ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

ভেতর বাহির

পদ্মা সেতু কি সত্যিই ‘জাদু’ দেখাবে?

ডা. জাহেদ উর রহমান
৪ জুলাই ২০২২, সোমবার
mzamin

গত কিছুদিন ধরেই পদ্মা সেতু দেশে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে। এখন তীব্রতা কমে এসেছে অনেকটা। এই দেশে বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলো সেতুটি নিয়ে চরম বিতর্কে জড়িয়ে পড়া একরকম অনিবার্যই ছিল। তুলনামূলকভাবে আরও অনেক ছোট ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়ে মাঠ উত্তপ্ত করে তোলে। পদ্মা সেতুর মতো এতবড় বিষয় এবং যেটিকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবার নানা কারণ আছে, তা নিয়ে বিতর্ক তো হবারই কথা।  পদ্মা সেতুর ব্যয় দফায় দফায় বেড়ে বিশ্বব্যাংক থাকাকালীন প্রাক্কলিত প্রাথমিক ব্যয়ের তিনগুণ হয়েছে। ওদিকে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুতে যাবার পথ ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কটি ১১ হাজার কোটি টাকায় তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই মহাসড়ক তৈরি হয়েছে একই মানের ইউরোপ/আমেরিকায় তৈরি করা সড়কের অন্তত ৬ গুণ বেশি খরচে। এছাড়াও সেতুর রেল সংযোগের পেছনে চীনা ঋণ নির্ভর ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের অর্থনৈতিক উপযোগ নিয়ে গুরুতর সংশয় রয়েছে। 

সর্বোপরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সেতুটির অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজের পুরনো বিতর্কটি আবার এসেছে। এসব বিতর্কের মুখে দাঁড়িয়ে সরকার এই সেতু সম্পন্ন করতে পারাকে এক ধরনের যুদ্ধ জয় হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করেছে।

বিজ্ঞাপন
সেতুটি নিয়ে সারা দেশের বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভীষণ উচ্ছ্বাস থাকারই কথা। অন্তত যে মানুষগুলো নিয়মিতভাবে ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন এই রাস্তার ফেরিতে যাবার কষ্টের কথা ভুলতে পারবেন না নিশ্চয়ই। তবে তাদের কষ্ট খুব সহজে শেষ হয়েছে, এমনটা চট করে বলে ফেলা যাবে না। এর মধ্যেই আমাদের সামনে খবর এসেছে ভাঙ্গার পরে দক্ষিণাঞ্চলের বিরাট একটা এলাকায় রাস্তা সরু, আবার ঢাকায় ঢোকার পর ওই এলাকার তীব্র জ্যাম, সব মিলিয়ে সময় কমানোর ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদে এই সেতুর সুবিধা কতোটা পাবেন তারা, সেটা খুব নিশ্চিত নয়। কিন্তু সবকিছুর পরও প্রাথমিক উচ্ছ্বাসটা আছে নিশ্চয়ই। 

নিজের টাকায় সেতু বানানো কি ভালো? 

এই সেতু এবং এর অবিচ্ছেদ্য অংশ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর ব্যয় যেভাবে বেড়েছে, তাতে দুর্নীতির আলোচনা এই কলামে সরিয়ে রাখলেও এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই বিশাল ব্যয় সার্বিকভাবে এই প্রকল্পগুলোর অর্থনৈতিক উপযোগিতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সঙ্গে নিজ অর্থে সেতু বানানোও অর্থনৈতিক বিবেচনায় আমাদের জন্য সঠিক কাজ হয়নি। নিজেদের তহবিল থেকে সেতু তৈরি করার যে গর্ব সরকারের দিক থেকে দেখানো হচ্ছে, তাতে এক ধরনের জাতীয়তাবাদ উস্কে দেয়ার চেষ্টা আছে কিন্তু নেই অর্থনৈতিক জ্ঞান। একজন সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তিও নতুন কোনো শিল্প নিজের নগদ টাকায় তৈরি না করে ব্যাংকে যান এবং নিজের কিছু অংশের সঙ্গে বেশিরভাগ টাকাই নেন ব্যাংক ঋণ থেকে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করে উৎপাদন করে ব্যবসা করতে করতে সেই আয় থেকে ঋণ পরিশোধ করাটাই অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি ভালো পন্থা। এতে ঋণের সুদের পেছনে যে ব্যয় হয়, ব্যবসা থেকে আয় সেটাকে ছাড়িয়ে যায় বহুগুণে। যেকোনো বিবেচনায় ঋণ করে পদ্মা সেতু বানাতে পারলে সেটাই হতো সবচেয়ে ভালো ব্যাপার। এসব ক্ষেত্রে প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী ঋণের ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড থাকে। ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করে প্রকল্প যখন তার অর্থনৈতিক প্রভাব রাখতে শুরু করে তখন তার ঋণ ২০ বা তারও বেশি সময়ে শোধ করা যায়।  

