বিশ্বজমিন
মোদির মন্ত্রিসভায় বিস্ময়
নির্বাচিত অনেকে বাদ, মন্ত্রী হয়েছেন অনির্বাচিতরাও
মানবজমিন ডেস্ক
১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবারভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে বিস্ময়কর কিছু ঘটনা ঘটেছে। তাতে যেমন কোনো মুসলিমের স্থান হয়নি, তেমনি ৫ বারের নির্বাচিত লোকসভার সদস্যও স্থান পাননি। অন্যদিকে ভিন্ন দল থেকে আসা অনির্বাচিত ব্যক্তি ঠাঁই পেয়েছেন। রোববার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার ৭২ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠিত হয়। মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া একজন এবার বাদ পড়েছেন। তিনি হলেন- হিমাচল প্রদেশের হামিরপুরের অনুরাগ ঠাকুর। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি। এতে বলা হয়, তার আসনটি বিজেপি’র শক্ত ঘাঁটি। তিনি এ আসনে এবার নিয়ে ৫বার নির্বাচিত হয়েছেন। মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে সবচেয়ে প্রথম সারির মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর প্রথমে তাকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ানো হয়। পরে ২০২১ সালে ক্যাবিনেট র্যাংকে উত্তীর্ণ করা হয়। দেয়া হয় তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবারো তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাননি। বিজেপি’র সূত্রগুলো বলেছে, অনুরাগ ঠাকুরকে বাদ দিয়ে সেখানকার দলীয় প্রধান জেপি নাড্ডাকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাহাড়ি ওই রাজ্য থেকে একই সঙ্গে দু’জনকে মন্ত্রী করা যাবে না। অন্যদিকে পাঞ্জাব থেকে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন রাভনীত সিং বিত্তু। তিনি লোকসভায় কংগ্রেস নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। লুধিয়ানা থেকে বিজেপি’র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু সেখানে রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান অমরিন্দর রাজা সিং ওয়ারিংয়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন। বিস্ময়করভাবে পরাজিত এই ব্যক্তিকে মন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি রোববার শপথ নিয়েছেন। এখন তাকে ৬ মাসের মধ্যে হয়তো লোকসভার কোনো আসন বা রাজ্যসভার কোনো আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। বিত্তু হলেন পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিয়ান্ত সিংয়ের নাতি। বিয়ান্ত সিংকে খালিস্তানপন্থি আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে ১৯৯৯ সালে। বর্তমানে পাঞ্জাবে ক্ষমতাসীন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। সেখানে অমরিন্তর রাজা সিংকে মন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়ার অর্থ হলো ওই রাজ্যে শিখ নেতাদের ওপর বিজেপি’র প্রভাব বৃদ্ধি করা। কেরালা রাজ্যে বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক জর্জ কুরিয়েন। সেখানে লোকসভা নির্বাচনে একটি আসনে জয়ের মধ্যদিয়ে কেরালায় বিজেপি তার উপস্থিতি প্রমাণ দিয়েছে। কিন্তু জর্জ কুরিয়েন কোনো হাউজেরই সদস্য নন। কিন্তু রোববার তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তিন দশক ধরে তিনি বিজেপি’র সদস্য। রাজ্যটিতে দলীয় চক্রে তিনি ধরে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ পদ। ন্যাশনাল মাইনরিটিজ কমিশনে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে বিজেপি মন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়ার অর্থ হলো দক্ষিণের এ রাজ্যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছানো। বিহারের পাটনা সাহিব থেকে বড় জয় পেয়েছেন বিজেপি’র বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ। তিনি কমপক্ষে দুই দশক ধরে একজন পার্লামেন্টারিয়ান। কিন্তু তাকে মন্ত্রী বানানো হয়নি। বিজেপি’র আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ৫ম বারের এমপি রাজিব প্রতাপ রুড্ডি টানা তিনবার সরণ আসন থেকে জয়ের পরও মন্ত্রী হতে পারেননি। মোদির তৃতীয় মেয়াদের সরকারে বিহার থেকে মন্ত্রিপরিষদে স্থান পেয়েছেন আটজন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী এবং মোদি সরকারের সাবেক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা দু’জন বর্ষীয়ান নেতা এতে স্থান পাননি। মোদির বিদায়ী সরকারের একজন মাত্র মন্ত্রী এল মুরুগান নির্বাচনে পরাজয়ের পরও নতুন সরকারে স্থান পেয়েছেন। তবে নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর নতুন সরকারে স্থান পাননি সাবেক মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও রাজিব চন্দ্রশেখর। অন্যদিকে নীলগিরি থেকে নির্বাচনে পরাজয়ের পরও তামিলনাড়ুর সাবেক বিজেপি প্রধান শপথ নিয়েছেন। এল মুরুগান এর আগে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর তাকে মৎস্য, পশুপালন ও ডেইরি, তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি রাজ্যসভার একজন সদস্যও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন বিজেপি’র বর্ষীয়ান নেতা পারশোত্তম রুপালা। কিন্তু তাকে তৃতীয় মেয়াদের সরকারে নেয়া হয়নি। গুজরাটের রাজকোট আসনে তিনি বিজেপি’র জন্য বিশাল জয় এনে দিয়েছেন। মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে। তিনিও নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাননি। তিনি শিবসেনা ও কংগ্রেসের সাবেক নেতা। ২০১৯ সালে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। তাকে মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস-এর মন্ত্রী বানানো হয়। রাজ্যসভার সাবেক এই এমপি এবার রত্নগিরি-সিধুঁদুর্গ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাননি।