নির্বাচিত কলাম
সা ম্প্র তি ক প্রসঙ্গ
বন্ধু, তাই তুমি সাংবাদিক!
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারবন্ধু, তুমি আকাশের কথা বলো। তুমি ছায়াপথের গল্প শোনাও। তুমি মঙ্গলগ্রহে মানববসতির সম্ভাব্যতা নিয়ে আশার বাণী শোনাও। প্রসারিত মহাকাশে নতুন নতুন আবিষ্কারের তথ্য জানাও। কবে, কখন ধূমকেতু, গ্রহাণুপুঞ্জ ছুটে আসবে পৃথিবীর দিকে- তাও জানাও তুমি। সাগরতলের তথ্য, আগ্নেয়গিরি, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত- সবই তো তুমি জানাও। বন্ধু, তুমি সাংবাদিক- তাই জাতি তোমাকে সম্মান করে। তোমাকে ভালোবাসে। তুমি সাংবাদিক বলেই একজন আদর্শবান শিক্ষকের ছবি ছাপা হয় খবরের কাগজে। নিভৃতে জনসেবা করে যাওয়া অসংখ্য নাম জানা না জানা মানুষকে খুঁজে খুঁজে বের করে তোমার কলম। হ্যাঁ বন্ধু, তোমার কলমের কারণেই তাদের কারও কারও ভাগ্যে জুটে যায় যোগ্য পাওনা। যোগ্য বলি কেন, যতটুকু তাদের প্রাপ্য- তা ওই পাওনা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। তবুও তোমার কলমের জোরে তারা কিছুটা সম্মান পেয়ে যান। মানবতা ফেরি করে বেড়ান যারা, তারা কোনো বিনিময় পাওয়ার জন্য এ কাজ করেন না। আবার এই নাম নিয়ে যারা অর্থ বানানোর অসৎ ফন্দি আঁটে- তাদের মুখোশও খুলে দেয় তোমার কলম। কি জাদু আছে বন্ধু তোমার কলমে! বেছে বেছে সব ভালো আর মন্দ বের করে নিয়ে আসে সে! যখন সবকিছু বন্ধ, চারদিক অন্ধকার, ইন্টারনেট নেই, একবিংশ এই শতকে এসে চারদিক নিকষ অন্ধকারে- তখনো তুমি আলো খোঁজ! তোমার কলম সার্চলাইট হয়ে ওঠে।
বন্ধু, তুমি সাংবাদিক। বড় কঠিন এ পথ! বড় বন্ধুর এ পথ। বড় ভালো লাগার এ পথ। কারণ, তুমি নির্যাতিতের কথা বলো। তুমি নিপীড়িত মানুষের কথা বলো। তুমি কথা বলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তুমি মুখোশ খুলে দাও সন্ত্রাসীর, দুর্নীতিবাজের। তুমি কথা বলো বেআইনি ক্ষমতা ব্যবহারের বিরুদ্ধে। তাই তো অন্য পেশা টানে না তোমাকে। কারণ, অন্য পেশায় উপার্জন আছে। ভালো বেতন আছে। কিন্তু সাংবাদিকের মতো এসব অনিয়ম তুমি তুলে ধরতে পারবে না। তাই তুমি সাংবাদিক। অর্থের নেশাকে ছেড়ে অনিশ্চিত এক পেশা বেছে নিয়েছো তুমি। তুমিও তো হতে পারতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাটা এনালিস্ট। জীবন নিশ্চিত হয়, এমন মোটা অংকের চাকরি করে নিশ্চিন্তে জীবন পার করে দিতে পারতে! সে নেশা পায়নি তোমাকে! অথচ কি এক নেশা পেয়ে বসেছে তোমাকে! তুমি ছুটছো! তুমি ছুটছো অবিরাম! ক্লান্তিহীন রোদে পুড়ে তপ্ত ঢাকার রাস্তা মাড়িয়ে ছুটে চলেছো সোর্সের কাছে! একটি তথ্য, একটি সত্যের সন্ধানে তোমাকে ছুটতে হয়। রাত নেই, দিন নেই। মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই- সব সময় ঝড়কে উপেক্ষা করে তোমাকে ছুটতে হয়। তোমাকে তথ্য পেতে হয়। তারপর নাড়িয়ে দিতে পারো কোনো এক বাঘা দুর্নীতিবাজের মুখোশ। দেশ জানতে পারে, জাতি জানতে পারে মুখোশের আড়ালে এক অর্থপিশাচ লুকিয়ে ছিল। ঘূর্ণিঝড় আইলা, প্লাবন- সব ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও তোমাকে ভেসে থাকতে হয়। নাক ভাসিয়ে ছুটতে হয় বানভাসি মানুষের কাছে। সিলেটের ভয়াবহ বন্যায় মানুষের দুঃখের কথা তুলে আনতে হয়। তাদের