খেলা
মার্কিন মুল্লুকের ‘ক্রিকেট সূর্য’ ডুবছে ক্যারিবিয়ান সাগরে
ইশতিয়াক পারভেজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে
২৯ জুন ২০২৪, শনিবারবেসবল, রাগবি, ফুটবল এই সব খেলা মার্কিন মুল্লুকের মানুষের প্রাণ। সেখানেই উঠেছিল ‘ক্রিকেটের সূর্য’। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘ক্রিকেট’ শব্দটা ভাবিয়েছে মার্কিনিদের। ক্রিকেট শুনলেই প্রশ্ন ছিল খেলাটি বেসবলের মতো। একেবারে ক্রিকেট না জানা লোককে বোঝাতে হতো বেসবলের উদাহরণ দিয়েই। তারাও ভাবতো, এ নিয়ে আপন মনে বিড়বিড় করতো। নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্রথম আসরেই খেলেছে সুপার এইটে, এই তথ্য হয়তো জানে না বেশির ভাগ আমেরিকান। এখন তারা আক্রান্ত কোপা আমেরিকা জ্বরে। প্রথমবার ২০ ওভারের ফরম্যাটে যে সূর্য উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রে তা আজ বিদায় নেবে ক্যারিবিয়ান সাগরে। তার আগে কে হবে চ্যাম্পিয়ন তা নিয়ে এখন যত চিন্তা এশিয়া আর আফ্রিকায়! প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে বড় সুযোগ।
বাংলাদেশকে হারিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠে আফগানিস্তান। টাইগারদের হারে সমীকরণের ফাঁদে পড়ে আসর থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় ২০২১’র চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার। তার আগে বিদায় নেয় সাবেক চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা। শিরোপাধারী ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ১০ বছর পর ফাইনালে ওঠে ভারত। যাকে দেশটির আলোচিত মুভি ‘লাগান’-এর বাস্তব রূপের সঙ্গে তুলনা করছে ভারতীয়রা। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়নরা তাদের হারানো মুকুট নিজেদের রাজত্বে ফিরিয়ে নেয়ার অপেক্ষায়। আর সবাইকে চমকে ‘চোকার’ বদনাম মেটাতে প্রস্তুত প্রোটিয়ারা।
ফুটবল যতটা জনপ্রিয় ইউরোপ-আমেরিকাতে ক্রিকেট তার ধারের কাছেও নেই। যে কারণে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে প্রথমবারের মতো ২০ দল নিয়ে আয়োজন করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। বেসবলের দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে এই আসরে প্রথম বারের মতো যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে থাকে মূল আয়োজক ‘ক্রিকেটের বিশ্ববিদ্যালয়’ খ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেখানে মানুষ ক্রিকেট খায় আর ক্রিকেট ঘুমায়। তবে এশিয়ানদের মতো আবেগে ভাসে না তারা। জিতলে খুশি আর না জিতলেও ক্ষতি নেই। হেলেদুলে তা বরণ করে নিয়ে তারা থাকে নতুন কিছুর অপেক্ষায়। নিজেদের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার এইট থেকে বিদায় নেয়ার পরও তাদের মাঝে তার তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ খেলাটাই যে তাদের আনন্দ তাই হার-জিতটা খুব সহজেই মেনে নেয় তারা। কিন্তু ব্যতিক্রম এশিয়াতে। ক্রিকেট মানেই এখানে টানটান উত্তেজনা। জয় হলে ঠিক আছে। পরাজয় মেনে নেয়া যে তাদের জন্য বেশ কঠিন। অন্যদিকে আইসিসি জানিয়েছিল, টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া শুরুর পর গেল দু’দিনে ১২ লাখ মানুষ আবেদন করেছেন। গোটা বিশ্ব থেকেই খেলার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। আমেরিকা এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ৯ লাখ মানুষ আবেদন করেছেন। নতুন নতুন এলাকায় ক্রিকেট যে ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে, এটাই তার প্রমাণ ভাবছে আইসিসি। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ১লা জুন আসরের পর্দা ওঠার পর থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় একটা অংশ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও এবার নেপালের হয়েছে গণজোয়ার। ফাইনালেও মাঠে একই শঙ্কা! দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থকরা কতটা গ্যালারির জায়গা দখল করবে তা নিয়ে আছে সংশয়। বার্বাডোসে ফাইনাল দেখতে যাওয়া খুব সহজ নয়। চারদিকে বিমানের টিকিটির হাহাকার। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে পৌঁছানো এখন যুদ্ধের মতো। সরাসরি বিমান নেই। এরপরও সেখানে পথে পথে এখন ভারতীয়দের উৎসব। জানা গেছে সমর্থকরা মিলে বিমান ভাড়া করে খেলা দেখতে যাচ্ছে। আর যারা সেখানে গেছেন তারা গতকাল থেকে পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, স্লোগান দিয়ে দলকে সমর্থন জানাচ্ছেন ঘুরে ঘুরে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর আগে পুরুষদের দুটি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক তারা। এ ছাড়া নারীদের দুটি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে ক্যারিবীয়রা। প্রথম আসরে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারত শিরোপা জিতেছিল টি-টোয়েন্টির। এরপর ১৭ বছর ধরে তারা আপেক্ষায় তাদের হারানো শিরোপা ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু তাদের সামনে নতুন ইতিহাস লেখার চ্যালেঞ্জ দক্ষিণ আফ্রিকার। এরই মধ্যে প্রথম ফাইনালে উঠার পরীক্ষায় পাশ করেছে। এবার ইতিহাসের অপেক্ষা।
দুই দেশের মোট ৯টি ভেন্যুতে বিশ্বকাপের খেলার আয়োজন হয়। ডালাস, ব্রিজটাউন, প্রভিডেন্স, নিউ ইয়র্ক, লডারহিল, নর্থ সাউন্ড, গ্রস আইলেট, কিংসটন ও তারউবা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে ২০টি দেশ অংশ নেয়। আয়োজক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা আট দল সরাসরি খেলার সুযোগ পায়।