খেলা
ফিফার শাস্তির পর যে ব্যাখ্যা দিলেন সালাম মুর্শেদী
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৫ মে ২০২৪, শনিবারগত বছর বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসার পর ব্যাপক শোরগোল সৃষ্টি হয়েছিল ফুটবল অঙ্গনে। গত বছর ১৭ই এপ্রিল জরুরি সভায় সোহাগকে আজীবন নিষিদ্ধ করে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুশের্দী বলেছিলেন, ‘ফিফার ৫১ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ফিন্যান্স কমিটিকে নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। শেষ তিন বছরে ফিন্যান্স কমিটির অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে। ফিফা ও এএফসি থেকে তদন্ত করতে যারা এসেছে, তারা আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আমরা নগদ টাকা ব্যবহার কমিয়েছি, এখন অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয় শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ। এখানে কোনো দুর্নীতির বিষয় লেখা হয়নি। হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার। তাই তার (সোহাগের) ফেরার কোনো সুযোগ আমরা রাখিনি।’ সত্যটা জোরজবরদস্তি করে ঢেকে রাখতে পারলেন না সালাম মুর্শেদী।
ফিফা তার কাজেও পেয়েছে অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ। দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম পাশ কাটিয়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ফিফার নৈতিকতা কমিটি ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানা করেছে সালাম মুর্শেদীকে। বাফুফের ক্রয় ও পরিশোধের প্রক্রিয়াগুলোতে মিথ্যা তথ্য, ত্রুটিপূর্ণ ক্রয়াদেশ এবং ভুয়া দলিলদস্তাবেজ পরিবেশনের দায়ে তাকে এই শাস্তি দিয়েছে ফিফা। যার মাধ্যমে আরেকবার কলঙ্কিত হলো দেশের ফুটবল। যদিও গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দায়সারা ভাবে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন বাফুফের এই কর্মকর্তা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাফুফের আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করছিলো ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা, যার প্রেক্ষিতে ৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে এথিক্স কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একটি শুনানির আয়োজন করে। যেখানে আমার বিরুদ্ধে ফিফার অনুচ্ছেদ ১৪, ১৬ ও ২৫ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। উক্ত শুনানিতে আমি সালাম মুর্শেদী নিজেই আমার আইনজীবীদের সাথে উল্লিখিত অভিযোগ প্রত্যাহার করার পক্ষে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি স্থাপন করি।
ফলস্বরুপ, ৭ মার্চ ২০২৪ তারিখে ফিফা এথিক্স কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার কর্তৃক গৃহীত পরবর্তী সিদ্ধান্তে আমার বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগের মধ্যে দুটি খারিজ করে দেয়। সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ফিফার এথিক্স কমিটির অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার কর্তৃক অধিকতর তদন্তের পর আমার বিপক্ষে আনা মোট তিনটির মধ্যে অনৈতিক কার্যক্রম এবং জালিয়াতি বা মিথ্যাচারের মত গুরুত্বপূর্ন দুইটি অভিযোগের কোন ভিত্তি পায়নি ফিফা। ক্রয় প্রক্রিয়ায় চারজন স্বাক্ষরকারীর মধ্যে দুইজনকে ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দীনের সরাসরি জড়িত না থাকায় তাকে খারিজ করা হয়েছে। তবে আমি যেহেতু ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান সে কারণেই আমাকে গুনতে হচ্ছে নূন্যতম ১০ হাজার সুইসফ্রা আর্থিক জরিমানা।’ নির্দোষ দাবি করলেও এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পথে হাঁটবেন না বলে জানান সালাম। তিনি বলেন, ‘আমি আপিলের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। পরবর্তী আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’ এদিকে সোহাগের দুর্গতি আরও বেড়েছে।
আগেরবার তার বিরুদ্ধে ফিফার তদন্ত প্রতিবেদন ছিল ৫১ পৃষ্ঠার। এবার সেটা বেড়ে হয়েছে ৭৪ পৃষ্ঠা। তাতে শাস্তিও বেড়েছে। আগের দুই বছরে নিষিদ্ধাদেশ চলমান অবস্থায় আরও তিন বছরের জন্য ফুটবল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে শীর্ষ কর্তাদের ছায়ায় থেকে বাফুফেতে অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করা এই মাস্টারমাইন্ডকে। আগেরবারের শাস্তি ছিল ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অনিয়মের ওপর ভিত্তি করে। এবার তার বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে ২০২১ থেকে দায়িত্বে থাকা সময়ে নানা অসঙ্গতি। একই সঙ্গে সঙ্গে সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন ও সাবেক অপারেশন্স ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে আর্থিক জরিমানাসহ সব ধরনের ফুটবল থেকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা।