ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

দুনিয়ার পথে

বাইডেনের সৌদি সফর এবং রাশিয়া

ব্রায়ান বেনেট
১৬ জুলাই ২০২২, শনিবার
mzamin

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় নিজের প্রচারণায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার কারণে সৌদিকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার কথাও বলেন তিনি। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানই যে খাসোগি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই তথ্যও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন বাইডেন।  তবে সেদিন গত হয়েছে অনেক আগেই। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন বাইডেন। এই সফরে এ অঞ্চলের মানবাধিকার নিয়ে তার পূর্বেকার অবস্থান আর দেখা যাচ্ছে না। হোয়াইট হাউস এখন মনে করছে, যেকোনো উপায়েই হোক তার পুরনো বন্ধু সৌদি আরবকে তাদের প্রয়োজন। মূলত ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনই যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান পরিবর্তনের আসল কারণ। দেশটি এখন রাশিয়াকে শাস্তি দিতে বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ, প্রচারণা চালাচ্ছে। এই যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও রাশিয়ার সঙ্গে রেষারেষি যে নতুন যুগে পা দিয়েছে তা অস্বীকারের সুযোগ নেই যুক্তরাষ্ট্রের।

বিজ্ঞাপন
আর সে কারণেই মিত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রয়োজন দেশটির। একই কারণে বাইডেনকে তার সেই পূর্বেকার কথাগুলোকে গিলে ফেলতে হচ্ছে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সফর শেষে তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় পৌঁছেছেন। সেখানে তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর একটি সম্মেলনে যোগ দেবেন। ওই সম্মেলনে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের মুখোমুখি হতে হবে তাকে।

 সে সময় বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের কথা চিন্তা করবেন নাকি সৌদি আরবের মানবাধিকার রেকর্ড তুলে ধরবেন তার দিকেই নজর পুরো বিশ্বের।  পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া ধুঁকছে। রাশিয়াকে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাংশ। কিন্তু দেশটির আছে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। নিজেদের অর্থনীতির ক্ষতি না করে তাই রাশিয়াকে শাস্তি দেয়া অসম্ভব পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য। এরইমধ্যে অনেক পশ্চিমা মিত্র দেশই রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। সিরিয়ার কারণে যে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ইসরাইল রয়েছে, তা থেকে নিশ্চিন্তে থাকতে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে দেশটি। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক দারুণ রাখায় সৌদি আরবেরও স্বার্থ রয়েছে। সৌদি আরব তেলভিত্তিক অর্থনীতির দেশ, অন্যদিকে রাশিয়া বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। বিশ্বের জ্বালানি বাজারে প্রভাব বৃদ্ধিতে তাই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার প্রয়োজন রিয়াদের।  তবে সৌদি-রাশিয়া সম্পর্ক এখনো সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মতো গভীর নয়। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের মিত্র রাষ্ট্র। অপরদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক ছিল বৈরী। আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ মেনে নিতে পারেনি দেশটি। ১৯৯২ সালে যদিও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়। তবে সেটি কখনো বন্ধুত্বে পরিণত হয়নি।  এর মানে এই না যে, সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র যা বলবে তা তারা মেনে নেবে। ২০১৬ সাল থেকেই ক্রমশ নিজেদের কাছাকাছি আসছে সৌদি ও রাশিয়া। 

 

 

তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংগঠন ওপেকে যোগ দিতে রাশিয়াকে রাজি করায় সৌদি আরব।  রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে চলেছে। গত জুন মাসে ওপেক সিদ্ধান্ত নেয় তারা তেল বিক্রি বৃদ্ধি করবে। কিন্তু এখনো উৎপাদন টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। এই অঞ্চলে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি হলে সেটি যুক্তরাষ্ট্রের তেলের বাজারে প্রভাব ফেলতে কয়েক মাস সময় লাগবে। কিন্তু মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে বাইডেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম হ্রাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলেছে সৌদি আরব। আর এটিই রাশিয়ার জন্য সৌদির কাছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে। মানবাধিকার ইস্যুকে গুরুত্ব দেয়ার কারণে সৌদি আরবও অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। ফলে এই সম্পর্কে প্রায়ই ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি হচ্ছে আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন লাফিয়ে গিয়ে সেই স্থানটি দখল করে নিচ্ছেন। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে সৌদি আরবকে দেয়ার মতো কিছুই নেই রাশিয়ার। 

তবুও বড় স্টেজে খেলার দারুণ অভিজ্ঞতার কারণে পুতিন এই খেলায়ও ভালো করছেন।  মার্কিন সামরিক কৌশল বিশেষজ্ঞ ব্রাডলি বোম্যান বলেন, রাশিয়ার পাশাপাশি চীনের উত্থানের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা জানি, রাশিয়া কখনো মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে যায়নি, চীনও সেখানে সক্রিয় হচ্ছে। অর্থনৈতিক এবং কূটনীতিক সবদিক থেকেই চীন সেখানে যুক্ত হচ্ছে। চীন জিবুতিতে প্রথমবারের মতো বিদেশে যে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করেছে তা মার্কিন ঘাঁটি থেকে একদমই কাছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রকে যদি এই বড় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হয় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে হবে। এর মানে এই না যে, যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু ওয়াশিংটন যদি আরব দেশগুলোর সঙ্গে কোনো সামরিক সম্পর্কই না রাখে তাহলে চীন ও রাশিয়া সেই সুযোগ নেবে। 

 বাইডেনের পর আগামি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন ভ্লাদিমির পুতিনও। তিনি প্রথমে ইরান এবং পরে তুরস্ক সফর করবেন। সেখানে তিনি এই দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনায় বসবেন। এরইমধ্যে বাইডেন প্রশাসন উদ্বেগ জানিয়েছে যে, ইরান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করতে ড্রোন বিক্রি করতে যাচ্ছে। ওই যুদ্ধের প্রেক্ষিতেই ইরানকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা সৌদি আরবকে আরও কাছে দরকার বাইডেনের। এ নিয়ে বোম্যান বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন চাইবেন ওপেক এবং সৌদি আরব আরও বেশি তেল উৎপাদন করুক। এতে করে জ্বালানির দাম আরও হ্রাস পাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংকট দূর হবে। কিন্তু আপনি যদি একতরফা সৌদির সমালোচনা করতে থাকেন এবং বারবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলতে থাকেন তাহলে যখন আপনার সাহায্য প্রয়োজন হবে তখন তারা আপনার জন্য তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেবে না। 

(যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ম্যাগাজিন টাইমস-এ প্রকাশিত লেখা থেকে অনূদিত)

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status