বাংলারজমিন
দেবীগঞ্জে বেআইনিভাবে দলিল রেজিস্ট্রির অভিযোগ
দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
২৫ মে ২০২৪, শনিবারপঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে শেষ কর্মদিবসে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জমি রেজিস্ট্রির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্ধারিত সময়ের পরে ৯ বিঘা জমির দলিল রেজিস্ট্রির এই অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্ট্রার শিরিন আকতারের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার তার শেষ কর্মদিবস ছিল দেবীগঞ্জে।
বৃহস্পতিবার দেবীগঞ্জ পৌরসভার নতুনবন্দর এলাকার ৯০ বছর বয়সী জাহেদ আলীকে তার মেয়েরা জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার উদ্দেশ্যে হুইল চেয়ারে বসিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। অথচ তিনি বার্ধক্য ও পক্ষাঘাত জনিত কারণে চলাফেরা ও কথা বলতে পারেন না। জাহেদ আলীর অন্যান্য ওয়ারিশরা প্রথম থেকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। অথচ সাব-রেজিস্ট্রার আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন। যার দলিল নম্বর ১৪১৮। অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে তা সংরক্ষিত আছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে জাহেদ আলীর বড় ছেলে রেজানুর হাসান মঞ্জুর (মৃত) মেয়ে শাহনাজ পারভীন বলেন, আমাকে আমার বাবার হক থেকে বঞ্চিত করে আমার সাত ফুফু নিজেদের নামে জমি লিখে নিলো। আমি সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপরও অফিস টাইম শেষে একজন ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়া হলো। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাব-রেজিস্ট্রার শিরিন সুলতানা অফিস ত্যাগ করার সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেন, আপনারা আমার জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে কমপ্লেইন করেন। আমি থানায় এবং ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। দাতা রাজি ছিল তাই জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। সাংবাদিকরা পুনরায় প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করেন।
এর আগে শিরিন আক্তারকে মুঠোফোনে জাহেদ আলীকে জোর করে জমি রেজিস্ট্রি নেয়া হচ্ছে এমনি অভিযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়। সেই সময় তিনি প্রতিবেদককে জানান, এমন কেউই তার সঙ্গে দেখা করেননি। অথচ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, দুপুরেও জাহেদ আলীর মেয়েরা সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করেন। কিন্তু তখন তাদের চলে যেতে বলা হয়। দেবীগঞ্জ থানার এসআই রবিউল ইসলাম বলেন, জোর করে জমি রেজিস্ট্রি নেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এখানে এসেছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। এসে দেখি দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। এর আগেও আমরা একবার এসেছিলাম। তখন সাব-রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, তাই ফিরে যাই।
এদিকে এই পুরো ঘটনায় সহযোগিতা করেন দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত মঞ্জুরুল ইসলাম মনু। তিনি দলিলটি সম্পাদন করেন। জাহেদ আলীর নাতনি শাহনাজ পারভীন এমনটাই অভিযোগ করেন। পুলিশের উপস্থিতিতে দাতা জাহেদ আলীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তার মেয়েরা বাধা দেন। এরপর সেখানে মনু এসে প্রতিবেদককে বাধা দিয়ে নিজেকে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি পরিচয় দেন। এরপর প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, সরকার আমাকে লাইসেন্স দিছে কিসের জন্য? আমাকে আইন শিখতে হবে? আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এরপরও কেন?
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, দুপুরে তারা একবার এসেছিলেন কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরে সন্ধ্যায় সেই জমি রেজিস্ট্রি হয় বলে নিশ্চিত করেন তিনি। বিকাল ৩টার পর কোনোভাবেই জমি রেজিস্ট্রি করতে পারবেন না সাব-রেজিস্ট্রার বলে জানান তিনি। এই বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বকশির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। উল্লেখ্য, জাহেদ আলী বার্ধক্য ও পক্ষাঘাত জনিত কারণে স্বাভাবিক চলাফেরা ও কথা বলতে পারেন না। প্রতিবেদক ঘটনার সময় তাকে জমি রেজিস্ট্রির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি।