বাংলারজমিন
ওরা জানে না ওদের নামে চাল বরাদ্দ
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
৫ অক্টোবর ২০২৪, শনিবারজয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে দুস্থদের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। চাল বিতরণের তালিকায় নাম থাকলেও চাল পাননি অনেক উপকারভোগী। এ ইউনিয়নের ১৯ জন উপকারভোগীর নামে বরাদ্দের ২৪ মাসের মধ্যে ১৮ মাস চাল উত্তোলন করেছে চেয়ারম্যান নিজেই। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের চাল বিতরণ করতে গিয়ে এসব উপকারভোগী ইউনিয়ন পরিষদে চাল নিতে না আসায় এমন রহস্য বের হয়ে আসে। ইউপি সদস্যরা বলছেন, শুধু ১৯ জনই না, তালিকা ধরে খোঁজ নিলে আরও অনেকেরই নাম বের হয়ে আসবে।
ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জানা যায়, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জেলার বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি হন চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী। মামলার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম। ভিজিডি’র কার্ডধারী হত দরিদ্রদের গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বরাদ্দের চাল আসে ইউনিয়ন পরিষদে। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে কার্ডধারী ৪২৯ জন উপকারভোগীকে প্রতি মাসের ৩০ কেজি করে চাল নিতে ইউনিয়ন কার্যালয়ে আসতে বলা হয়। এদের মধ্যে ১৯ জনের চাল গত এক মাসে কেউ নিতে আসেননি। গত দুই মাসের ১৯ জনের মোট ৩৮ বস্তা চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে মজুত থাকতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগী, ইউপি সদস্য ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই মাস ধরে বিতরণ না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে ১৯ জন দুস্থ’র মোট ৩৮ বস্তা চাল মজুত রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের পক্ষে তালিকা ধরে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলা হয়। ১৩ জন কার্ডধারীর সন্ধান পেয়েছেন তারা। ৬ জনের সন্ধান এখনো পাননি। তবে যাদের সন্ধান পেয়েছেন তারা বরাদ্দের বিষয়ে গত ১৮ মাস ধরে কিছুই জানেন না। তালিকায় নাম আছে কিন্তু ১৮ মাস ধরে চাল পাননি ভুক্তভোগী দূর্গাপুর-বহুতী গ্রামের বাসিন্দা মোছা. মাহমুদা। তিনি বলেন, আমিতো চালের বিষয়ে কিছুই জানি না। কয়েকদিন আগে লোকজন এসে বলেছে, তোমার চাল গুদামে আছে, তুমি কেন নিয়ে আসোনি। আমি তাদের বলেছি কিসের চাল, আর আমি কেন চাল নিয়ে আসবো। পরে সবকিছু বুঝিয়ে বললে আমি তাদের বলেছি, চাল দিলে গত ১৮ মাসসহ দিতে হবে। আরেক ভুক্তভোগী মান্দাই গ্রামের মোছা. দেলোয়ারা বলেন, চাল বরাদ্দ হয়েছে আমাদের মতো গরিবের নামে, আর সেই চাল গত ১৮ মাস ধরে বিক্রি করে খাচ্ছেন চেয়ারম্যান নিজেই। কথায় বলে গরিবদের নাকি আল্লাহতায়ালাও পছন্দ করে না আর চেয়ারম্যানই বা করবে কেন? আমরা তার উপযুক্ত শাস্তি চাই। ৮নং ওয়ার্ড সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, মামলার পর চেয়ারম্যান পালিয়ে না থাকলে হয়তো এসব কিছুই জানা যেত না। আগে কাউকে কিছুই জানতে বা বুঝতেও দিতো না। ১৯ জন ভুক্তভোগী চাল নিতে না আসায় আজ সবকিছু পরিষ্কার। তাছাড়া বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলামও এই চালগুলোও বিক্রি করতে চেয়েছিল। আমরা বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেছি। এরপর তিনি ওই চাল আর বিক্রি করতে পারেননি। আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরও শাস্তি চাই।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসের চাল আসছে। সকল ইউপি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তালিকা ধরে চাল বিতরণ করেছি। এরমধ্যে ১৯ জন কার্ডধারী প্রথমদিনে চাল নিতে আসেনি। ভেবেছিলাম পড়ে আসবে। কিন্তু গত একমাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও তারা আসেনি। আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এ বিষয়ে অবগত করেছি। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার মাহফুজা খাতুন বলেন, নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তালিকা অনুযায়ী চাল নিতে না আসা কার্ডধারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কার্ডধারীরা জানান তাদের নামে চাল বরাদ্দের বিষয় গত ১৮ মাস ধরে জানেন না কেউ। তবে ১৯ জনের মধ্যে ১৩ জনের সঙ্গে কথা হয়েছে, এখনো ৬ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলমান রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ভুক্তভোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা গত ১৮ মাসের চাল চায়। আসলে আমি কোথায় থেকে তাদের ১৮ মাসের চাল দেবো। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।