বাংলারজমিন
জীবিতকে মৃত ঘোষণার অভিযোগ
দোহারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অব্যাহতি
স্টাফ রিপোর্টার, দোহার থেকে
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার
মাছ ধরতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ঢাকার দোহার উপজেলার পৌরসভার খাড়াকান্দা এলাকার যুবক মো. আনোয়ার হোসেন। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা আনোয়ারের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে গেলে আনোয়ার হাত পা ও চোখ নাড়াচাড়া করতে থাকেন। দ্রুত তাকে আবারো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তখন ডাক্তার তাকে আবারো মৃত ঘোষণা করেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
চিকিৎসকের অবহেলায় তিনি মারা গেছেন অভিযোগ তুলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুর চালায় নিহতের স্বজন ও বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় মারধর করা হয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহেল রানাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মাঠে নামে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে এমন পরিস্থিতিতে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার পৌরসভা খাড়াকান্দা এলাকার যুবক মো. আনোয়ার হোসেন বাড়ির পাশে একটি ডোবায় বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে যায়। একপর্যায়ে উপরে থাকা বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয় সে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোহেল রানা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। আনোয়ারের পরিবারের দাবি, বাড়িতে নিয়ে আসার পর সে হাত-পা ও চোখ নাড়াচাড়া করে। এরপর আনোয়ারকে আবারো নেয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সঙ্গে এ বিষয়ে বাকবিতণ্ডা হয় রোগীর স্বজনদের। একপর্যায়ে উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে হাসপাতালে জড়ো হয় বিক্ষুব্ধরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থালে পৌঁছে অন্তত দুইঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মো. আসিফ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধরা হাসপাতাল ত্যাগ করে। খবর পেয়ে দোহার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুন খানও ঘটনাস্থলে আসেন। আনোয়ারের বাবা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দোহার পৌরসভা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতালে আনার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবহেলা করেছেন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমনকি একটি এম্বুলেন্স দুইঘণ্টা পার হলেও ব্যবস্থা করে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। পরে আনোয়ারের লাশ রাতেই বাড়িতে নিয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিনের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় জনতা। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ মানবন্ধন ও বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন আন্দোলনকারীসহ বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ডা. জসিম উদ্দিনকে বুধবারের ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে সাময়িক অব্যাহতি দেন এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. জসিম উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় জরুরি বিভাগের ডাক্তার সোহেল রানা মারধরের শিকার হয়েছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে নিজের অব্যাহতির ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেননি। দোহার থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, এ ঘটনায় নিহতের পরিবার এখনো কোনো মামলা করেনি। তবে একটি অপমৃত্যু মামলা হতে পারে।
পাঠকের মতামত
আনোয়ার যখন বেঁচে উঠে নি, ডাক্তারদের অভিমত সঠিক ধরতে হবে । বিদ্যুত স্পৃষ্ট হওয়ার পর মৃত্যুর আগে খিচুনিতে তার হাত পা নড়েছিল । চোখ ও নড়েছিল খিচুনির টানে। ইংরেজিতে বলে convulsions.