খেলা
বিপিএল ২০২৪-২০২৫
শুরুর আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দিতে হবে সাড়ে ৯ কোটি টাকা
ইশতিয়াক পারভেজ
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার২৭শে ডিসেম্বর ২০২৪, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ১১তম আসর (বিপিএল) মাঠে গড়ানোর কথা। এবার আসর শুরুর আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ৯ কোটি টাকা (ব্যাংক গ্যারান্টি ৮ কোটি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দেড় কোটি)! দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে যা কিনা কঠিন চ্যালেঞ্জ! তিন আসরের জন্য বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ফ্র্যাঞ্চাইজিদের চুক্তিপত্র দিয়েছিল। এরই মধ্যে দু’টি আসর শেষ হয়েছে। এই সাইকেলের বাকি একটি আসর। তবে তার আগেই বদলে গেছে দৃশ্যপট। চুক্তিপত্র পাওয়া দলগুলোর অংশগ্রহণই এখন শঙ্কার মধ্যে। গণআন্দোলনে সরকারের পতন হয়েছে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) এসেছে বড় পরিবর্তন। তাতে বিপিলেও পড়েছে বড় প্রভাব। পতিত সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও এমপি আহম মোস্তফা কামাল আর তার মেয়ে নাফিসা কামাল দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাই তাদের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবার থাকছে না। এছাড়াও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় দুর্দান্ত ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজিরাও আত্মগোপনে। বিসিবি থেকে অংশগ্রহণ নিশ্চয়তার জন্য পাঠানো ইমেলেরও তারা কোনো জবাব দেয়নি। এখন পর্যন্ত বিসিবিকে অংশ নেয়ার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স, খুলনা টাইগার্স, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, রংপুর রাইডার্স. ফরচুন বরিশাল সহ পাঁচটি দল। বিসিবিও তাদের ইমেল দিয়ে অংশগ্রণ নিশ্চিত করেছে তবে শর্ত জুড়ে দিয়েছিল গেল মঙ্গলবারের মধ্যে চলতি আসরের ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি দেড় কোটি টাকা জমা দেয়ার জন্য। নির্ধারিত সময়ে শুধু সিলেট এই ফি’র অর্ধেকটা জমা দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে সময়সীমার শেষ দিন বিসিবি’র নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সময় চেয়েছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। গতকাল পর্যন্ত আর কোনো দল টাকা দেয়নি বলেই জানিয়েছে বিপিএলের একটি সূত্র। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার বিপিএলের ১১তম আসর আলোর মুখ দেখবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখানে সবকিছু ঠিক থাকবে তো! এরই মধ্যে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন যথাসময়ে তারা আয়োজন করতে প্রস্তুত। এ নিয়ে তারা কাজও করে যাচ্ছেন। কিন্তু বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ও বিসিবি এখনো দলগুলো চূড়ান্ত করতে পারেনি। যে কারণে ২৭শে সেপ্টেম্বর বিপিএলের ড্রাফট হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, মধ্য অক্টোবরের পরই তা আয়োজন করা হবে। কিন্তু তার আগে তো চূড়ান্ত করতে হবে কারা কারা অংশ নেবে? বেশ কয়েকটি দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা অংশ নিতে চাইলেও বিসিবিকে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। অন্যদিকে নতুন দুটি দল এবারের বিপিএলে অংশ নিতে পারে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ঢাকার জন্য আবেদন করেছে চিত্রনায়ক শাকিব খানের প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যান। যা কিনা বাংলাদেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান নামেই পরিচিত। অন্যদিকে কুমিল্লা না থকলেও এবার বিপিএলে আসতে চাইছে রাজশাহী। শোনা যাচ্ছে ভ্যালেন্টাইন গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান বেশ আগ্রহী। সেটি হলেও বিপিএলে এবার সাতটি দল অংশ নেয়া হবে কঠিন। পুরানো দলগুলোর মধ্যে ফরচুন বরিশালের হয়তো মালিকানা বদলে যেতে পারে। আর জানা গেছে রংপুর রাইডার্সও এখনো শতভাগ নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে এবারের বিপিএলে দল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে প্রায় ৬ থেকে সাতটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিসিবির কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগের ওপরই অস্থা রাখা কঠিন। কারণ বেশির ভাগই নাকি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত নয়। এছাড়াও চট্টগ্রামকে দল হিসেবে পেতে আবারো আবেদন করেছে এসকিউ স্পোর্টস লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটি বিপিএলে প্রথম দুটি আসর (২০১২ ও ২০১৩) অংশ নিয়েছিল চিটাগাং কিংস নামে। তবে সেই বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সূত্রে জানা গেছে এই দলটির কাছে বিসিবি ৯ কোট টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে দলটি একটি আসরে রানার্স আপ হয়েছিল সেই সুবাদে চিটাগাং কিংস বিসিবির কাছে পাবে ৩ কোটি টাকা। বিসিবির দাবি সেটি বাদ দিলেও দলটির কাছে এখনো পাওনা প্রায় ৬ কোটি টাকার মতো। যা কিনা দলটিকে পুনবিচেনার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। আর যেহেতু নিয়ম অনুসারে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্চার্সের এটি শেষ বছর তারা নিজেরা সরে না গেলে নতুন কাউকে ফ্র্যাঞ্জাইজি দেয়াও বিসিবির জন্য কঠিন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিষ্ঠান আকতার গ্রুপ সহ গেলো আসরের সব দলের কাছে ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিকের ২৫ শতাংশ টাকা পাবে। বিসিবির নিয়ম অনুসারে দলগুলো ৭৫ ভাগ টাকা দিলেও জুন জুলাইয়ে নাকি টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি খারাপ হওয়াতে কোনো দলই ২৫ ভাগ টাকা দিতে পারেনি। তবে দলগুলোর দাবি ক্রিকেটাররা কিছুটা হতাশ হলেও তারা ফ্র্যাঞ্চাজিদের সঙ্গে আলোচনা করে বিলম্ব মেনে নিয়েছে! সবমিলিয়ে দলগুলোর ওপর এবার বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ থাকছে।