ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

বেহুদা প্যাঁচাল: মমতাজের ফেরি করে বিদ্যুৎ বিক্রি, রাব্বানীর দৃষ্টিতে সেরা কৌতুক

কি হয়েছে সিইসি কাজী হাবিবের?

শামীমুল হক
২০ জুলাই ২০২২, বুধবার
mzamin

কথায় বলে-‘বেশি খেলে পেট হয় নষ্ট। বেশি কথায় দন্ত নষ্ট’। এমনটাই হয়তো ঘটেছে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের বেলায়। গত দু’দিন ধরে দেশের আলোচিত চরিত্র তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি’র সংলাপ শুরুর দিনই তিনি বেফাঁস মন্তব্য করে ফেঁসে যান। তার বক্তব্য সর্বমহলে আলোচনার ঝড় তুলে। তৃতীয় দিনের মাথায় সিইসি তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইলেন। তিনি বলেছেন, আমরা কখনো কখনো ভুল করে ফেলি। এ জন্য আমি অনুতপ্ত। তিনি কি বলেছিলেন? যার জন্য তাকে ক্ষমা চাইতে হলো।

বিজ্ঞাপন
গত রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর সঙ্গে সংলাপে তিনি বলেন ভোটকেন্দ্রে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। তার এ মন্তব্যই দেশজুড়ে সমালোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ওই দিন তিনি আরও যে মন্তব্য করেন তার বেশির ভাগই ছিল বিতর্কিত। এ ছাড়া তিনি সরকার প্রধান আর দলীয় প্রধান কি সেটাও বুঝাতে চেয়েছেন দলগুলোকে। 

সিইসি সকলের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আশাও ব্যক্ত করেন। ইভিএমের পক্ষে সাফাই গেয়ে সিইসি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। এরপরও অপপ্রচার সমানে চলছে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি ও সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন হচ্ছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রতিরোধ কতোটা সম্ভব হবে? তার সেদিনের বক্তব্যের পর কী প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় তার কিছুটা দেখা যাক- দৈনিক মানবজমিনে এসএম রফিকুল ইসলাম নামের এক পাঠকের মন্তব্য- ‘সিইসি সাহেবের কথামতো আমাদেরকে রাইফেল নিয়ে ভোট দিতে যেতে হবে। আসলে উনি কি সুস্থ? আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করবেন। এখন জনগণকে বলছেন রাইফেল নিয়ে ভোট দিতে যেতে। 

এটা আবার কোন জাতীয় নির্বাচন কমিশন?’ কাজী নামের এক পাঠক তার মন্তব্য তুলে ধরেন এভাবে- ‘আশ্চর্য হলাম সাংবিধানিক পদের শীর্ষ পদবির আইন নিজের হাতে তুলে নেবার পরামর্শ শুনে। সিইসি বলতে পারতেন প্রয়োজন হলে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করবেন, জনগণের শান্তিপূর্ণ ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য।’ আরেক পাঠকের মন্তব্য- ‘কি শিশুসুলভ কথাবার্তা। তিনি কি এই অবস্থানে থাকতে পারবেন? মানুষ রাইফেল-তলোয়ার কোথা থেকে পাবে?’ মোহাম্মদ হারুন আল রশীদ নামে একজনের মন্তব্য- ‘আগেভাগে জনাব মহা সর্বনাশের ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন। রেফারি কর্তৃক সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে আহ্বান করা উচিত কিনা বিজ্ঞ মহল তা বিবেচনায় নিবেন।’ মো. মাহামুদুর রহমান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘সিইসি নির্বাচন করতে চান অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ওপর। সিইসি কীভাবে সরকারকে সামলাবেন, তা বলেননি। সিইসি সরকার যে ইভিএমের পক্ষে সেই ইভিএমের পক্ষে কথা বলে সরকারের দালালি করলেন।’  জালাল আহমেদ নামে একজন পাঠক লিখেছেন, ‘জনাব, রাইফেলের যে বক্তব্য আপনি দিয়েছেন এটা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ দিতে পারে না। আপনি আপনার আইন প্রয়োগ না করে রাইফেল নিয়ে প্রতিহত করতে বলছেন। যেটা একটা গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত বহন করে, সুতরাং আইন নিজের হাতে তুলে নিতে নাগরিকদের উৎসাহিত করার অপরাধে আপনার নামে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। এবং আপনার পদত্যাগ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’  

আবুল কাসেম লিখেছেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল একটি সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন। কিন্তু তার উপলব্ধির মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তিনি বলেছেন নির্বাচনের সময় ক্ষমতায় থাকে সরকার, দল না। তিনি কি জানেন না দল থেকেই সরকার হয়? আর এখন তো দল আর সরকার একাকার হয়ে পড়েছে। তাই সেই দলীয় বিবেচনায় আপনিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন এবং আপনার কমিশন গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে প্রশাসনকে ব্যবহার করা হয়েছে দলের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর নির্বাচনের সময় তাঁরা ক্ষমতায় থাকলে তো সেটাই হবে নিঃসন্দেহে। সরকারের পক্ষে কথা বলে আপনি নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। তাই আপনার অধীনে সুষ্ঠু ভোট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভোটকেন্দ্রে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তাঁকে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে বলেছেন। দুটোই কি সমান অপরাধ নয়? অর্থাৎ, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অপরাধ। আপনি একজন বিজ্ঞ লোক। কীভাবে আপনি জনগণকে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে বলতে পারেন? জনগণকে নিজের হাতে আইন তুলে নিতে বলে আপনি সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা এখনই কবর দিয়েছেন।’ এত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সিইসি ‘নির্বাচনে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে হবে’- এমন বক্তব্য দেয়ায় ক্ষমা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, আমরা কখনো কখনো ভুল করে ফেলি। এজন্য আমি অনুতপ্ত। 

