ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

খেলা

বিদায় দুই মহিরুহের

সৌরভ কুমার দাস
১ জুলাই ২০২৪, সোমবারmzamin

 বিরাট কোহলি পুরো টুর্নামেন্ট থাকলেন নিজের ছায়া। ফাইনালে খেললেন ম্যাচ সেরা ইনিংস। রোহিত শর্মা পুরো টুর্নামেন্টে দারুণ খেললেন, ফাইনালে ফিরলেন আগেভাগে। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতকে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়ে একই সঙ্গে এই সংস্করণকে বিদায় বলে দিলেন ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই জুটি। রোহিত শিরোপা জিতে শুরু করেছিলেন, আর কোহলি জিতে শেষ করলেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে সফল দুই ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের এই দুই মহীরূহ। সর্বোচ্চ রানের দিকে তারাই প্রথম ও দ্বিতীয়। 

২০০৭ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় রোহিত শর্মার।  ৩ মাস পর টি-টোয়েন্টির প্রথম বিশ্বকাপ মাঠে গড়ায়, যেখানে শিরোপা জেতে ভারত। ওই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন রোহিত। তখন অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ধারে কাছেও ছিলেন না কোহলি।

বিজ্ঞাপন
পরের বছর তার অধীনে যুব বিশ্বকাপ জেতে ভারত। তার কয়েক মাস পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়।

এর মধ্য কেটে গেছে ১৭ বছর, ৭টি বিশ্বকাপ খেলেও শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পারেনি ভারত। অবশেষে সেই অপেক্ষা শেষ হলো তাদের। সেই অপেক্ষা শেষ হতেই টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিলেন রোহিত-কোহলি। 

রোহিত টি-টোয়েন্টিতে আর কোহলি ক্যারিয়ারের শুরুতে জেতেন ওয়ানডে বিশ্বকাপ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাটা অধরাই ছিল কোহলির। ২০১৪ সালে ফাইনালে গিয়েও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারতে হয় ভারতকে। সেদিন ৫৮ বলে ৭৭ রান করেন তিনি। ৬ ম্যাচে করেন ৩১৯ রান, হন আসর সেরা। পরের আসরে আরও দুর্দান্ত ছিলেন কোহলি। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার ইনিংস এখনও সবার চোখের সামনে ভাসে। ৫ ম্যাচে করেন ২৭৩ রান। সেবারও টুর্নামেন্ট সেরা পুরস্কার ওঠে তার। কিন্তু শিরোপা জেতা হয়নি তার।  টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি কিনা দুইবার (২০১৪ ও ২০১৬) আসর সেরা হয়েছেন।

চলতি আসরে ছন্দে ছিলেন না, প্রথম ৭ ইনিংসে করেন মাত্র ৭৫ রান। তবে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও কোচ রাহুল দ্রাবিড় আশা করেছিলেন ফাইনালে ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবেন কোহলি। ঠিক তাই হলো। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে ধাক্কা সামলালেন। তার ব্যাট থেকে এলো ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। যেখানে হাঁকান ৬ চার ও ২ ছক্কা।

বয়স হয়ে গেছে ৩৫, ৩ মাস পর হবে ৩৬! বুঝে গেছেন এই ফরম্যাটে তার পথচলা শেষ। ম্যাচ শেষে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার হাতেই জানিয়ে দিলেন টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে এটাই তার শেষ ম্যাচ।

ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে কোহলি বলেন,  ‘এটা আমার শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং এটি আমরা অর্জন করতে চেয়েছি। এটা ভারতের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সময় এখন টি-টোয়েন্টিতে পরবর্তী জেনারেশনকে সুযোগ দেওয়া। এখন অথবা কখনোই নয়-ভারতের হয়ে আমার শেষ টি-টোয়েন্ট্তিসবটুকু কাজে লাগাতে চেয়েছি।’

ঠিক ১৪ বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেন কোহলি। ২০১০ সালের জুনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই সংস্করণে ভারতের জার্সি গায়ে প্রথমবার খেলতে নামেন তিনি। যখন বিদায় নিলেন তখন বিশ্বকাপের সফচেয়ে সফল ব্যাটার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ১২৯২ রান কোহলির, গড় ৫৮.৯২। ১৫টি ফিফটিও আছে তার। 

এ নিয়ে ছয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেললেন কোহলি, যার শুরুটা হয়েছিল ২০১২ সালে। এক যুগের দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে এই সংস্করণের বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেলেন তিনি। 

সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের হয়ে ১২৫ ম্যাচে খেলেছেন কোহলি। ১৩৭.৯৪ স্ট্রাইক রেট ও ৪৮.৬৯ গড়ে রান করেছেন ৪ হাজার ১৮৮। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে ফিফটি করেছেন ৩৮টি। ভারতের জার্সিতে টি-টোয়েন্টিতে তার বেশি রান আছে শুধু রোহিত শর্মার ৪২৩১।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এই সংস্করণে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন কোহলি। এবারের বিশ্বকাপে তাকে ছাড়িয়ে যান তার সতীর্থ ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ১৫৯ ম্যাচে রোহিতের রান এখন ৪ হাজার ২৩১।

বিরাট কোহলির অধিনে ভারত ভালো করলেও আইসিসি শিরোপা দেখা মিলছিল না। অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় রোহিতকে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তার অধীনে ওয়ানডে ও টেস্টের বৈশ্বিক আসরের ফাইনালে গেলেও শিরোপা জেতা হয়নি ভারতের। 
সেই রোহিতের অধীনে অবশেষে ১৩ বছরের বিশ্বকাপ খরা কাটায় ভারত। পুরো আসরেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। করেছেন ২৫৭ রান। ফাইনালে তিনি না পারলেও যার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন সেই কোহলি ঠিকই পুষিয়ে দিয়েছেন। শিরোপা জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে ট্রফি পাশে রেখেই অবসরের ঘোষণা দেন রোহিত। তিনি বলেন, ্তুএটা আমারও শেষ টি-টোয়েন্টি (ভারতের জার্সিতে) ছিল। এই সংস্করণ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারে না। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। এই সংস্করণ দিয়েই ভারতের হয়ে খেলা শুরু করেছিলাম। এটাই চেয়েছিলাম, ট্রফিটা জিততে চেয়েছিলাম।’

ভারতের সবচেয়ে সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটার রোহিত। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৯ ম্যাচে ৪২৩১ রান তার। এই সংস্করণে সর্বোচ্চ ৫টি সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি।এবারের বিশ্ব

কাপেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান রোহিতের। ৮ ইনিংসে ২৫৭ রান করেছেন ১৫৬.৭০ স্ট্রাইক রেটে। টি-টোয়েন্টিতে রোহিতের অভিষেক ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে। খেলেছেন সব কটি বিশ্বকাপেও, যে কীর্তি আর আছে শুধু বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের। ১২২০ রান করে বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি, আছে ১২টি ফিফটিও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান কোহলির (১২৯২)।

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

খেলা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status