দেশের কিংবা এলাকার বাইরে ছিল না। ৯৬-১০০ শতাংশ ভোট পড়েছে ১৪১৮টি কেন্দ্রে। ৯০-৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ৬৪৮৪টি কেন্দ্রে। এসবই অস্বাভাবিক। আরও মজার বিষয় হলো ৭৫টি আসনে ৫৮৭টি কেন্দ্রের সব বৈধ ভোট একটি প্রতীকে পড়েছে। এর মধ্যে ৫৮৬টিতে সব ভোট পেয়েছে নৌকা প্রতীক আর একটিতে পেয়েছে ধানের শীষ। ১১৭৭টি কেন্দ্রে বিএনপি শূন্য ভোট পেয়েছে আর নৌকা পেয়েছে ১ কেন্দ্রে শূন্য ভোট। রাজনৈতিক মহলে এই নির্বাচনটি নিশি রাতের নির্বাচন নামেই বেশি পরিচিত। 

এই নির্বাচনের পর একমাত্র কমিশনার মাহবুব তালুকদার ছাড়া নির্বাচন নিয়ে আর কারো কোনো অসন্তোষ বা উদ্বেগ ছিল বলে মনে হয় না। তিনিই একমাত্র বলেছিলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা এখন আইসিইউতে আর গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’। তার মেয়াদকালের পুরোটা সময়ই তিনি সাধ্যমতো কমিশনের ভেতরে, বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করার চেষ্টা করে গেছেন। যেহেতু কমিশনে ৫ জন কমিশনারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যেকোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাই সঙ্গত কারণেই তার একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না, কিন্তু নানান সময় প্রতিবাদ করে, নোট অফ ডিসেন্ট দিয়ে, সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ ভোটারদের মনের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। ইতিহাস নিশ্চয়ই একদিন তার মূল্যায়ন করবে। 

নির্বাচন কমিশনার থাকাকালীন পুরোটা সময় সিইসি নূরুল হুদা নিজেদের সফল বলে দাবি করলেও মেয়াদ শেষে স্বীকার করেছেন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং। বলেছেন, বিএনপির মতো বড় একটি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়াও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়াকে অস্বস্তিকর বলেছেন তিনি এবং স্বীকার করেছেন যে রাজনৈতিক দল, প্রশাসনসহ অংশীজনদের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া শুধু কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এই কথাগুলো মেয়াদ শেষে না বলে মেয়াদকালীন সময়ে যদি ব্যবস্থা নিতেন কিংবা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং বলে যদি পদত্যাগ করতেন তাহলে দায়িত্ব কিছুটা হলেও পালনের চেষ্টা করেছেন বলে মনে হতো। 

রকিব এবং হুদা কমিশনের ২০১৪ আর ২০১৮ সালের অভূতপূর্ব নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে গঠিত হলো আউয়াল কমিশন। এই কমিশনের অধীনে এখন পর্যন্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো নির্বাচন হয়নি। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এক সংসদ সদস্য বাহারকে সামলাতে কী ধরনের চাপে পড়েছিল কমিশন সেটি নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। যদিও শপথ নিয়েই সিইসি পরিষ্কার বলেছিলেন, উচ্চরক্তচাপ ছাড়া তার উপর আর কোনো চাপ নেই। দায়িত্বের চাপ বড় চাপ, তবে সেটা এড়ানোর কায়দা জানা থাকলে সে চাপ থেকেও মুক্ত থাকা যায়। ভেঙে পড়া নির্বাচন ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে তিনি যদি কমিশনের দায়িত্ব বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন তবে তো চাপমুক্ত থাকারই কথা। তাই হয়তো বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, ‘আমি বলতে চাচ্ছি, মাঠ ছেড়ে চলে আসলে হবে না। মাঠে থাকবেন, কষ্ট হবে। 

এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হয়তো দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতেন, কিন্তু উনি পালাননি। তিনি বলছেন, ‘আমি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করব।’ তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধ করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ নির্বাচন যে একটি মল্লযুদ্ধ এটি পরিষ্কার তার কথায়। রাজনীতি এবং নির্বাচনী মাঠের এই যুদ্ধক্ষেত্রের মতো পরিস্থিতিতে সরকারি দল তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ে ভøাদিমির পুতিনের মতো যখন ঝাঁপিয়ে পড়বে বিরোধী দলের ওপর তখন নির্বাচন কমিশনের যে আসলে তেমন কিছু করার নেই, সেটাও তিনি বলে ফেলেছেন। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক দলের ময়দান ছাড়িয়ে কূটনীতির পাড়ায় পর্যন্ত ঝড় তুলেছিল। ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস এই বক্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করে। এখানেই শেষ নয়Ñ ইভিএমের ভুলত্রুটি ধরতে পারলে কমিশনার আনিসুর রহমানের ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণাকে ‘কিছুটা স্মৃতিভ্রম’ এবং ‘মিডিয়ার সামনে খেই হারিয়ে ফেলা’ ‘সিøপ হয়ে যাওয়া’ বলে আবারো আলোচনায় আসেন তিনি। তবে এরপর তিনি যা বলেছেন সেটি নিশ্চয়ই ‘খেই হারিয়ে’ কিংবা ‘সিøপ হয়ে’ বলেননি তিনি। ভেবে-চিন্তে হয়তো ভোটারদের আশ্বস্ত করার জন্যই বলেছেন, ‘দিনের ভোট দিনেই হবে। ভোট রাতে হবে না।’ তবে এই বলার মধ্য দিয়ে নিজের অজান্তেই হয়তো ২০১৮ সালের নির্বাচনের রাতের ভোটের স্বীকারোক্তি করেছেন তিনি। 

আমরা কথ্য ভাষায় অনেক সময় বলি, ‘তিনি তো কথার দোকান খুলেছেন।’ শপথের পর থেকে নতুন কমিশন বিশেষ করে সিইসিকে দেখে আমার তাই মনে হচ্ছে। ১৭ই জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের প্রথম দিনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে সংলাপে সিইসি বলেন, ‘কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কি করবো?’ তাহলে আমি কী করবো- কথাটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এই কথাটির মধ্য দিয়ে সিইসি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে নির্বাচনী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার কিছুই করার ক্ষমতা নেই। সংবিধান কিংবা নির্বাচনী আইন যাই বলুক না কেন কমিশন যদি নিজেই নিজেকে অসহায় দেখাতে চায় তবে সেই কমিশনকে শক্তিশালী করার সাধ্য কোনো সংস্থা বা আইনের নেই। শপথ নেয়ার পরপরই বিরোধী দলকে জেলেনস্কির মতো মাঠে থাকার পরামর্শ দিয়ে নির্বাচনকে মল্লযুদ্ধের যে স্বীকৃতি তিনি দিয়েছিলেন ‘তলোয়ার বনাম রাইফেলের’ এই কথা সেই স্বীকৃতিরই ধারাবাহিকতা মাত্র বলে মনে হয়েছে। 

নতুন কমিশন গঠিত হওয়ার পর সিইসি’র অতিকথন ছাড়া আগের কমিশনগুলোর সঙ্গে আর কোনো ভিন্নতা নেই। আউয়াল কমিশন যে রাকিব বা হুদা কমিশনেরই ধারাবাহিকতা মাত্র সেটি বুঝতে খুব বড় বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না যেÑ ‘এটা নতুন বোতলে পুরনো মদ’। আসলে দলীয় সরকারের অধীনে সব কমিশন এক হবে সেটাই স্বাভাবিক। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চমৎকার নির্বাচন করা প্রশংসিত নির্বাচন কমিশনগুলোকে এনে বসালেও দলীয় সরকারের অধীনে ভিন্ন কিছু হওয়ার কারণ নেই বর্তমান বাংলাদেশে। আর তাই প্রধান বিরোধী দল বিএনপি খুব সঠিকভাবেই বলছে, তাদের নেতাদের দিয়ে কমিশন গঠন করেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- যদি নির্বাচনকালীন সরকারটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ না হয়।

 

 

 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status