নির্বাচিত কলাম
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ
চাকরিতে থেকে ওসব করার সুযোগ নেই
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বীরউত্তম
১৮ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবারএকজন নিম্নস্তরের সরকারি কর্মকর্তা সরকারি কর্মে বহাল থেকে কোনোমতেই একজন স্বাধীন নাগরিকের মতো মতামত ব্যক্ত করতে পারে না। ভদ্র মহিলা তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি তাই করেছেন। চাকরির শর্ত অনুসারে তিনি বিরোধিতা তো নয়ই, তার সমর্থনেরও কোনো সুযোগ নেই। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পতনের কাউন্টডাউন শুরু করেছেন। একেবারে নিম্ন পদে প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তার যদি এ মনোভাব হয় তাহলে তিনি যখন বড় হবেন, উচ্চ পদে যাবেন তখন তো সবকিছু গ্রাস করে ফেলবেন। তিনি পতনের কাউন্টডাউন বলে যেমন ভালো করেননি, ঠিক তেমনি শতকণ্ঠে অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করলেও সেটা ভালো হতো না। চাকরিতে থেকে তার ওসব করার কোনো সুযোগ নেই।
নির্বিঘ্নে নিরাপদে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় পরম প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রায় আড়াই মাস পার হতে চলেছে। এখনো রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক জায়গায় তেমন মেরামত হয়নি। আবার কোনো কোনো জায়গায় অতি পণ্ডিতিও চলছে। এটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হবে কিনা ঠিক নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না। তবে জিনিসটা খুবই খারাপ এবং গর্হিতকর। একজন নিম্নস্তরের সরকারি কর্মকর্তা সরকারি কর্মে বহাল থেকে কোনোমতেই একজন স্বাধীন নাগরিকের মতো মতামত ব্যক্ত করতে পারে না। ভদ্র মহিলা তাপসী তাবাসসুম উর্মি তাই করেছেন। চাকরির শর্ত অনুসারে তিনি বিরোধিতা তো নয়ই, তার সমর্থনেরও কোনো সুযোগ নেই। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পতনের কাউন্টডাউন শুরু করেছেন। একেবারে নিম্ন পদে প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তার যদি এ মনোভাব হয় তাহলে তিনি যখন বড় হবেন উচ্চ পদে যাবেন তখন তো সবকিছু গ্রাস করে ফেলবেন। তিনি পতনের কাউন্টডাউন বলে যেমন ভালো করেননি, ঠিক তেমনি শতকণ্ঠে অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করলেও সেটা ভালো হতো না। চাকরিতে থেকে তার ওসব করার কোনো সুযোগ নেই। এই মহিলাই আন্দোলন চলার সময় বর্তমান সময়ের সবচাইতে আলোচিত ব্যক্তি আবু সাঈদকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলেছেন। আবু সাঈদের যে কর্মকাণ্ড সেটাকে কোনোক্রমেই সমাজদ্রোহী, রাষ্ট্রদ্রোহী এসব ভাবার উপায় নেই। তার কর্মই তাকে মহান করে তুলেছে।
আমরা কতো জায়গায় কতো সময় শিনা টান করে দাঁড়াই। কিন্তু ওইরকম অবস্থায় তার শিনা টান করে দাঁড়ানো বাঙালিকে, বাঙালি জাতিকে, বাংলাদেশকে কতোটা মর্যাদার আসন দিয়েছে তা এই ধরনের ক্ষয়িষ্ণু মনোবৃত্তির কারও পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব না। তাই তিনি বিষয়টা অনুভব করতে পারেননি। হ্যাঁ, সত্যিই কিছুটা অক্ষর জ্ঞান অর্জন করেছেন। কালো অক্ষর হৃদয়ে ধারণ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার মর্মবাণী তাকে স্পর্শ করেনি। তাই অমনটা করেছেন। তার সবলতা সাহসিকতার জন্যে ইতিমধ্যেই কেউ কেউ সাবাসী দিয়েছেন। সাবাসী দেয়া সহজ। ন্যায় ও সত্য বিচার করে বের করা সাবাসীর মতো সহজ নয়। এর আগেও বলেছি, গোলাম মওলা রনি একজন পাঠক সমাদ্রিত লেখক, শ্রোতাদের আকুল করা একজন বক্তা বা আলোচক। তিনি খুব সহজেই উর্মিকে সমর্থন করেছেন, সাবাসী দিয়েছেন। বহু বছর আগে তিনি একবার লিখেছিলেন, দিল্লিতে শেখ হাসিনা মোটা চালের ভাত খেয়ে পয়সা বাঁচিয়ে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্যে