খেলা
পিটিআই’র বিশেষ প্রতিনিধির চোখে
ভয় ঝেড়ে ফেললেই বদলে যাবে বাংলাদেশ
ইশতিয়াক পারভেজ, ভারত থেকে
১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবারদিল্লির প্রেসবক্সে ঢুকতেই দেখা ভারতের সংবাদ সংস্থার বিশেষ প্রতিনিধি কুশান সরকারের সঙ্গে। খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানালেন দিল্লির যে পিচ বাংলাদেশ ঠিকঠাক মতো খেলতে পারলেই জিতে যাবে। কিন্তু ম্যাচ শেষ হতেই ভীষণ হতাশ তিনি। বললেন- সেই একই রোগটা এখনো গেল না বাংলাদেশের। কী রোগ টাইগারদের! ব্যাটিং ব্যর্থতা? কিছুক্ষণ চুপ থেকে কুশান বলতে শুরু করলেন, ‘না! ব্যাটিং, বোলিং এটি পার্ট অব গেম। খারাপ ভালো হতেই পারে। ভারতের যে হয় না তাও না। আমি অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশকে ফলো করি। তারা আসলে ফেয়ারলেস ক্রিকেটই খেলতে পারে না। আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভয় বা হেজিটেশন নিয়ে খেললে চলে না। এখন পাওয়ার প্লেতে ৬০ এমনকি ৮০ রানও করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের ওপেনিং আর ফিনিশিং দুই জায়গাতেই যেন জড়তা, ভয়। ২০০৭ যখন শুরুর যে সময়টা আর এখনকার যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তা একেবারেই ভিন্ন। খেলার গ্রামারটা বদলেছে কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে পরিবর্তন আনেনি। আমার মনে হয় ফেয়ারলেস ক্রিকেট খেলতে পারলেই বদলে যাবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ওপেনিংয়ে প্রয়োজন মারমার কাট কাট মানের একজন ব্যাটার। আর দরকার একজন ফিনিশার সেটি আবার মাহমুদউল্লাহর মতো নয়।’
সাকিবকে বলা হয় বিশ্বে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিজ্ঞাপন। আর মুশফিককে এখনো ভাবা হয় ব্যাটিং ভরসা। আর বেশ অনেকদিন থেকেই এই ফরম্যাটে মাহশুদউল্লাহ ফিনিশারের তকমা গায়ে লেগে আছেন। এমনকি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর টি-টোয়েন্টি যোগ্যতা নিয়েও আছে প্রশ্ন! কুশান মনে করেন তারা আসলে বাংলাদেশের জন্য সত্যিকারের টি-টোয়েন্টি ম্যাটেরিয়ালই নয়। তিনি বলেন, ‘মুশফিক এখন খেলছেন না ঠিক আছে কিন্তু খেলতো। কিন্তু ওকে আমার কখনোই মনে হয়নি প্রপার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার। ও আসলে একেবারে খাঁটি টেস্ট ক্রিকেটার। সাকিবের শুরুটা দারুণ ছিল- অল্প রান দিয়ে ৩ বা চার উইকেট নিয়ে নিতো। আবার কর্যকর কিছু রানও করে দিতো। দেখো ধীরে ধীরে কিন্তু ওর আইপিএল’র ভ্যালুটা কমতে শুরু করে। প্রথম একাদশে জায়গা পেতো না। এখনতো দলই পায় না। এর কারণটা হলো ওর ব্যাটিংটা আর এখানে চলছে না। আর বাঁহাতি স্পিনটাও এখানে ব্যাটার খেলে দিচ্ছিল। এখন যে আরেকটা সমস্যা সেটি হচ্ছে- অধিনায়ক। তাকে দেখেও আমার মনে হচ্ছে না সে এই ফরম্যাটের জন্য। কিছুই করার নেই অধিনায়ক হিসেবে অটোচয়েস দলে জায়গা করে নিচ্ছে। আমার মনে হয় শান্তকে টেস্ট ও ওয়ানডেতেই