নির্বাচিত কলাম
টেইক ব্যাক বাংলাদেশ
নাগরিক ভাবনা
ড. এম মুজিবুর রহমান
১৭ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার৫ই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে যারা হতাহত হয়েছেন, শহীদি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, হাত-পা-চোখ-কান হারিয়ে যারা এখনো জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন, সবার প্রতি জানাই অসীম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনাদের চরম আত্মত্যাগের কারণেই, ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ’৭১-এর ডিসেম্বরে হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করেছে, একইভাবে ৫ই আগস্ট হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকেও একইভাবে উপভোগ করেছে। বাংলাদেশের মানুষের মতো লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কসহ বিভিন্ন শহরে প্রবাসে আমি বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ও আনন্দ দেখেছি। ৫ই আগস্টের ঐতিহাসিক সময়ে আমি যত মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁবেদার হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে সবার একটাই প্রতিক্রিয়া ছিল- স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
যুগে যুগে অনেক ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার রাষ্ট্র কিংবা রাজ্য দখল করে। অবৈধভাবে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যার ঘটনাও বিশ্বের ইতিহাসে অজানা নয়। নিজের অবৈধ ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য কিংবা নিজ দেশের স্বাধীনতা কিংবা শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার জন্য, বিশ্বের ইতিহাসে অনেক ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচারী শাসক, গণহত্যায় লিপ্ত হয়েছেন। তবে বিশ্বের ইতিহাসে বোধ করি বঙ্গকসাই হাসিনাই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নিজ দেশের স্বাধীনতাকে অন্য দেশের হাতে তুলে দিতে নিজ দেশের জনগণকে হত্যায় লিপ্ত হয়েছিলেন। হাসিনার দুঃশাসনকালে দেশের জনগণ টের পেয়েছে, জনগণ নিজ দেশেই পরাধীন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার আর স্বাধিকার হারাতে হারাতে শেষপর্যন্ত তাঁবেদার হাসিনা বাংলাদেশকে এমন অবস্থায় নিয়ে পৌছিয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকগণ গরুর গোশত খেতে পারবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিল। এ কারণেই আমরা দেখেছি, ৫ই আগস্ট হাসিনামুক্ত বাংলাদেশকে জনগণ ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরেই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের আরও অনেকগুলো রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকেই ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতা অর্জিত না হলেও শত জুলুম নির্যাতনের পরও কেউ আপস করেননি। রাজপথ ছেড়ে যাননি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাদার অব ডেমোক্র্যাসি বেগম খালেদা জিয়াকে অকারণে বছরের পর বছর কারাবন্দি জীবন কাটাতে হয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অনেক অপবাদ অপপ্রচার এমনকি মিথ্যা মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। দেশের জনগণ যাতে শুনতে না পারে সেজন্য উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার না করতে গণমাধ্যমকে বাধ্য করা হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা উপলব্ধি করে তারেক রহমান বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারের জন্য ডাক দিয়েছিলেন। একটি স্লোগান তুলেছিলেন। স্লোগানটি হলো ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’।
তাঁবেদার হাসিনার পলায়নের মুহূর্তটিকে স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ যখন ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে অভিহিত করে তখন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এবং গভীর অর্থবহ বলেই প্রতিভাত হয়। ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ কিংবা ভাষান্তর করলে ‘ফিরে লও বাংলাদেশ’। এই স্লোগানের মর্মার্থ এভাবে উপলব্ধি করা যায়, বাংলাদেশে যেখানে থাকার কথা ছিল সেখানে নেই। সুতরাং, বাংলাদেশ যেখানে ছিল সেখানে ফিরিয়ে আনতে হবে এটাই ছিল এই স্লোগানের উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ কোথায় থাকার কথা ছিল? আসুন একটু জেনে নেই। সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক সুবিচার, মুক্তিযুদ্ধের এইসব মূলমন্ত্রে বাংলাদেশ পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র থেকে সরে গিয়েছিল। দেশের গৌরব এবং মর্যাদার প্রতীক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে অপচেষ্টা চলেছিল।