আমাদের নেতা আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের হাতে তুলে দিতেন। সেই লেখা পড়ে লিখেছিলাম, তখন আমিও ইল্লি-দিল্লি করতাম। মাসে অন্তত এক-দু’বার যেতাম। দিল্লি থাকলে দিনে একবেলা ডি/১৬ পান্ডারা রোডের বাড়িতে অবশ্য অবশ্যই খাওয়া হতো। বোনের বাড়িতে সব মিলিয়ে মাসে চাল লাগতো ২০-২৫ কেজি। তখন চালের দাম ছিল ৩- সাড়ে ৩ টাকা। আর দিল্লিতে চালের তেমন মোটা চিকন ছিল না। সাড়ে ৩ টাকা চিকন চাল হলে মোটা চালের দাম হতো ৩ টাকা। শুধু যদি মাননীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোটা চালের ভাত খেয়ে টাকা বাঁচাতেন তাহলে ৬-৭ কেজি চালের ৩-৪ টাকা বাঁচতো। সঙ্গে এও লিখেছিলেন, পুরান শাড়ি সেলাই করে নেত্রী শেখ হাসিনা তখন পড়েছেন। এর একটি কথাও বাস্তবচিত ছিল না। তিনি একদিনের জন্যেও কোনো ছেড়া শাড়ি সেলাই করে পড়েননি। পশ্চিমবঙ্গের ফুলিয়া এবং সমুদ্রগড় বলে দু’টি জায়গায় টাঙ্গাইলের প্রায় ৪০-৫০ হাজার তাঁতী বাস করে। তারা সারা ভারতে তাদের উৎপাদিত শাড়ি টাঙ্গাইল শাড়ি বলে চালিয়ে থাকে। টাঙ্গাইলের জগদীশ বলে এক বসাক হঠাৎই সমুদ্রগড় গিয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যতে ভালো উন্নতি করেছে। ফুলিয়া ও সমুদ্রগড়ের যত রকমের শাড়ি আছে সে আমার কাছে নিয়ে আসতো। এখন হয়তো অতটা মান-মর্যাদা আছে কিনা বলতে পারবো না। কিন্তু তখন টাঙ্গাইলের যে কেউ আমাকে তাদের গুরুজন মুরুব্বি বলে মনে করতো। তাই জগদীশের দেয়া যে শাড়ি আমি মাননীয় নেত্রীর জন্যে নিয়ে গেছি সেগুলোই হয়তো তার দুইবার পড়তে হয়নি। আশেপাশের বাড়িতে যেসব বউরা থাকতেন তাদের একজন মহিলাও ছিলেন না যাকে শেখ হাসিনা কোনো না কোনো সময় শাড়ি দেননি। যেখানে থাকতেন সেই পান্ডারা রোডের আশেপাশে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব মর্যাদার অফিসাররা থাকতেন। আমি যে কাকা নগরে থাকতাম তার আশেপাশে সচিবরা থাকতেন। নেত্রীর বাড়ির এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এমন কোনো কর্মকর্তার স্ত্রী ছিলেন না যে শেখ হাসিনার কাছ থেকে ২-৪টা শাড়ি পাননি। তা যাইহোক গোলাম মওলা রনিকে আমি অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখি। তিনি কেন কোন উদ্দেশ্যে উর্মির রাষ্ট্র বিরোধী, সমাজ বিরোধী, মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের মধ্যে ভালো কিছু খুঁজে পেয়েছেন তা তিনিই জানেন।
অন্যদিকে আমার হৃদয় স্পর্শ করা ব্যক্তিত্ব জেড আই খান পান্না, তিনিও উর্মিকে খুব সাবাসী দিয়েছেন, তার সাহসী পরিচয় খুঁজেছেন। খুঁজতে পারেন। কিন্তু এই বিষয়ে আমি তার কোনো সাহসিকতার, নৈতিকতার স্পর্শও খুঁজে পাচ্ছি না। হ্যাঁ, তিনি পদত্যাগ করে এই বক্তব্য দিলে হয়তো আমিও তার পাশে দাঁড়াতাম। কিন্তু অধ্যাপক ইউনুসের পতন, অধ্যাপক ইউনুস বৈধ, না অবৈধ এই প্রশ্ন করার সুযোগ একজন একেবারে নিম্ন পদস্থ সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তার অধিকারে পড়ে না। ঘুরাফেরা না করে এক কথায় বিচার করলে বলতেই হবে সাধারণ মানুষের সম্মতিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চাইতে বৈধ কোনো প্রশাসন হতে পারে না। এ রকম বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের পর বিপ্লব যা নির্দেশ করে সেটাই বৈধ। সেই অর্থে বরং গত ৩ বার জালিয়াতি করে হাসিনা লীগ নেত্রী যে ক্ষমতায় বসেছিলেন তার ক্ষমতাই ছিল অবৈধ। তাই এটা বলতেই হবে তাপসী তাবাসসুম উর্মিকে এ ঔদ্ধতের জন্যে যথাযথ আইনের সামনে দাঁড় করা না হলে জাতির জন্যে দেশের জন্যে মারাত্মক অশুভ হবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিশেষ করে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ, বিষয়টি একেবারে নিরাসক্তভাবে দেখে যথাযথ বিচার করা। অন্যদিকে জেড আই খান পান্নার প্রতিও অনুরোধ থাকবে বিষয়টা আরেকটু ভালো করে দেখবেন, বিবেচনা করবেন।