বেশি ফোকাস করা উচিত। আর মাহমুদউল্লাহতো সত্যিকার অর্থে কোনো ফিনিশার নয়। তাই বলে যে দলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার নেই তাও বলছি না। লিটন দাস ছেলেটাকে মনে হয় যে সে সত্যিকার অর্থেই এই ফরম্যাটের ক্রিকেটার। ধারাবাহিক হলে ওর মতো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর মোস্তাফিজুর রহমানতো অসাধারণ। যাকে নিয়ে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো অধিনায়ক ভাবে তার খোঁজ খবর রাখে তার মধ্যে যে অনেক কিছু আছে তা মুখে না বললেও হবে।’
অন্যদিকে ভারতের টি-টোয়েন্টি লীগ আইপিএল-এ এখনো উপেক্ষিত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে যারা সেরা পারফরর্মার তারা তো সুযোগ পান না। এমনকি জাতীয় দলের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে হাতেগোনা দুই-একজনকেই এখন পর্যন্ত আইপিএল’র মতো আসরে দেখা গেছে। এর নেপথ্যের কারণটা আসলে কি? কুশান মনে করেন, ‘দেখো ২০০৭-এ যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছিল তখনকার এই ফরম্যাট আর এখন এক নয়। আমার কাছে মনে হয়েছে শুরুতে তারা এই ফরম্যাটকে সিরিয়াসলি নেয়নি। পাওয়ার প্লেতে এখন ১২০ রানও হয়। এই দিল্লির অরুণ জেটলির মাঠে আইপিএল-এ এমনটা হয়েছে পাওয়ার প্লে’তে। আমি যে কথাটা বলছি সেটি বড়াই করা হচ্ছে- এটা ভেবো না। ক’টা বাংলাদেশি ছেলে টি-টোয়েন্টি খেলছে বা যারা খেলছে তারা কতটা মূল্যায়িত হচ্ছে। ভেবে দেখো টি-টোয়েন্টিতে তোমরা কোথায় আছ! মিচেল স্টার্ককে ২৫ কোটি রুপিতে নিচ্ছে। প্যাট কামিন্স ২০ কোটি টাকা পাচ্ছে এমনকি স্যামকরোনকে ১৮ কোটি দেয়া হয়। তাহলে তাসকিনকে কেন ২ দুই কোটি টাকাতেও নেয়া হচ্ছে! তানজিম সাকিব যে ছেলেটা বিশ্বকাপে এত দারুণ বল করলো সে কেন দল পায় না? এটাই ভেবে দেখার বিষয়। যেটা আমি বলতে চাচ্ছি ভয়ডরহীন ক্রিকেট মানে মাঠে যাও নিজেদেরকে এক্সপ্রেস করো। আমরা প্রথম দু’টি ম্যাচেই দেখেছি ভয় পেয়ে পেয়ে খেলছে। সেই ক্রিকেটই বাংলাদেশ খেলতে পারছে না। আর এইজন্যই কিন্তু পিছিয়ে পড়ছে। আইপিএল-এ দল পাচ্ছে না, এমনকি নিজেদের জায়গাতেও উন্নতি করতে পারছে না।’ ভারতে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। যেখানে তার কোনো প্রতিযোগিতাই গড়ে তুলতে পারেনি। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে প্রত্যাশার বেলুন নিয়ে ভারতে এসেছিল টাইগাররা। কিন্তু সেই বেলুন চুপসে গেছে লজ্জার হারে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দু’টিতে চোখে পড়েছে নিদারুণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। কুশান মনে করেন টেস্টেও ভয় আর চাপ কাজ করে টাইগারদের মধ্যে। এইজন্যই মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মতো ধৈর্য্য আর সাহস দেখাতে পারে না টাইগাররা। সেটির কারণেই কানপুরে শেষ দুইদিন খেলার সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে ম্যাচ জিতে নিয়েছে ভারত।