বিশ্বজমিন
আইসিজের শুনানিতে আইনজীবীরা
মানচিত্র থেকে গাজাকে মুছে ফেলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে
মানবজমিন ডেস্ক
(৪ মাস আগে) ১৭ মে ২০২৪, শুক্রবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২২ পূর্বাহ্ন
মানচিত্র থেকে গাজাকে মুছে ফেলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে ইসরাইলকে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) এমন জোর আবেদন জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির পক্ষে আইনজীবীরা দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান। বলেন, গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করা থেকে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সকে (আইডিএফ) থামাতে হবে। বৃহস্পতিবার হেগে অবস্থিত আইসিজেতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। শুনানিতে বৃটিশ আইনজীবি ভন লোয়ি বলেন, মানচিত্র থেকে গাজাকে মুছে ফেলার যে উদ্দেশ্য ইসরাইল ঘোষণা করেছে তা বোধগম্য। তিনি আরও বলেন, এই আদালত ক্ষমতাহীন নন। তাই তিনি এই আদালতকে একই সঙ্গে তার কর্তৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, গাজায় প্রবেশ, খাদ্য ও মানবিক সরবরাহ বিতরণ এবং জীবন রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যকভাবে গাজায় সামরিক অপারেশন বন্ধ করতে হবে ইসরাইলকে। এরই মধ্যে ডিসেম্বরে দাখিল করা দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন আদালত আমলে নিয়েছেন। তাতে বলা হযেছে, গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল। জানুয়ারিতে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনে এ কথা বলেছিলেন আদালত। ওই সময় আইসিজে দক্ষিণ আফ্রিকার দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে ইসরাইলকে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যেকোনো গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। একই সঙ্গে মানবিক সহায়তার প্রবেশ অবিলম্বে শুরু নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
৭ই অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলের নৃশংস সামরিক অভিযানে নিহতের সংখ্যা আকাশচুম্বী। হামাসের হিসাবে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৩৫,২৩৩। অন্যদিকে গাজায় ১৫ হাজার যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরাইল। তাদের দাবি, বিরাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করছে। সব রকম গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরাইল। তারা বলে, তাদের এই যুদ্ধ হামাসকে টার্গেট করে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তারা যুদ্ধ করছে। কিন্তু মে মাসে আবার আইসিজেতে ফেরত আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। মিশর সীমান্তের কাছে দক্ষিণের রাফায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান বন্ধের লক্ষ্য নিয়ে এবার আদালতের দ্বারস্থ হয় তারা। আদালতে বৃটিশ আইনজীবী লোয়ি জানান, জানুয়ারিতে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা কার্যকর হয়নি। এটা ক্রমেই পরিষ্কার হয়েছে যে, রাফায় ইসরাইলের অভিযান হলো সব শেষের খেলা, যাতে গাজা আক্ষরিক অর্থে ধ্বংস হয়ে যায়। সেখানে গাজা ও ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের এই গণহত্যা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে রক্ষা করা প্রয়োজন। আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছি যে, ইসরাইল বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু এড়িয়ে সবকিছু করার চেষ্টা করছে। আমরা শুনেছি তারা আত্মরক্ষার অধিকারের জন্য লড়াই করছে। শুনেছি ইসরাইলের সেনাবাহিনী ইতিহাসে সবচেয়ে নৈতিক সেনাদল। আমরা এটাও শুনেছি গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা অস্বীকার করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ সত্য এটা মেনে নিতে পশ্চিমারা রাজি নয়। আমাদের মতো মানুষ তারা কিভাবে এই গণহত্যাকে এড়াতে পারেন?
ইসরাইল দাবি করে হামাসের বিরুদ্ধে তারা আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে লড়াই করছে। কিন্তু ভিন্ন তথ্যপ্রমাণ আদালতে তুলে ধরেন লোয়ি। তিনি বলেন, আত্মরক্ষার অধিকার কোনো রাষ্ট্রকে সীমাহীন সহিংসতার লাইসেন্স দেয় না। কোন আত্মরক্ষার অধিকার নির্বিচারে গণহারে সহিংসতা চালানোর অধিকার দেয় না। পুরো একটি জনগোষ্ঠীকে সামষ্টিকভাবে অনাহারে রাখার অধিকার দেয় না। আত্মরক্ষার অধিকার বা অন্য যা-ই হোক তা কোনো গণহত্যাকে বৈধতা দেয় না। এক্ষেত্রে ২০০৪ সালের আইসিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন তিনি। বলেন, আইসিজে বলেছিল- কোনো ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো দখলদার রাষ্ট্রকে আত্মরক্ষার কোনো অধিকার দেয় না।
শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবী তেমবেকা নগকুকাইতোবি গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ঘৃণামূলক বক্তব্যের বহু উদাহরণ তুলে ধরেন। ইসরাইলের শীর্ষ রাজনীতিক, আইডিএফ কমান্ডার এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের উদাহরণ এক্ষেত্রে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, নভেম্বরে দেখা গেছে গাজায় ইসরাইলি সেনারা নাচছেন, স্লোগান দিচ্ছেন, গান গাইছেন- ‘ওদের গ্রাম জ্বালিয়ে দাও, গাজাকে মুছে দাও’।
গাজায় নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতনের দৃশ্য এখন তারা ধারণ করছে। একটি রেকর্ডে একজন সেনাকে দেখা গেছে শেজাইয়ায় ৫০ঘন্টা ধরে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। অন্য সেনারা গান গাইছেন- পুরো খান ইউনুস ও তাদের বাড়িঘর আমরা ধ্বংস করে দেবো। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আরেক আইনজীবী ম্যাক্স ডু প্লেসিস বলেন, নিরাপদ স্থানকে ইসরাইল নিষ্ঠুর বলে ঘোষণা দিয়েছে। কারণ, অনাহারে থাকা মানুষকেও পালিয়ে যেতে হচ্ছে। ওই হিউম্যানিটারিয়ান জোনে কোনোকিছুই মানবিক নেই। সামরিক হামলা এবং মনুষ্যসৃষ্ট অনাহারে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল।
অত্যাচারীরা অবশ্যই ধ্বংস হবে আজ বা কাল
তাহলে গাঁজাকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার কাজ চলছে।