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সংকটের সময়ের সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া দৈনিক সমকালে (২৬শে জুন) সাক্ষাৎকার দিয়ে স্পষ্টভাবে বলেছেন, দোষী না হলেও তাকে সরকার জেলে পাঠিয়েছিল ব্যাংককে খুশি করার জন্য যাতে ঋণটা পাওয়া যায়। একজন মানুষ দোষী না হলেও তাকে জেলে পাঠানো তো এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ। আবার দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি রীতিমতো এক গুরুতর প্রশ্ন তুলে তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, তাকে সরকারই আবার আদালতকে দিয়ে জেল থেকে বের করে। এই সাক্ষাৎকারের ব্যবচ্ছেদে ঢুকছি না, এই কলামের স্বার্থে এটুকু বলতে চেয়েছি, সরকারও আসলে শুরুতে সব রকমভাবে চেষ্টা করেছিল ঋণটা পেতে। 

পদ্মা সেতুর ‘জাদু’ নিয়ে সরকারি দাবি 

সবকিছুর পরও সেতু তৈরি সম্পন্ন হয়ে গেল। সেতু নিয়ে দুর্নীতির সমালোচনা এবং ব্যক্তিগত উচ্ছ্বাস সরিয়ে রেখে জাতি হিসাবে আমাদের সামনে এখন এই আলাপ জরুরি, পদ্মা সেতু আমাদের কতোটা অর্থনৈতিক উপযোগ দেবে এবং সেটা পাওয়া যাবে কী করে।  সরকারের দিক থেকে মন্ত্রী এবং সরকার দলীয় নেতাদের অনেকে তো বটেই, কিছু অর্থনীতিবিদ পদ্মা সেতুকে আমাদের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন, যাতে মনে হয় এই সেতু স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনেক কিছু করে ফেলবে। যেমন- দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশ বাড়বে, ওই এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিক অবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি হয়ে যাবে, মানুষের দারিদ্র্য দ্রুত অনেক কমে যাবে ইত্যাদি। শুনতে মনে হয় অনেকটা জাদু ঘটিয়ে দেবে সেতুটি।  

আরেক বড় সেতু যমুনা কি জাদু দেখিয়েছিল? 

শুধু একটা সেতু কি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাদু ঘটিয়ে দেয়? সেতুর মাধ্যমে সংযুক্তি নিশ্চিত হলেই কি মানুষ বাকি কাজ করে ফেলতে পারে? তাহলে আমাদের এদেশে পদ্মার আগের বৃহৎ সেতুটি নিয়ে কিছুটা আলাপ করা যাক। যমুনা সেতু তার আয়ুর সিকি শতাব্দী পূর্ণ করেছে। তাই এখন বলাই যায়, যথেষ্ট সময় হয়েছে এই সেতুর প্রভাব বিবেচনার জন্য। বলা বাহুল্য যখন যমুনা সেতু উদ্বোধন হয়েছিল, তখনো এখনকার মতোই উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগ রাজশাহী আর রংপুরের মানুষদের মধ্যে। দেখে নেয়া যাক বর্তমান পরিস্থিতিটা কি? এই পর্যায়ে রংপুর আর রাজশাহী বিভাগের কয়েকটি জেলার ২০১০ এবং ২০১৬ সালে জাতীয় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের শতকরা অবস্থান দেখে নেই। এখানে ব্যবহৃত ডেটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা জরিপ থেকে নেয়া হয়েছে। 

 

 

প্রতিটি জেলার ক্ষেত্রে ব্র্যাকেটের প্রথম সংখ্যাটি ২০১০ এবং পরবর্তী সংখ্যাটি ২০১৬ সালে দারিদ্র্যের শতকরা হার নির্দেশ করে- কুড়িগ্রাম (৬৩.৭ এবং ৭০.৮), দিনাজপুর (৩৭.৯ এবং ৬৪.৩), লালমনিরহাট (৩৪.৫ এবং ৪২), নওগাঁ (১৬.৯ এবং ৩২.২), চাঁপাই নবাবগঞ্জ (৩৩.৪ এবং ৩৯.৬), পাবনা (৩১.৫ এবং ৩৩)। অর্থাৎ এই জেলাগুলোতে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৫ বছর ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকার পরও দেশের দরিদ্রতম বিভাগ রংপুরের দারিদ্র্য দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের দ্বিগুণের বেশি (৪৭.২৩ শতাংশ) আর তৃতীয় দরিদ্রতম বিভাগ রাজশাহীতে সেটা প্রায় দেড়গুণ (২৮.৯৩ শতাংশ)। এখানে এই তথ্যও জরুরি, রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের যেসব জেলায় দারিদ্র্য কমেছে সেগুলোতে এই কমার হার দেশের অন্য অনেক অঞ্চলের তুলনায় অনেক ধীর।  মজার ব্যাপার আবহমানকাল থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ময়মনসিংহ বিভাগ বাংলাদেশের দ্বিতীয় দরিদ্রতম বিভাগ যার ৩২.৭৭ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। 