দুঃখকে তোমার কোমল হৃদয় দিয়ে স্পর্শ করার সুযোগ পাও। তাদের সঙ্গে মিশে যেতে পারো। সে এক অন্য রকম প্রশান্তি। বন্ধু, তাই তুমি সাংবাদিক। রণক্ষেত্র, রাষ্ট্রীয় সংকট সব সময়ই তোমাকে ছুটতে হয় ঘটনার নেপথ্যের কারণ সন্ধানে। তোমাকে ছুটতে হয় শনির আখরা, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুরে ভয়াবহ রণক্ষেত্রে। জীবন বাজি রেখে সেই রণক্ষেত্র থেকে জাতিকে জানাতে হয় তথ্য। তুলে আনতে হয় তরতাজা ছবি। অথচ একটি গুলি এসে তোমার প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে। সেদিকে তাকানোর, তা নিয়ে ভাবার কোনো সময় নেই তোমার। কখনো নিজেকে নিরাপদে রেখে, কখনো ঝুঁকির মুখে পড়ে সংগ্রহ করতে হয় সংবাদ ও ছবি। রাতের গভীরতা কিংবা ভোর, দুপুর কিংবা সকাল- কোনো অবসর নেই তোমার। তুমি তো মাঠের এক অন্যরকম লড়াকু। তোমার কোনো পক্ষ নেই। তোমার কোনো দল নেই। তোমার দল জনতা। তুমি জনমানুষের কাতারের। ভোট দেয়ার সময় তোমার স্বাধীনতা আছে। তুমি যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারো। কিন্তু মাঠে তুমি সাংবাদিক। এ সময় তোমার কোনো দল নেই। তোমার কোনো পক্ষ নেই। যদি থাকে, যদি পক্ষপাতিত্ব করে খবর লেখো, তবে তুমি সাংবাদিক নও বন্ধু! যদি পক্ষপাতিত্ব থাকে, তাহলে তুমি দলীয় কর্মী। তোমার এমন পরিচয় হতে পারে না। বন্ধু, তুমি সাংবাদিক- তাই তুমি যা দেখো তা-ই লিখো। তাই লিখো বলে জাতি তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে। তোমার কলমের দিকে। তুমি রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারো না। স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করতে পারো না। কারণ এই রাষ্ট্র তোমাকে ধারণ করে। জাতির স্বার্থে তোমাকে লিখতে হয়। তাই তুমিও যোদ্ধা। তোমার যুদ্ধ অন্যরকম। তোমার যুদ্ধ দেখা যায় না। কিন্তু যখন কোনো মুখোশ উন্মোচন করে দাও, তখন আনন্দে তোমার বুক ফুলে ওঠে। তাই তুমি সাংবাদিক। তুমি সাংবাদিক বলেই তোমাকে খুঁজে পাই ইরাক যুদ্ধে, সিরিয়া যুদ্ধে, আফগানিস্তান যুদ্ধে, সিরিয়া যুদ্ধে, ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, রক্তাক্ত, অনাহারী শিশুর পাশে। তোমাকে কলম ধরতে দেখি নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, গাজায় অভুক্ত শিশুর পক্ষে। তুমি কলম ধরো মায়ের কোলে রক্তাক্ত শিশুর লাশ দেখে। গাজায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া বসতবাড়ি, হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তুমি কলম ধরো। হায়েনার মতো ইসরাইলি সেনাদের উদোম উল্লাসের বিরুদ্ধে তোমাকে দাঁড়াতে দেখি। তোমার হাতে একে-৪৭ এর চেয়েও ধারালো অস্ত্র, সে তোমার কলম। প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হত্যার বিরুদ্ধে তোমার কলম সোচ্চার। গাজায় মানুষের আর্তনাদের পক্ষে তোমার কলমকে কাঁদতে দেখি। বন্ধু তুমি সাংবাদিক বলেই তোমার কলমের দিকে তাকিয়ে থাকি। প্রতিটি ভোরে আলো ফুটতেই তোমার লেখা পড়ার জন্য অধীর আগ্রহ আমাদের। তোমাকে দেখি গরুর মাংস ঘরে রাখার অভিযোগে বাড়িতে ঢুকে আখলাক হুসেইনকে পিটিয়ে মেরে ফেলার বিরুদ্ধে কলম ধরতে। ফেলানী বেগমের লাশ তারকাঁটায় ঝুলে থাকার খবর জানিয়ে দাও তুমি। