ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

কেয়ার হোমে ধর্ষণসহ নিয়ম লঙ্ঘন

ক্ষমা চাইলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

মানবজমিন ডেস্ক

(৪ সপ্তাহ আগে) ১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৪০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

mzamin

কেয়ার হোমে অযত্ন ও অবহেলা, ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতন, বন্ধ্যাকরণ, জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করার অভিযোগে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাইলেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সোন। উল্লেখ্য, ১৯৫০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ও ধর্মভিত্তিক কেয়ার হোমগুলোতে প্রায় দুই লাখ শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর নিপীড়ন, অন্যায় করা হয়েছে বলে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। একে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিয়ম লঙ্ঘনের অন্যতম কেলেঙ্কারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। ফলে পার্লামেন্টে দাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী। আনুষ্ঠানিকভাবে সবার কাছে তিনি ক্ষমা চাইলেন।

উল্লেখ্য, যেসব মানুষ ওইসব কেয়ার হোমে অযত্নের শিকার হয়েছেন তার মধ্যে আছেন মাওরি এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়, মানসিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী। সরকার এখন এসব কেয়ার সিস্টেমে সংস্কার আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মঙ্গলবার পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে লুক্সোন বলেন, কেয়ার হোমের যারা জীবিত আছেন তাদের কাছে আমার নিজের এবং সাবেক সরকারগুলোর পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি। যে ঘটনা ঘটেছে তা ভয়াবহ। হৃদয়বিদারক। এটা অন্যায়। এমনটা কখনো ঘটা উচিত ছিল না। এ জন্য আপনারা অনেকে জীবনের গতিবিধি বদলে নিয়েছেন। তার জন্য সরকারকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, নিউজিল্যান্ডে সরকারি পর্যায়ে এ যাবত যত জটিল ও বৃহৎ তদন্ত হয়েছে এটা তার মধ্যে সবচেয়ে জটিল ও বৃহৎ। এই তদন্ত শেষ হতে সময় নিয়েছে ৬ বছর। রাষ্ট্র ও ধর্মভিত্তিক কেয়ার বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্যাতনের শিকার কমপক্ষে ২৩০০ জীবিত ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে এই তদন্তে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে,  এসব কেয়ার হোমে ভয়াবহভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ধর্ষণ, বন্ধ্যাকরণ এবং জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করানো। রাষ্ট্রীয় কেয়ার হোমগুলোর চেয়ে ধর্মভিত্তিক কেয়ার হোমগুলোতে অধিক মাত্রায় যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। এতে যারা জড়িত তাদের বিষয় প্রকাশ পেলেই নাগরিক এবং ধর্মভিত্তিক নেতারা নির্যাতনকারীকে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে দিয়েই ঘটনা ধামাচাপা দিতেন। এর মধ্য দিয়ে তাদেরকে দায়মুক্তি দেয়া হতো। তারা অপরাধ থেকে রক্ষা পেতেন। অনেক ভিকটিম এর বিচার দেখার আগেই মারা গেছেন। যারা ক্ষমতাধর কর্মকর্তা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি পর্যায়ের তাদের বিরুদ্ধে এ বিষয়টি প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ওদিকে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার শুনানি দেখতে নির্যাতিতদের কয়েকজন এবং আইনজীবী পার্লামেন্টে উপস্থিত হন। সারাদেশে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে এ দৃশ্য দেখেন আরও শত শত মানুষ। এর আগে পার্লামেন্টে ক্ষমা চাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী লুক্সোনকে বেশ সমালোচনা শুনতে হয়েছে। কারণ, তার ওই ক্ষমা চাওয়াটা অনেক নির্যাতিত মানুষ সরাসরি শুনতে পাবেন না। ফলে নির্যাতন থেকে বেচে ফেরা কিছু মানুষ যুক্তি দিয়েছেন যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমা না চাইলে লুক্সনের এই ক্ষমা চাওয়া হবে ফাঁপা বুলির মতো। মাওরি সম্প্রদায়ের নির্যাতিত টুপুয়া উরলিচ বলেন, ওই যে নির্যাতনের ক্ষত তা আমার সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তিনি বলেন, এটা শুধু শারীরিক নির্যাতনই নয়। একই সঙ্গে আমার পরিবার ও সংস্কৃতির সঙ্গে আমার বিচ্ছিন্নতা বিষয়কও। ন্যায়বিচার? না, এখনও পাইনি। পদক্ষেপ না নেয়া পর্যন্ত এসব প্রতিশ্রুতির কোনো অর্থ নেই। ওদিকে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী লুক্সন বলেছেন, বেঁচে থাকা মানুষগুলোর জন্য কৌশল নির্ধারণে সরকার একটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে। এতে বর্তমান ব্যবস্থায় ১৯ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে। উল্লেখ্য, তদন্তে এ বিষয় কমপক্ষে ১০০ সুপারিশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে জনগণের সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এবং ধর্মীয় নেতাদের। লুক্সন বলেছেন, এরই মধ্যে সরকার ২৮টি সুপারিশ সম্পন্ন করেছে না হয় কাজ চলমান আছে। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status