 

 

গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপে বসে এ কথা বলেন। এখানেই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল অন্য অনেক সিইসি’র চেয়ে এগিয়ে। তিনি ভুল বলেছেন তা অনুধাবন করেছেন। তাই তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। এতে তার মহত্ত্বই ফুটে উঠেছে। এমনটা নিকট অতীতে কেউ করেছে কি?   ওদিকে বিদ্যুৎ নিয়ে সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠে। লোডশেডিং দেশে নতুন নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সঙ্গে পরিচিত দেশবাসী। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ্রতাসাধনের জন্য সরকার লোডশেডিং ব্যবস্থায় ফিরে গেছে। এ নিয়ে এত আলোচনা- সমালোচনা কেন? কারণ সরকার জনগণকে লোডশেডিংমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের অধীনে আনা হয়েছিল। সবই ছিল সরকারের উন্নয়নের চিত্র। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের লক্ষ্য ধরে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে। আর তাই সরকারকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সোমবার যখন এ ঘোষণা দেয়া হয়, তখন বলা হয়েছিল মসজিদে এসি বন্ধ রাখার কথা। 

সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠে। তাৎক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এর সংশোধন নিয়ে মিডিয়ার সামনে বসেন। তিনি আগের ঘোষণার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সকল উপাসনালয়ে এসি প্রয়োজনের সময় চালানোর কথা বলেন। এ ক্ষেত্রে মসজিদে নামাজের সময় ছাড়া এসি বন্ধ রাখার সংশোধনী ঘোষণা করেন। এরপর সমালোচনার সমাপ্তি ঘটে। গতকাল থেকে আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে দেখা যাচ্ছে সংসদ অধিবেশনে এমপি মমতাজ বেগম বলছেন, ফেরি করে হকাররা যেমন নানা পণ্য বিক্রি করেন। তেমনি এখন দেশে ফেরি করে মাথায় ঝুলি নিয়ে ডাকা হচ্ছে বিদ্যুৎ লাগেনি, বিদ্যুৎ। বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন। ভিডিওটি অবশ্য বেশ আগের।  অন্যদিকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ফেসবুক লাইভে বলেছেন- দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্স বলা একটি জোকস। একটি কৌতুক। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে। বিচার হচ্ছে না। ১২ই জুলাই তার নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি লাইভ ভিডিওতে তিনি রেলওয়ের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেন- দুর্নীতির আখড়া বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা পরিবর্তন সময়ের দাবি। সবাই সোচ্চার হোন।

 ভিডিওতে দেখা যায়- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী রেলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমলাপুর রেলস্টেশনে ছয়দিন ধরে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে সেখানে ছুটে যান গোলাম রাব্বানী। এ সময় লাইভে এসে তিনি বলেন- এ হচ্ছে আমাদের মহিউদ্দিন রনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ও বিগত পাঁচ দিন ধরে এখানে আছে। এই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার ছয় দফা দাবি নিয়ে। ও ছয়টা দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে যে চরম আকারে দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার একটা আঁতুড় ঘর হয়ে আছে সেটা আমরা সবাই জানি। দীর্ঘদিন ধরে রেলের মান, রেলের সেবা, রেলের কালো বিড়াল বহু কিছু শুনে আসছি। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এখানে কোনো ধরনের সিস্টেম নেই। লেজেগোবড়ে অবস্থা। এটার প্রতিবাদে আমাদের এক ছোট ভাই দাঁড়িয়েছে। আমি ছিলাম বাসায়  শোয়া। রাত ২টা বাজে এখন। এই সময়েও সে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। কাউকে না কাউকে তো কথা বলতে হবে। এভাবে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। 

এখানে এমন কোনো দুর্নীতি নাই যে না হয়। একজন আনসার থেকে শুরু করে একজন টিটিই- প্রত্যেকেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। প্রতিবাদে রনি এখানে দাঁড়িয়েছে। আমি আমার নৈতিক অবস্থান থেকে ওর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। গোলাম রাব্বানী একে একে ছয়টি দাবি পড়ে শোনান। টিকিট কালোবাজারি নিয়ে বলেন, কাউন্টারে কাউন্টারে চোর বসে আসে। তিনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, এখানে যারা বসে আছে তারা কি চোর। এ সময় স্লোগান ওঠে সবাই চোর। রাব্বানী ফের বলেন, রেলে কি চোর আছে না নাই? উপস্থিত জনতা বলে উঠেন আছে। এই চোরদের বের করতে হবে। এই চোররা আমার বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা নষ্ট করছে। প্রত্যেকটা ঘাটে ঘাটেই চোর। এখানে চুরি করে পার পাওয়া যায়। পার পেলে তো চুরি হবেই। যদি কেউ চুরি করে পার না পেতো আর চুরি হতো না। এ সময় তিনি রেলমন্ত্রীকে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।

 অন্যথায় পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। রাব্বানী বলেন, রনিকে ছয়দিন ধরে এখানে থাকতে হবে কেন? এটা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য লজ্জার। এই রাষ্ট্রযন্ত্র ঘুমায় নাকি? এখানে না আসার মানে হলো আপনারা স্বীকার করে নিচ্ছেন এখানে চুরি হচ্ছে। বাংলাদেশে দুর্নীতির বিচার হয় না। আমি বলছি- দায়িত্ব নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ইট ইস এ গ্রেট জোকস। জাস্ট এ জোক। উনিশ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিও’র একপর্যায়ে বলেন, ‘আপনারা কেউ কালোবাজারি করলে ধরে চরম আকারে গণপিটুনি দেবেন। মেরে ফেলবেন। শুধু গোলাম রাব্বানীই নয়, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ সবাই চান। সেটা কবে হবে কে জানে।’

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status