ঢাকা, ৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে একটি অপহরণ মামলা, অনেক রহস্য

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবারmzamin

৫ই আগস্ট বিকালে বিজয় মিছিল নিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় হামলা করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ সময়কার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে; থানার কম্পাউন্ডের ভেতরের সড়কে পুলিশ এক যুবককে লাথি মারছে। ওই যুবক উঠে দাঁড়ানোরও শক্তি পাচ্ছেন না। দক্ষিণ সুরমার কাজী মিয়ার বাড়ির ভাড়াটে বাসিন্দা ঝর্ণা ভিডিও দেখে দাবি করেছেন; পুলিশ যাকে লাথি মারছিল তিনি তার নিখোঁজ স্বামী শাহজাহান মিয়া। এরপর থেকে তার স্বামী শাহজাহান মিয়া নিখোঁজ রয়েছেন। তবে, স্বামী নিখোঁজের ঘটনায় এরই মধ্যে ২৬শে আগস্ট ঝর্ণা বেগমের নামে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে ঝর্ণা বেগম দাবি করেছেন, তিনি মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। শাহজাহান মিয়া পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। বাড়ি মৌলভীবাজার সদরের সনকাপন এলাকায় বর্তমানে বসবাস করেন সিলেট নগরের ধরাধরপুরের কাজী মিয়ার বাড়িতে। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ৫ই আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নেন শাহজাহান মিয়া। এরপর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তিনি। কোথায় আছেন, কেমন আছেন- জানেন না তার পরিবারের সদস্যরা। শাহজাহানের সন্ধান চেয়ে গত ২০শে আগস্ট দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন স্ত্রী ঝর্ণা বেগম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৫ই আগস্টের ৫৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ওইদিন বিকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল থেকে থানায় হামলা করে। তারা ইটপাটকেল ছুড়ে থানার ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছিল। এমন সময় থানার ভেতর থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি বর্ষিত হলে ছাত্র-জনতা থানা কম্পাউন্ড  থেকে দৌড়ে পালায়। একই সময় দেখা যায় দক্ষিণ সুরমা থানা কম্পাউন্ডের ভেতরের সড়কে এক যুবক পড়ে আছে। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে ওই যুবককে লাথি দেয়া হচ্ছে। তবে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ কিনা- সেটি ভিডিও দেখে  বোঝা যায়নি। এই ভিডিওর সূত্র ধরে ঝর্ণা বেগম দাবি করেন, পুলিশ যাকে লাথি দিচ্ছিল ওই ব্যক্তিই তার স্বামী শাহজাহান। এ ব্যাপারে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন এবং স্বামীকে এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় ঝর্ণা বেগমকে বাদী করে ২৬শে আগস্ট দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে ঝর্ণা বেগমের দাবি হচ্ছে; তিনি ওই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকা অবস্থায় নগরের চণ্ডিপুল সিএনজি অটোরিকশা শাখার চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী তার কাছ থেকে কাগজে একটি স্বাক্ষর নেন। স্বামীকে খুঁজে আনার জন্য এ স্বাক্ষর নেন বলে দাবি করেন তিনি। পরে শুনেন এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। তিনি বলেন- ‘ভিডিওতে দেখেছি আমার স্বামীকে পুলিশ লাথি দিচ্ছে। এখন পুলিশই আমার স্বামীকে বের করে দেবে। এক মাস হয়ে গেল আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।’ দক্ষিণ সুরমা থানায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সে মামলার প্রধান সাক্ষী হচ্ছেন সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের নেতা সিলাম পশ্চিমপাড়া গ্রামের মাহমুদ আলী। তিনি সহ আরও ৭ জনকে এ মামলার সাক্ষী করা হয়েছে। সাক্ষীদের সবাই সিএনজি অটোরিকশা চালক বলে জানিয়েছেন মামলার প্রধান সাক্ষী মাহমুদ আলী। জানান, দক্ষিণ সুরমা থানায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সে মামলায় আমাকে সাক্ষী করার বিষয়টিও জানি না। কখন মামলা হয়েছে তাও জানি না। আরও যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তারাও মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। এ নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন। ঝর্ণা বেগমের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার বিষটি সত্য নয় বলে জানান শ্রমিক নেতা মাহমুদ আলী। এদিকে থানায় যে মামলা করা হয়েছে সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, পরিবহন মালিক সমিতির নেতাসহ সাধারণ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।

এ কারণে মামলা দায়েরের পর এজাহার নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণ সুরমা থানার সাব-ইন্সপেক্টর সৈয়দ শাফি মাহমুদ রাসেল জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের পর আমি বাদীসহ পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা থানায়ও এসে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়া যাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে তার মোবাইল চিহ্নিত করার জন্য এরই মধ্যে আবেদন করা হয়েছে। মামলার বাদীপক্ষ এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছেন। বিষয়টি জানার পর মঙ্গলবার রাতে নগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর ফখরুল ইসলাম নিখোঁজ ওই সিএনজি চালকের বাড়িতে যান। এ সময় তার কাছেও মামলার বিষয়ে অভিযোগ জানান স্বজনরা। পরবর্তীতে মিডিয়ায় দেয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নগর জামায়াত আমীর বলেছেন, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন বিজয় মিছিলে শামিল হন সিএনজি অটোরিকশা চালক শাহজাহান আহমদ। সেদিন বিকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহজাহানসহ ৪ জনের মরদেহ পুলিশ দক্ষিণ সুরমা থানার ভেতরে নিয়ে যেতে দেখেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভিডিওতে লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দুটি মাসুম বাচ্চার পিতা শাহজাহানের মরদেহ গুমের ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। অবিলম্বে নিহত শাহজাহানের খুনি ও লাশ গুমকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ সময় তিনি শাহজাহানের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্ব্তনা দেন, সহমর্মিতা প্রদান করেন ও নগদ দুই লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান দেন। এ ছাড়া জামায়াতের পক্ষ থেকে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status