বাংলারজমিন
রেহানা হত্যাকাণ্ড, লাশ গুম করতে হত্যার পর মাটিচাপা দেয়া হয়
নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবারস্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিক রেহানা পারভীন (৩৭)কে। শুক্রবার ঢাকার নবাবগঞ্জ থানা সভা কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের পাতিলঝাপ গ্রামের মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন ও একই উপজেলার বক্সনগর ইউনিয়নের ছোট রাজপাড়া গ্রামের মৃত. আব্দুল মান্নানের মেয়ে পাপিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লিখিত বক্তব্যে এসপি আহম্মদ মুঈদ জানান, গত ৩১শে আগস্ট উপজেলার পাতিলঝাপ গ্রামের লেহাজ উদ্দিনের স্ত্রী আইরিন আক্তার তার মেয়ে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রেহানা পারভিনকে দুই মাস যাবৎ নিখোঁজ সংক্রান্ত নবাবগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশ ও হাইকমিশন ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেহানার অবস্থান শনাক্তে বাংলাদেশ পুলিশের সহায়তা চান। এ ঘটনায় গত ৮ই সেপ্টেম্বর ভিকটিম রেহানার মা আইরিন আক্তার বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী আওলাদ হোসেন (৪৭), ননদ পাপিয়া আক্তার (৩৬), ননদ মাকসুদা বেগম (৪৪), ননদের স্বামী আমজাদ হোসেন (৬৪) এর’ নামসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে নবাবগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। বক্তব্যের পরবর্তী অংশে দোহার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম জানান, মামলা রুজু হওয়ার পর পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় থানা পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় অভিযান চালিয়ে আসামি আমজাদ হোসেন ও পাপিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করে। আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের একসময় তারা সম্পৃক্ততা স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার নয়ারহাট মৌনদিয়া চৌরাপাড়াস্থ পাপিয়া আক্তারের বাড়ির আঙ্গিনায় সেফটি ট্যাংকের পাশে মাটি খুঁড়ে রেহানার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এএসপি আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় রেহেনা ও তার স্বামী বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিক। ভিকটিম প্রায় ২০ বছর আগে উপজেলার ছোট রাজপাড়া গ্রামের আ. মান্নানের ছেলে আওলাদ হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিলেন। তাদের ঘরে তিন ছেলে ও দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালীন তাদের দাম্পত্য কলহ লেগে থাকতো। ভিকটিম বাংলাদেশে নিজ নামে জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। পরে ভিকটিম গত ৬ই জুন বড় মেয়ে আহাদ নূর (১৩)কে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। মেয়েকে ময়মনসিংহ শহরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করে দেন। ২৯শে জুন ভিকটিমের স্বামী বাংলাদেশে আসলে পুরনায় তারা বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। পরে ৩রা জুলাই আসামিদের পূর্ব পরিকল্পনায় ভিকটিমকে নবাবগঞ্জ থেকে অপহরণ করে পাপিয়া আক্তারের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে খুন করে লাশ গুমের উদ্দেশ্যে বাড়ির উঠানের মাটির নিচে পুঁতে রাখে। পরে ভিকটিমের স্বামী ১৩ই জুলাই পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। থানা পুলিশ, এ ঘটনায় জড়িত দু’জনকে গ্রেপ্তার করাসহ মৃতদেহ উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার করেছে। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন ও অস্ট্রেলিয়া ফেডারেল পুলিশ হেডকোয়াটার্সে ভিকটিমের তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে বলে এএসপি জানান। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- নবাবগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ্ জালাল, নবাগত ওসি আব্দুল মমিন।