ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

আমতলীতে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণ, লাপাত্তা ঠিকাদার

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
১৬ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার
mzamin

বরগুনার আমতলী উপজেলার গাজীপুর খালের উপর সোয়া ৪ কোটি টাকার ১৯ মাসের সেতুর কাজ ৫ বছর ধরে ফেলে রেখে ঠিকাদার লাপাত্তা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের অধিকাংশ টাকা তুলে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অসমাপ্ত অবস্থায় সেতুর কাজ এভাবে বছরের পর বছর পড়ে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, উপজেলার আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজার সংলগ্ন গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার পূর্ব পাশে গাজীপুর খালের উপর ২০১৯ সালে ৪  কোটি ২৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৬৮ টাকা ব্যয়ে ৪৮ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৭ মিটার প্রস্থের একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি কার্যালয়। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায় পটুয়াখালীর মেসার্স আবুল কালাম আজাদ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি কাজটি বিক্রি করেন পটুয়াখালীর আরেক ঠিকাদার তানভির আহম্মেদ দিপু নামের একজনের নিকট। কাজটির নির্মাণ সময় ধরা হয় ১লা জানুয়ারি ২০১৯ সাল থেকে ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত। ১৯ মাসে কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার গাফিলতি করে ৫ বছরেও শেষ করেনি। কাজটির ধীরগতির কারণে এ পর্যন্ত দু’দফা সময় বাড়িয়েছেন। সর্বশেষ গত জুন ২০২৪ সালে শেষ করার কথা। এর পর তিনি আর সময় না বাড়িয়ে কাজটি ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। কাজটি ফেলে রাখায় বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর ঠিকাদারকে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করা হয়। এবং নোটিশে ৭দিনের সময় বেঁধে দিয়ে কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়। কিন্তু এ চিঠি প্রদানের সময় অতিবাহিত হলেও ঠিকাদার কোনো সাড়া দেয়নি।
অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার দুই পাড়ের এপার্টমেন্টাল, দু’টি পিলার ও ১টি স্লাবের কাজ করে বরাদ্দের অধিকাংশ ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৮ টাকা তুলে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, সেতু নির্মাণে ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। সেতুতে নিম্ন মানের খোয়া, রড এবং পরিমাণের চেয়ে কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। গাজীপুর খালের পূর্ব পাড়ে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিম সোনাখালী গ্রাম। পশ্চিম পাড়ে গাজীপুর গ্রাম। 
পশ্চিপাড়ে সেতু নির্মাণস্থলের মাত্র ২০ ফুট দূরত্বে গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা। পূর্বপাড় থেকে প্রতিদিন আড়াইশ’ শিক্ষার্থী গাজীপুর বন্দর ঘুরে মাদ্রাসায় আসে। সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগে এখানে একটি লোহার সেতু ছিল। নতুন সেতু নির্মাণের সময় ওই সেতুটিও ভেঙে ফেলা হয়। ফলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের আড়াই থেকে ৩ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে অনেক কষ্ট হয়। কষ্টের কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন আর নিয়মিত মাদ্রাসায় আসে না। গাজীপুর সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন সেতু নির্মাণের জন্য পুরাতন লোহার সেতুটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন নতুন সেতুর নির্মাণকাজও ৫ বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। এতে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী আসা কমে গেছে। দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য দাবি জানাই। সাব-ঠিকাদার তানভির আহম্মেদ দীপু বলেন, আমি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি ২-৩ মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করবো। কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, যথাযথভাবে কাজ করা হচ্ছে। মূল ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজটি চুক্তি করে অন্য এক ঠিকাদারের নিকট বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। তিনি কেন এখনো কাজটি সম্পন্ন করেননি তা তিনি জানেন না। উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ঠিকাদারকে শোকজ করা হয়েছে। এবং কাজ বাতিলের জন্য বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট আবেদন করা হয়েছে। বরগুনার নির্বাহী প্রেকৌশলী মো. মেহেদী হাসান খান বলেন, সেতুর কাজ না করে ফেলে রাখায় ঠিকাদারকে শোকজ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার কোনো সাড়া না পাওয়ায় তার কার্যাদেশ বাতিল কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী টাকা দেয়া হয়েছে। কাজের চেয়ে বেশি টাকা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

পাঠকের মতামত

Why engineer will not punished

Khairul
১৬ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, ৭:০৮ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status