বাংলারজমিন
সদরপুরে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক ৬ মাসে ৫ মৃত্যু
সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
১৩ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবারফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার পদ্মা নদীর তীর ও চরে বসবাস করা মানুষের মধ্যে রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপের আতঙ্কে জেঁকে বসেছে। একের পর এক বিষধর সাপটির দেখা মিলছে উপজেলার নদী তীরবর্তী দিয়াড়া নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। ইতিমধ্যে চরাঞ্চলে এই সাপের কামড়ে ছ’মাসে ঠাণ্ডু মাতুব্বর, আনোয়ার শেখ, শুভা মাতুব্বর, জাহিদ ফকির, শেখ আব্দুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে। এদের মধ্যে দুইজন শিশু ও তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার দিয়াড়া নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদী-সংলগ্ন নন্দলালপুর, হাওলাদার কান্দি চুঙ্গা কান্দি, হকিয়াতপুর, বিশ্বাস কান্দি, কোটি কান্দি, হালিম মাতুব্বরের কান্দি, জব্বর শিকদার কান্দি ও কুদ্দুস মোল্লার কান্দি চর এলাকার শতাধিক কৃষক জমি চাষ করেন। দিয়াড়া নারিকেলবাড়িয়ার বেশির ভাগ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয় প্রতিবার। তাই এই চরে কৃষকেরা ভুট্টা, বাদাম, তিল, আমন ও আউশ ধানের চাষ শুরু করেন। গত শুক্রবার সকালে দুই কৃষক ধান তুলতে গিয়ে এই সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন। তারা দু’জনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নুরুউদ্দিন সরদার কান্দি এলাকার রাজা মল্লিক জানান, গত কয়েকদিনে তিনি তিনটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পেয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকদিন আগে ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামের শেখ খবির নামে এক কৃষকও এই সাপ দেখতে পান। আরও অনেকেই এলাকায় রাসেল ভাইপার সাপ দেখেছেন বলে জানা যায়। দিয়াড়া নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চল জুড়ে এই সাপের কারণে কৃষকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ মাঠে যেতে চাচ্ছে না এবং ধান, ভুট্টা কাটতে শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ নিতে পারে বলেও জানান তিনি।
দিয়াড়া নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নে কয়েক মাসে রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। চরাঞ্চলের আমার ইউনিয়নের, নন্দলালপুর, হাওলাদার কান্দি, কুদ্দুস মোল্লার কান্দি, হালিম মাতুব্বরের কান্দি, জব্বর শিকদার কান্দি, কাচিকাটাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছেন। এ বিষয়ে ইউনিয়নের সকল জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ওমর ফয়সল বলেন, পাঁচজন মারা গেছে এমন কোনো তথ্য আমি পাইনি, পাঁচজনের মধ্যে এই হাসপাতালে কেউ মারা যাননি। হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সাপে কাটা রোগী বা পরিবারের কেউ আতঙ্কিত না হয়ে রোগীকে ওঝার কাছে না নিয়ে সরাসরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা দিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, দিয়াড়া নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রবের কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে কৃষকদের সব সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি ও এই সাপ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রথম অবস্থায় চরাঞ্চলে কৃষকদের বিশেষ জুতা (গামবুট) দেয়া হয়েছে।