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে তোমার কলম। কাওরান বাজারে পণ্যের দাম বাড়া-কমা সব তোমার কলম জানে। সিন্ডিকেটের গূঢ় রহস্য সামনে আসে তোমার কলমে। বাসভাড়ায় অনিয়ম তুমিই জাতির সামনে তুলে ধরো। বন্ধু, এ জন্যই তুমি সাংবাদিক। তুমি সততার পক্ষে। অনিয়মের সামনে অভেদ্য দুর্গ তুমি। সততার পক্ষে বাহবা দিতে দেখি তোমাকে। ফলাও করে প্রচার করো কোনো সততার কাহিনী। তুমি বলো সফলতার গল্প। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কষ্টগাঁথা। তোমাকে ছুটে যেতে দেখি নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের কাছে। তুলে আনতে দেখি তাদের জীবন কাহিনী। পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তুলে আনো টুকরো টুকরো সংস্কৃতি, প্রকৃতি আর জীবনালেখ্য। সভ্য সমাজের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দাও তুমি। তোমার কারণেই দেশের বাকি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেতুবন্ধন রচনা হয় তাদের। গারো, মারমা, মুরং, হাজং, কুকি, চাকমা- সবাইকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করো তুমি। দূর পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করলেও তাদেরকে মূলস্রোতের সঙ্গে মিলিয়ে দাও তুমি। বন্ধু, তুমি আকাশের কথা বলো। তুমি ছায়াপথের গল্প শোনাও। তুমি মঙ্গলগ্রহে মানববসতির সম্ভাব্যতা নিয়ে আশার বাণী শোনাও। প্রসারিত মহাকাশে নতুন নতুন আবিষ্কারের তথ্য জানাও। কবে, কখন ধূমকেতু, গ্রহাণুপুঞ্জ ছুটে আসবে পৃথিবীর দিকে- তাও জানাও তুমি। সাগরতলের তথ্য, আগ্নেয়গিরি, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত- সবই তো তুমি জানাও। বন্ধু, তুমি সাংবাদিক- তাই জাতি তোমাকে সম্মান করে। তোমাকে ভালোবাসে। তুমি সাংবাদিক বলেই একজন আদর্শবান শিক্ষকের ছবি ছাপা হয় খবরের কাগজে। নিভৃতে জনসেবা করে যাওয়া অসংখ্য নাম জানা না জানা মানুষকে খুঁজে খুঁজে বের করে তোমার কলম। হ্যাঁ বন্ধু, তোমার কলমের কারণেই তাদের কারও কারও ভাগ্যে জুটে যায় যোগ্য পাওনা। যোগ্য বলি কেন, যতটুকু তাদের প্রাপ্য- তা ওই পাওনা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। তবুও তোমার কলমের জোরে তারা কিছুটা সম্মান পেয়ে যান। মানবতা ফেরি করে বেড়ান যারা, তারা কোনো বিনিময় পাওয়ার জন্য এ কাজ করেন না। আবার এই নাম নিয়ে যারা অর্থ বানানোর অসৎ ফন্দি আঁটে- তাদের মুখোশও খুলে দেয় তোমার কলম। কি জাদু আছে বন্ধু তোমার কলমে! বেছে বেছে সব ভালো আর মন্দ বের করে নিয়ে আসে সে! যখন সবকিছু বন্ধ, চারদিক অন্ধকার, ইন্টারনেট নেই, একবিংশ এই শতকে এসে চারদিক নিকষ অন্ধকারে- তখনো তুমি আলো খোঁজ! তোমার কলম সার্চলাইট হয়ে ওঠে। কোণে কোণে লুকানো সত্য, গোপন কথা, সবই তোমার কলম জানে। তুমি নির্ভয়ে যদি বলে যেতে পারো- তবেই তুমি সাংবাদিক। না, তাতে কারও পক্ষ নেয়ার, বিপক্ষে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তো! তোমার কলম এসব মানে, জানে- তাই তুমি সাংবাদিক। তুমি সাংবাদিক বলেই তোমাকে সালাম। সমাজের ফিল্টার তোমার কলম। সমাজ থেকে সব অধঃক্ষেপ আলাদা করে তোমার ফিল্টার। তারপর একটি নির্মল সমাজের স্বপ্ন দেখায়। তাই তোমার প্রতি শ্রদ্ধা। তুমি সাংবাদিক।