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ঢাকার যাত্রীদের জন্যে সবচাইতে আরাধ্য পরিবহন মেট্রোরেলের যে ক্ষতি হয়েছিল ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জারজার হয়ে কেঁদেছিলেন। আন্দোলনে নিহত একজনকেও তিনি দেখতে যাননি। যেহেতু দেখতে যাননি সেইহেতু কান্নাকাটিরও কোনো প্রশ্ন আসে না। কিন্তু মেট্রোরেলের ধ্বংসাবশেষ দেখে তিনি আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন। তার কান্না সঠিক হলে নোবেল পুরস্কার দেয়া যেতে পারতো। কিন্তু কুমিরের কান্না হলে সেসব করার সুযোগ কোথায়? মেট্রোরেলের ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে হাসিনা সরকার বেশ কয়েকটি কথা বলেছিল। এক. স্টেশন দুটো চালু করতে বছরের উপর সময় লাগবে। তাদের সেই ভবিষ্যত বাণী ব্যর্থ করে দিয়ে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচে ২০ দিনের মধ্যে প্রথম স্টেশনটি চালু করা হয়েছিল। দ্বিতীয়টি ৮০-৯০ দিনের মধ্যে এক কোটি পঁচিশ লাখ টাকা খরচ করে চালু করা হলো। বিগত সরকারের ৫০০-৭০০ কোটির জায়গায় যদি এই সামান্য টাকায় এখান ওখান থেকে এটা ওটা এনে স্টেশন চালু করা হয়েছে। যেখানে মেট্রোরেল চালু করতে শেখ হাসিনা সরকার ৫শ’-৭শ’ কোটি টাকা খরচের কথা বলেছিল সেখানে ২-৪ কোটিতে কাজটি হলো। তাহলে এতগুলো বছর এই যে উন্নয়নের নামে অতিরিক্ত টাকা খরচ করা হয়েছে এ টাকা কার? আমাদের যে ঋণের বোঝায় জর্জরিত করা হয়েছে এর জবাব কে দেবে? এইতো ২-৩ মাস আগে আমার এলাকায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ব্যাংক থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছিল, সময়মতো দিতে পারেনি ব্যাংক তার নামে ডিক্রী করে তাকে জেলে পুরেছিল। রাষ্ট্রের এই যে বেসুমার অর্থ লোপাট হলো এসবের কি কোনো বিচার হবে না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু এসব ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি।
বিগত সরকারের সমর্থক শত শত নেতাকর্মী এমপি মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তারা কিন্তু কেউ তহবিল তসরূপ অথবা সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হননি। সব অভিযোগ দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন-খারাবি, খুনের সঙ্গে জড়িত থাকা বা দাঙ্গায় হুকুম দেয়া। সেদিন প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং বিমানমন্ত্রী ফারুক খান গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফারুক খান কেমন রাজা-বাদশার সন্তান ছিলেন জানি না। কিন্তু ড. আব্দুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর খুবই সাধারণ একজন যোদ্ধা ছিলেন। বাবা মরে যাওয়ায় নানার বাড়ি মানুষ। নাইন-টেনে পড়ার সময় কোনো এক সভায় লতিফ ভাইয়ের সঙ্গে তার পরিচয়। আমরা আমাদের কর্মীদের সব সময় টেনে তোলার চেষ্টা করতাম। লতিফ ভাই সেই থেকে তার পড়ার জন্যে একজন পিতা, একজন সন্তানের জন্যে যা করে তিনি তা করেছেন। স্বাধীনতার পর রাজ্জাক যতবার টাঙ্গাইল গেছে আমি ইনভেলাপে ভরে যা দিয়েছি প্রতিবার টাঙ্গাইল শহরে রাজ্জাক ইচ্ছে করলে একটা করে বাড়ি কিনতে পারতো। কারণ ’৪৮ সালে আমাদের টাঙ্গাইলে আকুরটাকুর পাড়ার প্রথম বাড়ি ৮০১ টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। তারপর পুব-পশ্চিমে, উত্তর-দক্ষিণে আরও ৭০-৮০ ডিসিমেল জায়গা কিনেছিলেন। আমার জানামতে বাবা মরে যাওয়ায় দুইজন নানার বাড়িতে মানুষ। তার একজন ড. আব্দুর রাজ্জাক মধুপুর-ধনবাড়ি, অন্যজন এইচটি ইমাম বাসাইলের সুন্না। বাবা মারা গেলে মা চলে গিয়েছিলেন উল্লাপাড়া বাবার বাড়ি। সেখানে এইচটি ইমাম নানার বাড়িতে মানুষ। আমি যা দেখেছি দু’জনের চাল-চলন আচার-ব্যাবহার প্রায় একই রকম।
কই থেকে আনেন যে ডিগবাজি লোকগুলোরে।