বাংলারজমিন
গুলিতে আসিফের বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়
‘বাবারে ছাড়া কী করে থাকবো’
বিপ্লব হোসেইন, সাতক্ষীরা থেকে
২৯ জুলাই ২০২৪, সোমবার‘আসিফ বাবা আর নেই। বাবা, তোমাকে নিষেধ করলাম। বললাম, ও আব্বা তুমি যাইওনা যেন, আব্বা তাও গেছে আমার আসিফ চলি গেছে। আর ফিরে আসবে না, ও বাবা, বাবারে তোমাকে ছাড়া কি করে থাকবো’ আহাজারি করতে করতে এইটুকু বলে আর কিছু বলতে পারলেন না আসিফের মা শিরিন বেগম। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুরো দেশের শিক্ষার্থীরা যখন ‘কোটা না মেধা’ স্লোগানে মুখরিত ঠিক তখন সাতক্ষীরাতে খবর আসে আসিফকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় কোটা আন্দোলনের সংঘর্ষে গুলিতে মারা হয় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আসিফ হাসান। গত ১৮ই জুলাই বেলা সাড়ে ১২টায় গুলিবিদ্ধ সহকর্মীকে পানি খাওয়াতে গেলে তাকেও জীবন দিতে হয়। গুলিতে আসিফ হাসানের পুরো বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসিফের গুলিবিদ্ধ ছবি দেখার পর পরিবার থেকে তার নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মা শিরিন বেগম বার বার মূর্ছা গেছেন। বাবা শোকে স্তব্ধ। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন যমজ ভাই রাকিব হাসান। আসিফ বাড়ি আসার জন্য বাসের টিকিটও কেটেছিলেন, বাড়ি ঠিকই আসলো কিন্তু লাশ হয়ে। আসিফ হাসানের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলাসহ আশেপাশের এলাকায় যেন শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার নিজ গ্রাম আস্কারপুরে দলে দলে আসছেন আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ নিকটজনরা। আসিফের বাল্যবন্ধুরাও ভিড় জমিয়েছেন। বন্ধুকে হারিয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে তারা। আসিফের মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারেনি। তিন বোনের পর আসিফ হাসান ও রাকিব হাসান যমজ দুই ভাই। আসিফ আজ নেই, রাকিব সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনার্স পড়ছেন। ভাইয়ের মৃত্যুতে তিনিও পাগলপ্রায়। আসিফের মৃত্যুর শোক কোনো ভাবেই কাটাতে পারছে না পরিবারের কেউই।
আসিফের বাল্যবন্ধু সজীব আরিফ বলেন, ছোটবেলা থেকে আমরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি। অনেক ভালো একজন মানুষ ছিল। শান্ত, নম্র-ভদ্র সাত চড়ে এক কথা বলতেন না। তার মতো বন্ধু হারানোর বেদনা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক। আসিফের স্কুলশিক্ষক আবুল হাসান বলেন, রাজধানীর নর্দার্ন ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল সে। খুব মেধাবী। তিনি বলেন, আসিফ খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল। শিক্ষাঙ্গন আজ এভাবে রক্তাক্ত। ছাত্রদের বুকে গুলি। আমরা এমন মৃত্যু দেখতে চাই না। কারও মায়ের কোল যেন এভাবে খালি না হয়।আসিফের নিকটাত্মীয়রা জানান, আসিফের জানাজা শুক্রবার জুমার নামাজের পর হবে এমন সিদ্ধান্ত হলেও চাপ ছিল দ্রুত দাফন করার। সে কারণে শুক্রবার ফজরের নামাজের পর পরই দাফন শেষ করা হয়। এক কথায় ওপর মহলের চাপে তড়িঘড়ি করে আসিফের দাফন কাজ শেষ করা হয়েছে।