ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বুলেটে ঝাঁজরা শরীর নিয়ে লড়ছেন আরিফ

ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

মো. আরিফ হোসেন (২১)। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের ছোড়া বুলেটে ঝাঁজরা পুরো শরীর। প্রায় ২ মাস চিকিৎসা নিচ্ছেন ঘাটাইলের আরিফ। স্থানীয় ধলাপাড়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছেন তিনি। হত-দরিদ্র ঘরের সন্তান তিনি। বৈষম্যের শিকল ভাঙতে তিনিও যোগ দিয়েছিলেন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। উপজেলার শালিয়াবহ গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের পুত্র আরিফ হোসেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মর্মস্পর্শী বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।

১৯শে জুলাই ঢাকার উত্তরা বোনের বাসায় বেড়াতে যান আরিফ। ২০শে জুলাই বিকালবেলা চা খাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। এমন সময় দেখেন উত্তরা ৭নং সেক্টরের বিভিন্ন সড়ক দিয়ে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছে। তখন সন্ধ্যা ৭টা। আরিফ হোসেন বসে না থেকে সংযুক্ত হন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিছিলে কিছু পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আন্দোলনকারীরা। এমন সময় পুলিশের তিনটা গাড়ি আসে। ওই গাড়ি থেকে ভারী অস্ত্রে মুহুর্মুহ গুলি ছুড়ে পুলিশ। তাদের ছোড়া গুলি পিঠবিদ্ধ হয়ে আমার বুকের পাঁজর ও ডানা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সড়কে লুটে পড়ি আমি। তখনো আমার জ্ঞান আছে। পরে আমার সহযোদ্ধা বন্ধুরা প্রথমে উত্তরাস্থ ঢাকা স্পেশালাইজড হসপিটালে নিয়ে যায়। 

সেখান থেকে রাত ১২টার পর নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রথমে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। বুলেটের ছোড়া গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়ায় প্রথমে তার খাদ্যনালিতে ৭ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে বুকের বাঁ-পাশে পাঁজরে ইনফেকশন দেখা দেয়। এতে দ্বিতীয় দফায় তাকে আরও একটি অপারেশন করা হয়। দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরইমধ্যে ফুসফুসে পচন ধরে যায়। ফলে ৩য় দফায় অস্ত্রোপচার করে তার ফুসফুস কেটে ফেলা হয়। এভাবে দীর্ঘ প্রায় ২ মাসের অধিক সময় চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। এতে তার নিজের পকেট থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এরমধ্যে ১৪ই আগস্ট থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি খরচে চিকিৎসা সুবিধা পেয়েছেন তিনি। আরিফ দুঃখ করে বলেন, চিকিৎসার সময়ে ঢাকা মেডিকেলে আমার পরিবারের লোকজন ছাড়া আমাকে কেউ দেখতে আসেননি। ২১শে জুলাই থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ছিলেন। একটু উন্নতি হলে নিজ বাড়ি ঘাটাইলের শালিয়াবহ গ্রামে আসেন তিনি। এক রাত যেতে না যেতেই পেটে গ্যাস জমে তার অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। পরে ১১ই সেপ্টেম্বর অ্যাম্বুলেন্সে করে পুনরায় নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি বাড়িতে থাকলেও মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। ডাক্তার বলেছে, শঙ্কামুক্ত নন তিনি। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। আরিফের মা বলেন, আমার নাড়ি ছেড়া ধন সন্তানটি নিয়ে নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছি আমরা। দু’বলা আহার জোগার করাই আমাদের জন্য যেখানে ভীষণ কষ্ট, সেখানে চিকিৎসার খরচ জোগার করবো কীভাবে। সারা রাত ঘুমাতে পারি না। ছেলেটার বাবা নেই। আমার বয়স হয়েছে। চোখেও কম দেখি। ছেলের চিন্তায় আমিও অসুস্থ। এভাবে চলতে থাকলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে মরে যেতে হবে। 

