শেষের পাতা
অনলাইনে কোরবানির পশু কেনায় আগ্রহ কম
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ জুন ২০২৪, শুক্রবারকোরবানির পশু বিক্রির বিকল্প মাধ্যম অনলাইন। স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও রয়েছে পশুর হাট। বিভিন্ন খামারিরা এসব হাটে গরু কেনাবেচা করে থাকেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও অনেকে বেছে নিচ্ছেন পশু বিক্রির জন্য। করোনা মহামারির সময় থেকেই অনলাইনে পশু কেনাবেচার বিষয়টি সামনে আসে। এরপর থেকেই খামারিরা অনলাইনে পশু বিক্রিতে আগ্রহ দেখালেও ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের আগ্রহ কম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনলাইনে পশু কেনার সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে অসুবিধাও। অনলাইনে মূলত পশুর ছবি কিংবা ভিডিও দেখে টাকা পরিশোধ করা হয়। পরে ক্রেতার ঠিকানা অনুযায়ী পশু পৌঁছে দেন বিক্রেতারা। অনেক ক্ষেত্রে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পশু লালন-পালন কিংবা পশু কোরবানি করে তা প্যাক করে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। এছাড়া অনলাইনে অর্ডার দেয়ায় পশুর হাটে গিয়ে ভিড়ের মধ্যেও পড়তে হয় না ক্রেতাদের। দিতে হয় না হাসিল। এসব সুবিধার পাশাপাশি অনলাইনে পশু কেনায় অন্যতম অসুবিধা প্রতারণা। অনলাইনে দেখানো ছবির সঙ্গে ডেলিভারি দেয়া পশুর সঙ্গে মিল না থাকায় প্রতারিত হন ক্রেতারা। এছাড়া পশুর সঠিক আকার, ওজন বুঝতে না পারাও অনলাইনে পশু কেনার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। এসব কারণে এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে না অনলাইন পশুর হাটগুলো। অনেকে আবার অনলাইনে পশু দেখে সেটি ক্রয়ের জন্য সরাসরি খামারিদের কাছে যাচ্ছেন। সেখান থেকে দরদাম করেও পশু কিনছেন।
২০২২ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পশু বিক্রি শুরু করেন নাফিসা আনজুম খান। শুরুর দুই বছর মুনাফার বিনিময়ে গৃহস্থদের লালন-পালন করা পশু বিক্রি করতেন তিনি। এরপর তিনি আরও ৭ জনকে সঙ্গে নিয়ে একটি খামার করেন। খামারে এখন ২২টি পশু রয়েছে। তবে অনলাইনে পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সাড়া খুবই কম বলে জানান- নাফিসা। তিনি বলেন, অনলাইনে পশু দেখে ক্রেতারা সেটি নির্বাচন করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। অনেক বড় গরু অর্থাৎ ৫-৬ মণ ওজনের গরুও তারা মনে করেন ২-৩ মণ হবে। এতে আমরা হাটের চেয়ে কম দাম বললেও তারা মনে করছে বেশি দাম বলা হচ্ছে। অনলাইন থেকে পশু দেখে ১০ শতাংশ ক্রেতা খামারে আসছেন।
অনলাইনে সাড়া না পেয়ে তার খামারের গরু ঢাকার হাটে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাফিসা। তবে এতে প্রত্যেক গরুতে অন্তত ২০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। গরু নিয়ে হাটে বিক্রি করতে হলে ১৫ হাজার টাকা ও বিক্রির পরে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে হাটে। তিনি বলেন, এই খরচের কারণে হাটে গরুর দাম এমনিতেই বেড়ে যাচ্ছে। অথচ অনলাইন থেকে নিলে ক্রেতার খরচ কমতো। পাশাপাশি বাসায় পৌঁছেও দেয়া হতো। আর হাসিল খরচও সাশ্রয় হতো। অথচ মানুষ ভাবে অনলাইনে পশুর দাম বেশি।
কোরবানি ঘিরে অনলাইনে পশু বিক্রি করে আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেড। এমনকি চাইলে কেউ কয়েকভাগেও পশু ক্রয় করতে পারেন তাদের থেকে। ঈদের দিন তারাই মাংস ভাগ করে ক্রেতাদের কাছে দিয়ে দেন। আদর্শ প্রাণিসেবা লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফিদা হক বলেন, অনলাইনের যেকোনো কিছু ক্রয়ের ক্রেতাই কম। আবার পশুর মূল্যও অনেক। তাই ক্রেতারা অনলাইনে দেখে পশু কেনার সিদ্ধান্ত নিতেও চান না। তারপরও কিছু ক্রেতা পশুর হাটের ভিড়, ময়লা, গন্ধ উপেক্ষা করে পশু কিনতে চান। তারা অনলাইনে পশু দেখে অর্ডার দেন। বিশেষ করে ঢাকার ক্রেতাদের অংশগ্রহণ রয়েছে অনলাইনে পশু কেনার ক্ষেত্রে। দেখেশুনে বিশ্বস্ত অনলাইন থেকে পশু ক্রয় করলে ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে এড়াতে পারবেন।
সরকারের ডিজিটাল হাটের জন্য digitalhaat.gov.bd ওয়েবসাইট চালু করেছে আইসিটি বিভাগ। সেখানে দেশের ৬৪টি জেলায় অনলাইনে পশু বিক্রি করা হয়। ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখা যায়, ৬৪ জেলার জন্য আলাদা ক্যাটাগরিতে পশু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন খামারিদেরও আলাদা ক্যাটাগরি রয়েছে। ওয়েবসাইটে ক্রেতার সুবিধার জন্য ছবি-ভিডিও’র পাশাপাশি পশুর ধরন, বয়স, রঙ, দাঁত, আনুমানিক ওজন এবং মূল্য উল্লেখ করা রয়েছে। একইসঙ্গে পশুর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণ দেয়া রয়েছে। এসব বিজ্ঞাপন সাঁটানো পশুর স্বতন্ত্র একটি কোড উল্লেখ করা রয়েছে। ক্রেতারা পশুর বিজ্ঞাপন থেকে বিক্রেতার তথ্য নিয়ে যোগাযোগ করতে পারছেন। এছাড়া ফেসবুক, ইউটিউব, বিক্রয় ডট কমসহ বিভিন্ন খামারিদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে পশু বিক্রি করা হচ্ছে। যারা এসব মাধ্যমে পশু বিক্রি করছেন তারাও ছবি-ভিডিওসহ পশুর বিভিন্ন তথ্য জুড়ে বিক্রয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।
সম্প্রতি সাইবার প্রতারণা রোধে অনলাইন গরুর হাটগুলোতেও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা রাখার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার টিম। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ডিএমপি’র সাইবার টিম অনলাইনের গরুর হাট নজরদারি করবে। পাশাপাশি ক্রেতাদেরও অনলাইনে গরু সতর্কতার সঙ্গে জেনেবুঝে কেনার অনুরোধ জানান তিনি।