বাংলারজমিন
নিজাম হাজারীর দেহরক্ষী মানিক আখাউড়া ইমিগ্রেশনে আটক
ফেনী প্রতিনিধি
১৩ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবারফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর দেহরক্ষী যুবলীগ নেতা মানিককে আখাউড়া ইমিগ্রেশনে আটক করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ১১ শহীদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দিয়েছে জেলা যুবদল। এ ছাড়া ছাগলনাইয়ায় অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত থানায় কম্পিউটার ও প্রিন্টার প্রদান করেছে জামায়াত। ওদিকে ফেনীতে ছাত্র-জনতা ও রাজনীতিবিদদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে থানায় দায়িত্বে ফিরেছে পুলিশ। তবে পুলিশ মনোবল ফিরে পাওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশনে আটক হয়েছে ফেনী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর দেহরক্ষী মো. ফরিদ মানিক ওরফে পিএস মানিক। সোমবার দুপুরে অবৈধ পথে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি ইমিগ্রেশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বীকার করলেও তিনি তার নাম ও পদবি প্রকাশে অপারগতা জানিয়েছেন।
আটক মানিক ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের মো. মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি ফেনী জেলা যুবদলের সহ-সম্পাদকের পদে রয়েছেন।
গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর দেহরক্ষী পিএস মানিক পালিয়ে যায়।
এদিকে সোমবার দুপুরে কুমিল্লা সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আগুনে ভষ্মিভূত ফেনী মডেল থানা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৫ই আগস্ট থানায় অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। ইতিমধ্যে ফেনী মডেল থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশের মনোবল বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের পাশে আছে ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না পুলিশ নিরাপত্তাবোধ করে ততক্ষণ পর্যন্ত থানাগুলোতে সেনাবাহিনী পাশে থাকবে। সোমবার দুপুরে ফেনী মডেল থানা গ্রাউন্ড পরিদর্শন করে তিনি পুলিশ সদস্যদের নানা পরামর্শ দেন। এর আগে সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ফেনী জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সঙ্ে মতবিনিময় করেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মাৎ শাহীনা আক্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি শুকদেব নাথ তপন, ফেনীর ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুহাইমীন বিন তাজিম, জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আবদুর রহিম ও গণমাধ্যম কর্মীরা।
এদিকে ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ১১ শহীদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দিয়েছে জেলা যুবদল। রোববার রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পরিবারের হাতে নগদ অর্থ তুলে দেন যুবদলের নেতারা।
ফেনী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খন্দকার বলেন, গত ৪ঠা আগস্ট ফেনীর গডফাদার নিজাম উদ্দিন হাজারীর নির্দেশে মহিপালে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। শ্রাবণ, সিহাব, মাসুদের মতো তরুণদের রক্তের ওপর দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতনের মাধ্যমে এ চূড়ান্ত বিজয় এসেছে। এ আন্দোলনে জেলার প্রত্যেক শহীদ পরিবাকে এক প্রবাসীর মাধ্যমে এক লাখ টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে ছাগলনাইয়ার বিধ্বস্ত থানায় জামায়াতের পক্ষ থেকে কম্পিউটার ও প্রিন্টার প্রদান করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ছাগলনাইয়া থানায় অগ্নিসংযোগ করে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এতে পুলিশের বসার কোনো চেয়ার বা মামলার কাগজপত্রও ছিল না। ছাগলনাইয়া উপজেলা জামায়াতের নেতৃবৃন্দ থানার ওসি হাসান ইমামের কাছে জানতে চান তাদের এখন সবচেয়ে বেশি কি প্রয়োজন? তখন ওসি বলেন, আমার এখন সবার আগে একটি কম্পিউটার, প্রিন্টার ও রাউটার প্রয়োজন। তাতক্ষণিক উপজেলা জামায়াতের আমীর ও ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান একটি কম্পিউটার, একটি উন্নত মানের প্রিন্টার ও একটি রাউটার ক্রয় করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় জামায়াতের ফেনী জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য একেএম শামছুদ্দিন এসব মূল্যবান সামগ্রী ওসির হাতে তুলে দেন। বিতরণের সময় উপজেলা ও পৌর জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।