আরিফ হোসেন অশ্রুসজল কণ্ঠে মানবজমিনকে বলেন, আমার পরিবারে মা, নানী, স্ত্রী, সন্তান ও এক ভাই নিয়ে ৬ জনের সংসার। বাঁচা-মরার সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোমতে বেঁচে থাকলেও এই দরিদ্র সংসার চলবে কীভাবে।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার জীবনে যেন নেমে এসেছে চরম বিপর্যয় আর অন্ধকারের অমানিশা। চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে। বাবা মারা যাওয়ার পর টিউশনি করে, মানুষের দ্বারে দ্বারে কাজ করে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসার চালাতাম। এখন কীভাবে চালাবো সংসার। সমাজের বিত্তবানসহ সরকারের সুদৃষ্টি ছাড়া আর যেন কোনো গত্যন্তর নেই আমাদের। ভীষণ কষ্টে আছি। তিনি বলেন, আমি তো মরেই যাবো। কিন্তু মরে গেলেও তো শান্তি নিয়ে মরতে পারছি না। বৃদ্ধ মা, সন্তান, স্ত্রী, ছোট ভাই ও বৃদ্ধা নানিটাকে কার কাছে রেখে যাবো। বড় স্বাদ জাগে, মরার আগে যদি আমার পরিবারের একটা মাথাগোঁজার ঠাঁই দেখে যেতে পারতাম তাহলে শান্তি নিয়ে মরতে পারতাম। কথাগুলো বলে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন হতভাগা আরিফ।
 

পাঠকের মতামত

অতি দ্রুত তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য সরকার কে আহবান জানাই।

Ahsan
৪ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

উনার মোবাইল নম্বর বা যোগাযোগের কোন উপায় উল্লেখ করলে ভালো হতো

Md.
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:২৭ অপরাহ্ন

সরকারের কর্তব্য ব্যক্তিগণ এদের দিকে সুদৃষ্টি দিতে হবে। এমন অসহায় পরিবারের খুজখবর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিতে হবে এবং তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে।

মিজানুর রহমান
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:০৬ অপরাহ্ন

To day and from now the list of freedom fighters must be checked and drop the fakes as well as replace and include the woundeds and family of martyrs replace there in.

Qaasemy
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:০১ অপরাহ্ন

আমিই এই পেপারে ছাপা আরিফ হোসেন।

আরিফ হোসেন
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৬:৩৬ অপরাহ্ন

Allah please help him.

Ahemed Faruk Jahangi
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৫:৩৭ অপরাহ্ন

সুস্থ হয়ে উঠুক।

সোহাগ
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৩:২৮ অপরাহ্ন

ছেলেটার ঠিকানা ও টেলিফোন নাম্বার দিলে কিছু সাহায্য করতে পারি।

Syed Amirul Islsm
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৩:১২ অপরাহ্ন

শহিদ যারা হয়েছে তারা বেচে গেছে। যারা আহত, পঙ্গু, চক্ষুহীন হয়েছে তারােই বেশি বিপদে। তাই এদেরই বেশি সাহায্য, সহযোগিতা ও চাকরি দরকার

Mahmud Eusuf
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২:২৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের কতিথ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা যদি ভাতা পায় সরকারের উচিত ৫ই আগষ্টের আগে ও পরে আহতদের ও শহীদদের জন্য ভাতা চালু করা অনতিবিলম্বে।

জুয়েল
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:৩২ অপরাহ্ন

অতি দ্রুত সময়রে মধ্যে আরিফের পরিবারের জন্য আর্থিক সহযোগিতা, সরকারী চাকুরীসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা করার জন্য প্রেধান উপদেষ্টার নিকট জোর আহবান জানাচ্ছি। আরিফরা দেশর অহংকার, জাতির গর্ব েএদের প্রতি কোন অবহেলা জাতি দেখতে চাই না।

আমিনুর রহমান
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

এই যোদ্ধাকে সাহায্য করার বিনীত অনুরোধ করছি, বিপ্লবের এই মাহানায়করা যেন নিভৃতে না কাঁদে!

আছিফ
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৬:৫০ পূর্বাহ্ন

May Allah bless him.

Mohammed
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৬:৩২ পূর্বাহ্ন

আন্দোলনের নিহত-আহতরা জাতির সম্পদ।তাদের দেখভাল রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র সেটা জরুরি ভিত্তিতে করবে, এটাই আমরা আশা করি।

সৈয়দ নজরুল হুদা
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৬:২৫ পূর্বাহ্ন

প্রধান উপদেষ্টার অনুদান ১০০ কোটি টাকার সহয়তা ফান্ড থেকে তাকে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয় নাই নাকি। না দেয়া হয়ে থাকলে আর দেরি করা উচিত নয়। ল

A R Sarker
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৫:৩৮ পূর্বাহ্ন

সরকারি খরচে তাকে বিদেশে পাঠানো হোক। সে আর কতটুক চালাতে পারবে। সরকারের এ বিষয়টির উপর নজর দেওয়া দরকার। তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর জন্য সে কষ্ট পাবে কেন। সরকার তার জন্য এগিয়ে আসুক। সম্পূর্ণ বিরা খরচে তার ট্রিটমেন্ট করা হোক।

Anwarul Azam
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২:০৪ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status