বাংলারজমিন
বর্জ্য অপসারণ বন্ধ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে গাইবান্ধাবাসী
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবারবর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গাইবান্ধা পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অপরদিকে কঠিন বর্জ্য যথাযথভাবে রিসাইকেলিং ব্যবস্থা না থাকায় পরিবেশ দুষণ বেড়েছে। জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে পৌর মেয়র অপসারণ হওয়ার পর থেকেই পৌর এলাকার বানিয়ারজানে স্থাপিত কেন্দ্রীয় বর্জ্য ড্যাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য ফেলতে এলাকাবাসী বাধা প্রদান করছে। অন্যদিকে একাধিক সরকারি খাস জমিতে ময়লা ফেলতে গেলে সেখানেও এলাকাবাসীর বাধার মুখে পরে এবং মারধরের শিকার হয় বর্জ্য অপরারণকর্মীরা। ফলে উপায়ান্তর না পেয়ে ময়লা অপসারণ সীমিত আকারে চালু রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। ময়লা নিয়মিত অপসারণ না করায় রাস্তার মোড়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে এবং আবাসিক এলাকায় প্রতিদিন রাস্তার উপরেই ময়লার স্তূপ জমছে। ফলে পথচারী এবং আবাসিক এলাকার নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের হাঁটাচলায় মারাত্মক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।
সরজমিন পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে চারিদিকে একই চিত্র দেখা যায়। এলাকার বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে গাইবান্ধা পৌর এলাকার সার্বিক স্যানিটেশন ব্যবস্থার বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা যায়। পৌর এলাকার একাধিক স্থানে নির্মিত পাবলিক টয়লেটগুলো সকল ধরনের মানুষের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কোনো প্রবেশাধিকারের ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী এবং শিশুদের ব্যবহারের সুযোগ থাকছে না। সহজে পচনশীল নয় এমন কঠিন বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে, বাসাবাড়ির পায়খানার পাইপের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে রাস্তার সঙ্গে ড্রেনে অথবা নদী-নালায়, গণশৌচাগারের অব্যবস্থাপনায় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই, সাবান নেই, কোথাও পানির সংযোগ নষ্ট, কোথাও প্যান ভাঙা, রিং, ছাদ অথবা দরজা ভাঙা, কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই, ফলে বেশির ভাগ গণশৌচাগার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও পারিবারিকভাবে পায়খানার সীমানার মধ্যেই কাছাকাছি অবস্থানে নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এমন নলকূপের পানি পান করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।
ময়লার দুর্গন্ধের মধ্যেই বসবাসকারী ৬নং ওয়ার্ডের মাস্টারপাড়ার কিটো মিয়া বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে রাস্তায় বের হতে পারি না। সবসময় রাস্তায় ময়লায় স্তূপের সামনে কুকুরের জটলা লেগে থাকে এতে করে সাধারণ মানুষ ও পথচারী চলাচলে খুবই ভয় পায়। রাস্তায় এক পাশে ময়লা আর কুকুর থাকায় স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা প্রায়ই ছোটবড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এদিকে বানিয়ারজান এলাকার বাসিন্দা পরশ হোসেন বলেন, বর্জ্য ড্যাম্পিং স্টেশন তৈরির সময় পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছিল এখানে ময়লা ফেললেও কোনো দুর্গন্ধ হবে না। কারণ আমরা ময়লা থেকে বায়ো গ্যাস তৈরি করবো। ফলে এখানে যে ময়লা আনা হবে তা দ্রুত ব্যাহারের ফলে গন্ধ ছড়াতে পারবে না আর বায়োগ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা হবে। ফলে এ কাজে এলাকার অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে এখানে ময়লা ফেলে পাহাড় সমান উঁচু করে রাখা হয়েছে। ময়লার গন্ধে আমরা ঘুমাতে পারি না। ময়লার কারণে বাড়িতে মশামাছি সব সময় থাকে। বাচ্চারা খেতে পড়তে পারে না। এসব কারণে আমাদের সারা বছর নানা ধরনের রোগব্যাধি লেগেই থাকে। এই এলাকায় বাড়ি হওয়ায় আমাদের সঙ্গে কেউ আত্মীয়তাও করতে চায় না।
এদিকে প্রায় দুই বছর ধরে এই পৌর এলাকায় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সচেতনতা এবং জনসাধারণের ওয়াশ অধিকার নিশ্চিত করতে স্থানীয় কিছু বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নেটওয়ার্কের ভিত্তিতে কাজ করলেও উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক সংস্থার রাইজিং ফর রাইটস প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার সমন্বয়কারী জেভিয়ার স্কু বলেন, ‘‘রাইজিং ফর রাইটস প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো সকল মানুষের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করা। এই সেবা থেকে প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, নারী, শিশু এবং ট্রান্সজেন্ডার কেউ বাদ যাবে না। সকলেই নিরাপদ স্যানিটেশন সেবার অন্তর্ভুক্ত হবে।”
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত পৌর প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শরিফুল আলম বলেন, আগে যেখানে ময়লা ফেলা হতো সেখানে এখন ময়লা ফেলা যাচ্ছে না। স্থানীয় লোকেরা সেখানে ময়লা ফেলতে দিচ্ছে না। সে কারণে আমরা ওয়ার্ডের ময়লা আপাতত সেই ওয়ার্ডেই কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা যায় সে বিষটি বিবেচনা করছি। আর এর মধ্যে আলোচনা করে যদি আমরা কোনো ঘাসজমি বা জায়গা ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে সেখানে সমস্ত ময়লা নিয়ে ফেলা হবে।