নির্বাচিত কলাম
ইন্টারনেট বন্ধের সুফল ও কুফল
শামীমুল হক
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবারএনালগ যুগ শেষ হয়েছে নব্বইয়ের শেষদিকে। এরপর মানুষ দিনে দিনে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। এখন আধুনিক থেকে অত্যাধুনিক সিস্টেম যোগ হয়েছে। দেশে স্যাটেলাইট যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে মিডিয়া জগতে ডিজিটাল সিস্টেম আলোড়ন তুলেছে। একেবারে বদলে গেছে কাজের ধরন। এনালগ যুগে রাত তিনটা থেকে চারটা পর্যন্ত কাজ শেষে সাংবাদিকরা বাড়ি ফিরতেন। ভোরে পত্রিকা ছাপা হতো। এরপর এ পত্রিকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতো। কোনো কোনো জেলায় আজকের পত্রিকা পাঠকরা হাতে পেতেন পরদিন কিংবা তারও পরদিন।
বিজ্ঞাপন
গত ১৬ই জুলাই থেকে নেট স্লো হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে নেট একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। আর শুক্রবার রাত থেকে দেশে শুরু হয় কারফিউ। কোটা সংস্কার দাবিতে দেশ জুড়ে শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি, আর সারা দেশে কারফিউ জারি থাকার মধ্যে নেট পুরোপুরি বন্ধ থাকায় মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশ কার্যত বিচ্ছিন্ন। এতে ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেনে চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। রেমিট্যান্স আসার পথও বন্ধ হয়ে পড়ে। আমদানি পণ্যও ছাড় করা যাচ্ছে না। অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের কাস্টমস শুল্কায়ন কার্যক্রম। অন্যদিকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ই-কমার্স খাত। বিক্ষোভের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া দ্রুতগতির ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় ইন্টারনেটভিত্তিক মোবাইল আর্থিক সেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেশের ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পুরোপুরি ইন্টারনেটনির্ভর। আমদানি-রপ্তানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার জন্য বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ই-মেইলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। এক্ষেত্রে ই-মেইলে প্রয়োজনীয় নথিপত্রও পাঠাতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিদেশি ব্যাংক ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিদেশি ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীরা বৈধ পথে দেশের ব্যাংকগুলোয় রেমিট্যান্স পাঠান। আন্তর্জাতিক লেনদেন সিস্টেম সুইফটের মাধ্যমে আসা রেমিট্যান্সের বার্তা বিটিআরসি গেটওয়ে হয়ে দেশে আসে। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সেসব বার্তা নিশ্চিত করা হলে তবেই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্সের অর্থ জমা হয়। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় রেমিট্যান্স আসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। খবর বেরিয়েছে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে সার্ভার কাজ করছে না। ফলে বন্দর ও কাস্টমসে আমদানি ও রপ্তানি সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ থাকায় ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল সেবার অনলাইন লেনদেন বন্ধ রয়েছে। এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারছে না গ্রাহকরা। মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকায় লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। বিপাকে পড়েছেন মোবাইলে আর্থিক সেবাপ্রদানকারী এজেন্টরা। ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় তারা ই-মানি সুবিধা নিতে পারছেন না। ফলে অনেক এজেন্ট ক্যাশ ইন সেবা দিতে পারছেন না। নেট সমস্যাটা শুরু হয় ১৭ই জুলাই থেকে। তখন নেট চলছিল একেবারে স্লো। কিন্তু পরদিন ১৮ই জুলাই রাত থেকে ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর দিন শুক্রবার ১৯শে জুলাই রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ কার্যকর করা হয়। যা এখনো চলছে। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধের সুফল আর কুফল নিয়ে ভাবলে কোন্টা যে এগিয়ে যাবে তা পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন।
মন্তব্য করুন
নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন
নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত
১
বেহুদা প্যাঁচাল/ মেট্রোরেল: যে আশা পূরণে ব্যর্থ
২
বেহুদা প্যাঁচাল/ যেভাবে পতনের দরজা খোলেন হাসিনা
৩
সা ম্প্র তি ক/ পিতা ও কন্যার পরিণতি
৪
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ আওয়ামী ব্যান্ডওয়াগন এফেক্ট ও চিন্তার দাসত্ব
৬
সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ/ বিস্ফোরণের জন্য প্রস্তুত ছিল বাংলাদেশ
৮
খোলা চোখে/ ‘যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন, কেষ্টা বেটাই চোর’
৯
হালফিল বৃত্তান্ত/ জেনারেল আজিজ, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, অতঃপর
১০