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর দেশের সিপাহী-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মধ্যদিয়ে দেশের স্বার্থবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করা হয়েছিল। দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করা হয়েছিল। তখন থেকে দেশে মূলত মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল। ৭ই নভেম্বর বিজয়ী হয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ, জাতীয়তাবাদী শক্তি। সুসংহত হয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষের জনগণের ঐক্য ও সংহতি। অপশক্তির পরাজয়ের মধ্যদিয়ে শক্তিমান হয়ে উঠেছিল দেশের শৌর্য ও সাহসের প্রতীক সেনাবাহিনী। ’৭৫-এর ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার সম্মিলিত বিপ্লবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। সুতরাং, ৭ই নভেম্বর ছিল, দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা সুরক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন।
’৭৫-এর ৭ই নভেম্বর পরাজিত অপশক্তি তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। ফলে সেদিনের পরাজিত সেই অপশক্তির দেশের স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্র কখনোই থেমে ছিল না। অপশক্তির ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র এবং সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসেবেই তারা সকল সময়েই দেশের ইমেজ বিনষ্টের চক্রান্তে ছিল লিপ্ত। পরাজিত অপশক্তি দেশে সুকৌশলে তথাকথিত জঙ্গিবাদের জন্ম দিয়েছিল। সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতেও জঙ্গি রয়েছে, দেশে-বিদেশে এমন প্রচারণাও চালিয়েছিল। অপরদিকে দেশে-বিদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তির ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে ২০০৪ সালে ঘটানো হয়েছিল ২১শে আগস্ট। ২১শে আগস্ট ছিল স্পষ্টতই দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। ২১শে আগস্টের নৃশংস ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ২১শে আগস্ট ছিল ২০০৭ সালের কথিত ‘ওয়ান ইলেভেন’ সৃষ্টির প্রাক মহড়া। ‘একুশে আগস্ট’ আর ‘ওয়ান ইলেভেন’ একই সূত্রে গাঁথা।
৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পরাজিত অপশক্তি ‘মহাজোটে’র নামে ‘একজোট’ হয়েছিল। ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর যারা দেশকে উল্টো পথে নিতে ব্যর্থ হয়েছিল ২০০৭ সালের কথিত ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে তারা সাময়িকভাবে সফল হয়। ‘একুশে আগস্ট’ আর ‘ওয়ান ইলেভেন’-এর ষড়যন্ত্রের পথ ধরেই ‘মহাজোটে’র নামে ‘একজোট’ হওয়া, ৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে। ক্ষমতা দখল করেই ঘষেটি বেগম, রায় দুর্লভ আর জগৎশেঠদের মতো মীরজাফর চক্রটি প্রথম আঘাতটি হানে দেশের সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর ওপর। বিডিআর বিদ্রোহের নামে রাজধানীর পিলখানায় ঘটানো হয় পরিকল্পিত সেনা হত্যাযজ্ঞ। এটি আসলে কোনো বিদ্রোহ নয়, এটি ছিল ঠাণ্ডা মাথায় সেনা হত্যাযজ্ঞ। এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে দেশের ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা হত্যাযজ্ঞের এই বর্বরোচিত দিনটি অবশ্যই বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি।
আবু সাইয়িদ, মুগ্ধ কিংবা ওয়াসিমদের বীরত্বগাঁথা আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে জনগণের বাংলাদেশ জনগণের কাছে আবার ফিরে এসেছে। ‘টেইক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানটি সার্থক রূপলাভ করেছে। তবে ২০২৪ কিংবা ’৭১ বার বার আসে না। বার বার হয় না। সুতরাং, হাজারো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে পুনরুদ্ধার হওয়া বাংলাদেশ যাতে আর জনগণের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে না পারে, এজন্য জনগণের বাংলাদেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, একজন নাগরিক হিসেবে এটাই আমার এই মুহূর্তের ভাবনা। প্রশ্ন হলো, দেশের সঙ্গে জনগণের মালিকানা কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন নাগরিক হিসেবে আমি আমার ভাবনাটি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। এই বিষয়টি নানা দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
তবে আমি মনে করি,
১. ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য থেকে আরম্ভ করে মেম্বার অব পার্লামেন্ট, অর্থাৎ স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে যদি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ নাগরিকদের এই প্রত্যক্ষ ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের সঙ্গে রাষ্ট্রের মালিকানার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. যখন একটি রাষ্ট্রে এটি প্রমাণিত হবে যে, কোনোভাবেই ‘নাগরিকের ভোট ছাড়া জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়’ তখন বোঝা যাবে নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৩. জনগণের ভোট ছাড়া যখন মনে হবে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে রাষ্ট্রপরিচালনা সম্ভব নয় তখনি বোঝা যাবে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের মালিকানা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
এক্ষেত্রে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, একটি রাষ্ট্রে ভোটের অধিকারবিহীন নাগরিকের অবস্থা রণাঙ্গনে অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণবিহীন সৈনিকের মতোই নাজুক।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সময়ের প্রয়োজনে আমরা যাই বলি না কেন, শেষপর্যন্ত রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। এটাই বাস্তবতা। নজিরবিহীন সাহসিকতায় ২০২৪-এর বিজয় কীভাবে সুসংহত রাখা যায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বেশ কয়েকটি বক্তব্যও আমার চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশেষ করি যে, নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সাম্প্রতিক সময়ে তার দেয়া প্রতিটি বক্তব্যই ইতিবাচক এবং রাজনৈতিক বার্তাবহ বলেই দেশের মানুষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া গণতন্ত্র, উন্নয়ন কিংবা সংস্কার কোনো কিছুই টেকসই হবে না। জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে, মানুষের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেছেন, একটি দেশের জাতীয় সংসদই হচ্ছে, জনগণ এবং সরকারের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগের সেতুবন্ধন। সুতরাং জাতীয় সংসদকে কার্যকর রাখা খুবই জরুরি।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও একটি বিষয় বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তার এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত না থাকায় আমি হুবহু তার বক্তব্যটিই এখানে উল্লেখ করতে চাই। গণতন্ত্রকামী জনগণের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত, দেশে এই দুইটি আদালত শক্তিশালী স্বাধীন এবং কার্যকর থাকলে ফ্যাসিবাদ কিংবা স্বৈরাচার আর কখনই জনগণের স্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে সক্ষম হবে না। জনগণের আদালতের অর্থ ‘মব জাস্টিস’ নয়। জনগণের আদালতের অর্থ ‘কোনো ব্যক্তি বা দলকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত কিংবা ক্ষমতাহীন করার চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকা’। রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এমন হওয়া প্রয়োজন যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ যে পর্যায়ের প্রতিনিধিই হোক না কেন নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোট ছাড়া কোনোভাবেই একজন নেতা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে সক্ষম হবেন না। এমন রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে জনগণের ভোট ছাড়া জনপ্রতিনিধি হওয়ার পথ স্বাভাবিকভাবেই রুদ্ধ হয়ে যাবে। অপরদিকে যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার হতে হবে রাষ্ট্রীয় বিচারিক আদালতে। রাষ্ট্রের হস্তাক্ষেপ ছাড়া সম্পূর্ণ স্বাধীন বিচারালয়ে যেকোনো অপরাধের বিচার হবে।
আমিও জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রীয় আদালত সত্যিকার অর্থে এই দুইটি আদালত থাকলে অবশ্যই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার দিকে কার্যকরভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
মাফিয়া চক্রের প্রধান হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের বাংলাদেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়েছে। আমি মনে করি, এ সরকারের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির নিঃশর্ত সমর্থন অব্যাহত থাকা জরুরি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন জনগণের এই চাওয়া বুঝতে ব্যর্থতার পরিচয় না দেন, সে ব্যাপারে সরকারেরও সতর্ক থাকা জরুরি। আমার মতামত তুলে ধরলাম।
লেখক: সংবাদ বিশ্লেষক ও সাবেক সহকারী অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।