খেলা
মধ্যাহ্নভোজে ক্রিকেটারদের বিসিবি’র কড়া বার্তা
‘বাংলাদেশ নামের চেয়ে বড় কোনো ক্রিকেটার নেই’
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৬ জুলাই ২০২২, মঙ্গলবার
বাংলাদেশ ক্রিকেটে হঠাৎ করেই নতুনের বিপ্লব। প্রায় সব ফরম্যাটেই ধীরে ধীরে সিনিয়র ক্রিকেটাররা জায়গা হারাচ্ছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজার পর বিদায়ের পথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। জিম্বাবুয়ে সফরে টাইগারদের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড যেন তারই রূপরেখা। ২৮ বছর বয়সী নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়ক করে দেয়া হয়েছে তারুণ্যে ঠাসা নয়া একটি দল। ব্যর্থতা, অন্তর্কোন্দল থেকে ক্রিকেটকে বের করে আনতে মরিয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সফরে যাওয়ার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘোষিত স্কোয়াড নিয়ে বিসিবি আয়োজন করে মধ্যাহ্নভোজের। সেখানে দলকে দেয়া হয় দিকনির্দেশনা ও ভবিষ্যতের বার্তা। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়, বাংলাদেশ দলের চেয়ে কোনো ক্রিকেটারের নাম বড় নয়। এ বিষয়ে সাবেক অধিনায়ক ও জাতীয় দলের পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আমি সবার আগেই বলেছি বাংলাদেশ ক্রিকেট গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, কোনো নাম, কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ না। আমরা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা ভালো খেলছি না। সময় এসেছে আমরা অন্য কিছু করতে পারি কিনা।’
তবে বাস্তবতাও জানেন খালেদ মাহমুদ। রাতারাতি যে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে উন্নতি সম্ভব নয় তা মেনেই তিনি বলেন, ‘অন্য কিছু করতে গেলে আপনি তো হঠাৎ করে তৈরি করতে পারবেন না। আপনি একটা জিনিস করতে পারেন স্বাধীনভাবে ক্রিকেট খেলে যদি ১৫০ এর বেশি স্কোর নিয়মিত করতে পারেন, তারপরে ভালো বোলিং, ফিল্ডিং করলে ম্যাচ জিতবেন। কিন্তু এই ১৫০ করাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে আমাদের জন্য।’ জিম্বাবুয়ে সফরের দুই দিনে কয়েকটি ধাপে দেশ ছাড়বে ক্রিকেটাররা। তার আগে রাজধানীর হোটেলে টিম ম্যানেজমেন্টের ও স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা সৌজন্য সাক্ষাত করে বিসিবি কর্তারা। টি-টোয়েন্টিতে টানা ব্যর্থতার বোঝা বয়ে বেড়ানো বাংলাদেশকে নতুনভাবে দেখতে চায় বিসিবি। যে কারণে জিম্বাবুয়ে সফরে মাহমুদুল্লাহকে সরিয়ে অধিনায়ক করা হয়েছে সোহানকে। বিশ্রামে রাখা হয়েছে মুশফিকুর রহীকেও। সাকিব ছুটিতে আর তামিম এই ফরম্যাটকে বিদায় বলেছেন। সিনিয়রদের বিশ্রাম দিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে থাকা দলকে নতুন রূপে দেখ চায় বিসিবি।
গতকাল ক্রিকেটারদের সঙ্গে বিসিবি’র আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল নতুন দিনের জন্য তাদের ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলার বার্তা দেয়া। এ বিষয়ে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘আমরা খেলোয়াড়দের মাথায় এটাই ঢোকাতে চাই যে দুই-তিনজন ভয়ডরহীন খেললে হবে না। পুরো দলকেই ভয়ডরহীন খেলতে হবে, বোধ বুদ্ধি দিয়ে খেলতে হবে। অনেকে বলে আমরা ছক্কা মারতে পারি না। আমি একদমই বিশ্বাস করি না কথাটা। আমাদের অনেক খেলোয়াড়ই অনেক বড় বড় ছক্কা মারতে পারে। এটা আসলে ৬ মারার খেলা না, এটা ইন্টিলিজেন্সির খেলা। আর সাহস, সাহস ছাড়া কোনো কিছুই নাই।’
সিনিয়র ক্রিকেটারদের সরিয়ে তরুণদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া যে এখন বাস্তবতা। এ বিষয়ে সুজন বলেন,‘কীভাবে আমরা খেলোয়াড়গুলো পাবো? বিপিএল এমন একটা জায়গা যেখানে এতো বিদেশি খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি থাকে যে অনেক খেলোয়াড়েরা তাদের পজিশন অনুসারে ব্যাটিং করতে পারে না। হয়তো দেখা যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ১০ ওভার বিদেশিরা বল করছে, আমাদের বোলাররা করতে পারছে না। আমরা আসলে কোথা থেকে খেলোয়াড় বের করে আনবো? তরুণদের তো সুযোগ দিতে হবে। এতো দিন যেহেতু সিনিয়র প্লেয়াররা খেলছে, জুনিয়ররা সেভাবে সুযোগ পাচ্ছিল না। হয়তো কোনো ম্যাচে খেলছে কোনো ম্যাচে খেলছে না।’
তবে সিনিয়দের অবদানকেও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই বিসিবির। মাশরাফি, সাকিবদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে এসেছে বড় পরিবর্তন। আধুনিক ক্রিকেটে তারাই বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে আলোকিত করেছেন। সুজন বলেন, ‘আমাদের চাওয়া তারা (সিনিয়র ক্রিকেটার) থাকা অবস্থায় যেন আরেকটা শক্তিশালী বাংলাদেশ দল তৈরি হয়। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। আবার আমি মনে করি তাদের এটা দায়িত্বও ওরা যেমন ছোট থেকে বড় হয়েছে জুনিয়রদের সে ব্যাটনটা দিয়ে বলবে যে এটাই সময় তোমরা হাতে নাও। এটা তো বলবে একদিন না একদিন। সে জন্য আমাদের নতুন কিছু খেলোয়াড় তৈরি করা। এগুলো আমাদের মাথায় ছিল, আশা করি জিম্বাবুয়েতে সফল একটা সফর হবে।’