নির্বাচিত কলাম
সংবিধান পর্যালোচনা
রাষ্ট্রপতির শপথে প্রধান বিচারপতির অনিবার্যতা
শহীদুল্লাহ ফরায়জী
(১ সপ্তাহ আগে) ২৮ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার, ৩:১১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:০০ পূর্বাহ্ন
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্টকে শপথ বাক্য পাঠ করান সেই দেশের প্রধান বিচারপতি। সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির দেশেও রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতির নিকট। এটা বিশ্বব্যাপী সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজ।
কিন্তু বাংলাদেশে এর ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। রাষ্ট্রের প্রধানের শপথ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে উপেক্ষা করা প্রকারান্তরে রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য বিনষ্ট করা। এতে সংবিধানের গভীর দার্শনিক ভিত্তি থেকে রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে- রাষ্ট্রপতি সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে প্রধান বিচারপতির নিকট শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, এটাই হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য সাংবিধানিক নির্দেশনা।
রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক এবং তিনি সংবিধানের অভিভাবকের কাছে শপথ বাক্য পাঠ করেন। তাই রাষ্ট্রপতির শপথ পাঠে প্রধান বিচারপতি অনিবার্য। যেহেতু রাষ্ট্রপ্রধান রূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করেন সেহেতু তাঁর শপথ রাষ্ট্রের অধীনস্থ তিন বিভাগের কোনো প্রধানের নিকট নয়, তিনি শপথ পাঠ করবেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির নিকট। এই অন্তর্নিহিত দর্শনের জন্যই প্রধান বিচারপতিকে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রধান বিচারপতির নিকট শপথ বাক্য পাঠ করার এই বাধ্যবাধকতা এবং মহিমান্বিত সাংবিধানিক মর্যাদা প্রজাতন্ত্রের কেউ বিনষ্ট করতে পারেন না, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তা করেছে।
সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইন বলবৎ করা হয়েছে, যা প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যের সাথে চরমভাবে সাংঘর্ষিক। এটা আইন ও বিচারবিভাগের প্রতি ছিলো আওয়ামী সরকারের অসম্ভব বিদ্বেষমূলক আচরণ প্রকাশের নজির— যা সাংবিধানিক ন্যায্যতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।
এর দর্শনগত দিক হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি শপথ নেবেন তাঁর কাছে— যিনি জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র এবং সংবিধান সুরক্ষার ঘোষিত ও অনবদ্য দায়িত্বে অতন্দ্র ভূমিকায়, সেই প্রধান বিচারপতির নিকট। প্রধান বিচারপতির এই মর্যাদা এবং সম্মানের মুকুট বিচারবিভাগের মর্যাদাকে উচ্চকিত করে।
আইনবিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার বাড়াবাড়িকে সংবিধানের আলোকে নিয়ন্ত্রণ করে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারে কেবল বিচারবিভাগ। প্রজাতন্ত্রে বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে নিশ্চিত করার জন্যই সুপ্রিম কোর্টকে সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং প্রধান বিচারপতিকে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সংবিধানবহির্ভূত যেকোনো বিধানকে অবৈধ ঘোষণা করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে। বিচারবিভাগের এই ক্ষমতাকেই সংবিধানের অভিভাবকত্বে উন্নীত করেছে। সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ার, ক্ষমতার ধরন এবং ব্যাপ্তি—যেকোনো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সমকক্ষ। রাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি— এটি মৌলিক এখতিয়ার।
রাষ্ট্রপতির শপথে যেহেতু উচ্চারিত হয়— ‘আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব, সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব’ সেহেতু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির নিকট শপথ বাক্য পাঠ করবেন, এর চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ কোনো বিকল্প হতে পারে না। প্রধান বিচারপতির এই মর্যাদা প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যের সাথে সম্পর্কিত। এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় চিরকালীন ও বিশ্বজনীন নীতি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শপথ নিয়েছেন রাষ্ট্রের একটি স্তম্ভ তথা জাতীয় সংসদের স্পিকারের নিকট, যিনি শপথ গ্রহণকারীর সংবিধান রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধানে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। এই বিধান কোনোভাবেই প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এমনকি মর্যাদাপূর্ণও নয়। এটা অগ্রহণযোগ্য। এতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি বরং বিঘ্নিত হয়েছে!
বাংলাদেশে দু’টি পদকে সংবিধান প্রজাতান্ত্রিক মর্যাদা দিয়েছে। পদ দু’টি হলো— ১. রাষ্ট্রপতি এবং ২. প্রধান বিচারপতি। (এই দু’জনের পদ এবং পদবির সাথে প্রজাতন্ত্রের নাম জড়িত রয়েছে) সংবিধানের ৪৮(১)-এ বলা হয়েছে— ‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকিবেন। যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত হইবেন। রাষ্ট্রপ্রধান রূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন।’ সংবিধানের ৯৪ (২)-এ বলা হয়েছে— ‘প্রধান বিচারপতি যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন।’
‘বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি’ এবং ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ সংবিধানে উল্লেখ করায় পদ দু’টিতে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। সুতরাং এই দু’টি পদ পরস্পরের দ্বারা পরিচালিত শপথে রাষ্ট্রের প্রতি অঙ্গীকারে আবদ্ধ হবেন— এটাই প্রজাতন্ত্রের জন্য ন্যায় সঙ্গত। প্রধান বিচারপতিকে ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ হিসেবে অভিহিত করার মাঝে প্রজাতন্ত্রের সুমহান উদ্দেশ্য ও অভিসন্ধি রয়েছে যা অনেকেই গভীরভাবে খতিয়ে দেখেন না বা যুক্তির কষ্টিপাথরে পরীক্ষা করতে পারেন না।
রাষ্ট্রপতির শপথ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালিত হবে, এই আইন সারা বিশ্বব্যাপী অনুসৃত নীতি। একে লঙ্ঘন করে একদিকে বিচার বিভাগের ক্ষমতার অবনমন করা হয়েছে, অন্যদিকে বিচার বিভাগের সক্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।
‘৭২ সালের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও প্রধান বিচারপতির মর্যাদা সুরক্ষার প্রশ্নে শপথ ও ঘোষণার তৃতীয় তফসিলে বলা হয়েছিলো— ‘রাষ্ট্রপতি, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের শপথ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালিত হইবে।’ এগুলো আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগের সাথে বিচারবিভাগের ভারসাম্যপূর্ণ নীতি, যা সংবিধান প্রণয়নের সময়ই চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত।
গণপরিষদ কর্তৃক ‘৭২ সালে গৃহীত সংবিধান আওয়ামী লীগ অতি দ্রুতই ছিন্নভিন্ন করে ফেলে এবং চেতনা ও দর্শন থেকে বিচ্যুত হয়ে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো রাতারাতি পরিবর্তন করে নেয়। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা তথা সংসদীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে— চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে। চতুর্থ সংশোধনীতে কোনো কারণ উল্লেখ বা ব্যাখ্যা ছাড়াই প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক অনেক ক্ষমতাকে বেআইনিভাবে কেড়ে নিয়ে বিচারবিভাগকে নির্বাহীবিভাগের অধীনস্থ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। চতুর্থ সংশোধনীর ১৪৮ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে— রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের শপথ বাক্য পাঠ করানো থেকে প্রধান বিচারপতিকে বাদ দেওয়া হয়। এটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পরিকল্পনার অংশ। পরবর্তীতে চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হলে তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়, কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীতে একদলীয় শাসনব্যবস্থার অধীন— শপথ ও ঘোষণার বিষয়টি আবার পুনর্হাল করা হয়। এতে পরোক্ষভাবে সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রতি গভীর অনুরাগ ও আনুগত্য প্রকাশ পায়, যা গত প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী সরকারের আচরণে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
স্বাধীন বাংলাদেশ-রাষ্ট্র নির্মাণ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু provisional constitutional order 1972-এর ভিত্তিতে আবু সাদাত মোহাম্মাদ সায়েমকে ‘প্রধান বিচারপতি’ নিয়োগ করেন। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে শপথ পাঠ করান এবং এর পরপরই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর সাময়িক সংবিধান আদেশের ৮ নং ধারা বলে আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করা হয়। অতঃপর প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এটাই আমাদের ঐতিহ্য।
সামসময়িক কালের রাষ্ট্রপতির শপথ নিয়ে কয়েকটা দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি।
ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। সংসদের সেন্ট্রাল হলে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা (NV Ramana)।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারি দেশটির ১৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) কাজী ফয়েজ ঈসা ইসলামাবাদের আইওয়ান-ই-সদরে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান।
মালদ্বীপের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন ড. মোহাম্মদ মুইজ্জু। তিনি মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রের অষ্টম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিলেন। রিপাবলিক স্কয়ারে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে নতুন রাষ্ট্রপতি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ লতিফ শপথ নেন। শপথ পরিচালনা করেন প্রধান বিচারপতি আহমেদ মুতাসিম আদনান।
নেপালের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন নেপালি কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা রাম চন্দ্র পাউদেল। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হরি কৃষ্ণ কার্কি তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিবিদ থারমান শানমুগারত্নম (Tharman Shanmugaratnam) সিঙ্গাপুরের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন । তিনি সিঙ্গাপুরের নবম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধান বিচারপতি সুন্দরেশ মেনন ১৫৪ বছরের পুরনো ইস্তানা প্রাসাদে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে থারমানকে শপথবাক্য পাঠ করান।
জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস তাঁর শপথ পরিচালনা করেছিলেন।
উপমহাদেশে ভারত এবং পাকিস্তানে ৭৫ বছর যাবত রাষ্ট্রপতিগণ শপথ নিচ্ছেন প্রধান বিচারপতিগণের নিকট।
কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবনে নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর পূর্বে ২০তম এবং ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আব্দুল হামিদ স্পিকারের নিকট শপথ নিয়েছেন।
এটা একটি বিরল ঘটনা। প্রজাতন্ত্রের প্রধান ব্যক্তি অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি শপথ নিবেন প্রজাতন্ত্রের প্রধান বিচারপতির নিকট এটাই আইনগত, দর্শনগত এবং নৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। তা-ই সংবিধানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও গতিপথের সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণেই ১৯৭২ সালের সংবিধান তা নিশ্চিত করেছিলো। সংবিধানের সৌধ এভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে। সৌধের ভিত্তিমূলে রয়েছে প্রধান বিচারপতি বা বিচারবিভাগের অবস্থান।
কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো পর্যালোচনা ছাড়া, কোনো কারণ ছাড়া, মনগড়া ও খেয়াল-খুশিমতো প্রধান বিচারপতির পরিবর্তে স্পিকারের নিকট রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণে পদক্ষেপ নিয়েছিলো। এই ধরনের রাষ্ট্রীয় পদের শপথ পরিচালনা থেকে প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করা— মারাত্মক আত্মঘাতী পদক্ষেপ।
রাষ্ট্রপতি এবং প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহের সর্বাধিনায়ককে শপথবাক্য পাঠ করাবেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। এর মধ্য দিয়েও প্রজাতান্ত্রিকতার বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয় এবং সুরক্ষিত হয়। শাসনবিভাগের সাথে বিচারবিভাগের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা না হলে প্রজাতন্ত্রের চরিত্র ক্ষুণ্ন হয়। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার সংবিধানের ক্ষমতা-কাঠামোকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে বিচারবিভাগকে গুরুত্বহীন করার আয়োজন করেছিলো। রাষ্ট্রপতির শপথ পাঠ— প্রধান বিচারপতির নিকট থেকে স্থানান্তর করা এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা। এতে প্রধান বিচারপতি এবং বিচারবিভাগের মর্যাদা বিপজ্জনকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী চরিত্র প্রকাশিত হয়েছে; প্রজাতন্ত্রের নয়।
বিচারবিভাগ হলো রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ, যা নাগরিকদের অধিকার ও সংবিধানের মর্যাদা রক্ষা করে। বিচারবিভাগের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা, খর্ব করা বা কলুষিত করার অর্থ হলো— রাষ্ট্র ধ্বংসের পথ উন্মুক্ত করা।
রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিকে প্রজাতন্ত্র— যে ‘সম্মানসূচক মুকুট’ দিয়ে ছিলো তা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে কেড়ে নিয়েছে। এটা বিচারবিভাগের ক্ষমতা ও মর্যাদার উপর অন্যায়-আঘাত।
১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এবং চরিত্র যতোটুকু সুরক্ষা দেয়া হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ অতি দ্রুত তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ নামক প্রজাতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ নামক দলটি কীভাবে দেখতে চায়— তার প্রতিফলন ঘটেছে তাদের আনীত সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীতে। রাষ্ট্রপতির শপথ স্পিকারের নিকট; এমন দেশ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর ।
বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশসমূহের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধারে— রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের শপথ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক পরিচালিত হবে, এ বিধান বাংলাদেশে আবার চালু বা পুনর্বহাল করতে হবে।
প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক ও শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকাশের স্বার্থেই তা করা প্রয়োজন।
লেখক: গীতিকবি ও সংবিধান বিশ্লেষক
[email protected]
Well written.
জনাব শহীদুল্লাহ ফরায়জীর চমৎকার এ লিখাটির জন্য মোবারকবাদ জানাই। এতে নাগরিকদের জন্য যেমন চিন্তার খোরাক রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। আশা করি সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
জনাব শহীদুল্লাহ ফরায়জীকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি অতি চমৎকার একটা লিখার জন্য। এতে যেমন নাগরিকদের জন্য চিন্তার খোরাক রয়েছে এবং নী
আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, এবং এটি বাস্তবায়ন চাই
এটা পরিষ্কার করলেন এতদিন পর! তার মানে এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতিকে আপনারা বদলাতে পারছেন না কারণ স্পিকার নাই। তাই এইসব নয় ছয় আর্টিকেল দ্বারা যেটা বুঝাতে চাচ্ছেন সেটা পাবলিক বুঝে গেছে। ভিন্ন দেশ বাদ দিয়ে নিজ দেশের সংবিধান মেনে চলুন। যদি বদলাতে হয় তাহলে নির্বাচনের পর জন প্রতিনিধিদের দ্বারা বদলান। জনগণ শুধু আপনারাই আর আপনাদের বাইরে যারা আছেন উনারা নন?
স্যার আপনার বক্তব্যকে সমর্থন পোষণ করছি,আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে অবৈধ রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে বরখাস্ত করে,রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে চয়েস করে,এবং তাকে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক সপথবাক্য পাঠকরানোর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হোক এটা আমাদের ঈমানি দাবি ।