খেলা
হামজা জামালদের সঙ্গে খেলার স্বপ্ন মেসিভক্ত ফয়সালের
এম মাহীউজ্জামান শাওন
২৫ মে ২০২৫, রবিবার
নাজমুল হুদা ফয়সাল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল দলের অধিনায়ক। অরুণাচলে আয়োজিত সদ্য সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ খেলেও ফাইনালে টাইব্রেকারে স্বাগতিক ভারতের কাছে শিরোপা হারায় বাংলাদেশ। তবে আসরে বল পায়ে নজর কাড়েন ফয়সাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে ফয়সাল নিজের বেড়ে ওঠা ও ফুটবল নিয়ে তার স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন দৈনিক মানবজমিনের সঙ্গে আলাপচারিতায়। সেই কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-
ফুটবলে এলেন কীভাবে?
ফয়সাল: আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মজলিশপুর গ্রামে। লিওনেল মেসি ও কেভিন ডি ব্রুইনার (বেলজিয়ান মিডফিল্ডার) খুব ভক্ত আমি। ছোটবেলা থেকেই তাদের খেলা দেখতাম। মেসির ড্রিবল, কেভিন ডি ব্রুইনা কীভাবে অ্যাসিস্ট করেন তা ফলো করতাম। তাদের মতো খেলার চেষ্টা করতাম। আমার ফুটবলের হাতেখড়ি এলাকার কোচ শাহআলম স্যারের কাছে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা স্টেডিয়ামের ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমির কোচ মো. শওকত আলী স্যারের কাছে শিখেছি। সেখান থেকে বিকেএসপির ট্রায়ালে ডাক পাই। করোনা মহামারীর কারণে আর সেখানে যাওয়া হয়নি। করোনার পর এলিট একাডেমির ট্রায়ালে ও জেলা পর্যায় থেকে ধাপে ধাপে ঢাকায় খেলার সুযোগ পাই। এলিট দলে থাকাকালীন ২০২১-২২ মৌসুমে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে (বিসিএল) খেলি। ২০২৩ এ অনূর্ধ্ব-১৬ এবং ২০২৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের অধিনায়কত্ব করি।
সাফে অধিনায়ক ফয়সালকে দেখা গিয়েছে গোল করা এবং গোল করানোর জন্য মরিয়া-
ফয়সাল: অনূর্ধ্ব ১৭ কিংবা আগের সাফ যখন খেলেছিলাম তখন কোনো গোল পাইনি। শুধু অ্যাসিস্ট ছিল। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ এ আমার নিজের একটা টার্গেট ছিল। যেভাবেই হোক টিমে অধিনায়ক হিসেবে আমার একটা অবদান রাখতেই হবে। চেষ্টা ছিল প্রত্যেকটা ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে শেষ করার। তবে ফাইনালে সেই জিনিসটা করা ভাগ্যে ছিল না।
সাফের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে শট মিস করেছেন। সেটা নিয়ে আফসোস আছে?
ফয়সাল: দলে যখন এর আগে পেনাল্টি হয়েছে। কোচ আমাকেই দিয়েছেন। আমার এর আগে কখনও মিস হয়নি। তবে সেদিন টাইব্রেকার মিস করার পর মনে হচ্ছিল ভাগ্য আমার প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে।
সাফে ফয়সাল, মুরশেদের ক্যামিও লক্ষ্য করা গেছে। ফরোয়ার্ড মুরশেদ আলীও নজর কেড়েছেন। আপনাদের বোঝাপড়া নিয়ে কী বলবেন?
ফয়সাল: মুরশেদ এবং আমি অনেক আগে থেকেই একসঙ্গে খেলছি। শুরুটা হয়েছিল আমাদের বিকেএসপি থেকে। এরপর বয়সভিত্তিক দলেও তার সঙ্গে আমার অনেক ম্যাচ খেলা হয়েছে। বোঝাপড়ার জন্যই নিজেদের মধ্যে খেলাটা অনেক ভালো হয়েছে। শুধু সে নয়, দলে সবার মধ্যেই বন্ডিং ছিল। সবাইকে আমি সম্মান করি তবে মুরশেদ যেভাবে খেলেছে ওর কাছেই বল রাখার চেষ্টা করেছি।
সাফের ফাইনালে রেফারি আপনার গোল বাতিল করলেন। আপনার কী মনে হয়?
ফয়সাল: রেফারি যদি একটা ডিসিশন দিয়ে ফেলেন তাহলে সেটা পরিবর্তনের তেমন সুযোগ নেই। যেহেতু ম্যাচে ভিএআর নেই। দলের প্লেয়াররাও বলেছিল আমরা কোনো ফাউল করিনি। আমি এরপরও রেফারিকে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু রেফারির সিদ্ধান্তটা স্বাগতিক ভারতের পক্ষে গেল। এখনও ম্যাচটার কথা মনে করলে চোখ দিয়ে পানি আসে। ফুটবল আমাদের আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। বিষয়টি খুবই খারাপ লাগে শেষ মুহূর্তে দেশের জন্য একটা ট্রফি আনতে পারিনি আমরা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
ফয়সাল: ফুটবলের উন্নয়ন করতে হলে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। প্রথমে আমাদের চিন্তা থাকতে হবে কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা হবো। এরপর এশিয়া এরপর বিশ্বকাপের চিন্তা নিয়ে আগানো উচিত। অনেক আলোচনা হয়। এগুলো কারও পক্ষে হোক, কারও বিরুদ্ধে হোক সবসময় সত্যটা সামনে আনতে হবে। ফুটবল ফেডারেশন যথেষ্ট চেষ্টা করছে বলে আশা করি। বাফুফেকে জুনিয়র দলগুলোর দিকে আরও বেশি নজর দেয়া উচিৎ। এখানে একটা উদাহরণ দেই, আমরা যখন ২০২৪ সালে ভারতে খেলতে যাই। তখন ভারত দল আমাদের সঙ্গে খেলার আগে স্পেনে ক্যাম্প করে এসেছিল। ইন্দোনেশিয়া অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সঙ্গে খেলে এসেছিল। সাফের প্রত্যেক ম্যাচই বলতে গেলে নকআউট ম্যাচ। আমরা বাইরে গিয়ে যে কন্ডিশনে খেলি সেখানে আমাদের প্রস্তুতি ম্যাচের ঘাটতি থাকে। ওই কন্ডিশনে মাঠে নামার আগে আমাদের প্রস্তুতি ম্যাচ বেশি বেশি খেলা উচিৎ।
জাতীয় দলে হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজীদের সঙ্গে খেলার স্বপ্ন দেখেন নাকি!
ফয়সাল: অবশ্যই। এগুলো নিয়ে চিন্তা করাও একটা ‘ড্রিম’ আমার জন্য। যেহেতু জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি তাই হামজা চৌধুরী, জামাল ভূঁইয়াদের সঙ্গে মিডফিল্ডে খেলাও আমার জন্য একটা স্বপ্ন।