আবার অনাদিকাল থেকে সড়কপথে ঢাকা হতে বিচ্ছিন্ন দুই বিভাগ বরিশাল বিভাগ (২৬.৪৯ শতাংশ) খুলনা বিভাগের (২৭.৪৮ শতাংশ) দারিদ্র্য সর্বোচ্চ তিনে নেই।  আমাদের অনেককে হয়তো ভীষণ অবাক করবে হয়তো এই তথ্য- দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভোলায় দারিদ্র্যের হার মাত্র ১৫.৫ শতাংশ যা জাতীয় হারের তুলনায় বেশ খানিকটা কম। এছাড়াও পদ্মা নদী দিয়ে বিচ্ছিন্ন দুইটি জেলা মাদারীপুর (৩.৭ শতাংশ) এবং ফরিদপুরের (৭.৭ শতাংশ) দারিদ্র্যের হার অকল্পনীয় রকম কম। এসব তথ্য এটা নিশ্চয়ই প্রমাণ করে, রাজধানী এবং দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকাই একটি এলাকাকে আমূল পাল্টে দেয় না। এর সঙ্গে আছে আরও অনেকগুলো জরুরি বিষয়। 

মঙ্গা কি দূর হয়েছে যমুনা সেতুর কারণে? 

যমুনা সেতুর প্রভাব উল্লেখ করতে গিয়ে অনেকেই উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা শেষ হবার উদাহরণ দেন। প্রশ্ন হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা কী সত্যিই শেষ হয়েছে?  এই বছরের ২২শে মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আহমেদ মুশফিক মোবারক ‘সিজনাল প্রভার্টি, ক্রেডিট অ্যান্ড রেমিট্যান্স’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত অনুষ্ঠানে। গবেষণাপত্রটির মাধ্যমে ড. মুশফিক প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে মঙ্গা এখনো দূর হয়নি, তবে তীব্রতা কিছুটা কমেছে।  ড. মুশফিক আমাদের জানান- ‘গবেষণায় অংশ নেয়া মানুষের মধ্যে ২৫ শতাংশ বলেছে, এ সময়ে তারা ঠিকমতো খেতে পায় না অথবা তিনবেলা খেতে পেলেও তার পরিমাণ কম থাকে। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবারও খেতে পায় না। ফলে পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। এ মানুষগুলো বছরের নির্দিষ্ট এ সময়টায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়ও ভোগে।’ 

তার গবেষণার এই তথ্যটি আমাদের অনেককে অবাক করবে- লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় ২০০৭ সালে যেমন মৌসুমী দারিদ্র্য ছিল, ২০২০ সালেও একই আছে।  দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে চাই, এই উন্নতি কোনোভাবেই যমুনা সেতুর সরাসরি প্রভাব থেকে হয়নি। এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর ক্ষেত্রে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল দেয়া এবং মঙ্গার সময়টায় মানুষকে কিছু কাজ দেয়াটা কার্যকরী প্রভাব ফেলেছে। 

অত্যাবশ্যক আরও যেসব বিষয়

ব্যবসার প্রসার এবং বিশেষ করে শিল্পায়নের জন্য অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকা জরুরি। যোগাযোগ অবকাঠামো শুধু সেতু থাকলেই হবে না, প্রতিটি পর্যায়ে থাকতে হবে ভালো মানের প্রশস্ত সড়ক। থাকতে হবে ভালো মানের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগ এবং সেটা হতে হবে সুলভ। ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের সহজে ব্যাঙ্কঋণ পাবার ব্যবস্থা থাকতে হবে।  শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশসহ আরও যে সকল সংস্থার ছাড়পত্র পাবার প্রয়োজন সেগুলো একইসঙ্গে একই জায়গা থেকে (ওয়ান স্টপ সার্ভিস) পাবার ব্যবস্থা হতে হয়। শিল্প স্থাপনের জন্য আকাশচুম্বি মূল্যে জমি কিনতে হলে সেটা দিয়েও শিল্পকে লাভজনক করে তোলা যাবে না। সর্বোপরি নানা আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা এবং দুর্নীতি ও শিল্পায়নের পথে বিরাট বাধা। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের খুব খারাপ পরিস্থিতির কারণে সহজে ব্যবসার সূচকে আমাদের দেশের অবস্থান একেবারে তলানিতে আছে, আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সেটা। 

ওদিকে পচনশীল মৎস্য এবং কৃষিপণ্য সহজে পরিবহন করা গেলেও দেখতে হবে সেতু এবং হাইওয়ের টোল মিলে পরিবহন খরচ যদি বেড়ে যায় (পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে হচ্ছে সেটা) তাহলে তার সুফল ভালো পাওয়া যাবে না। আর কৃষিপণ্য পরিবহন থেকে যদি মুনাফা বাড়ে তাহলে এটাও খেয়াল রাখতে হবে সেই মূল্যের কতটা প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌঁছে। প্রতিবছর শীতের সময় দেশের উত্তরাঞ্চলে নানা সব্জির দাম কৃষকরা পান না, তাই সেসব তারা গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন কিংবা জমিতে ফেলে পচিয়ে ফেলেন- এমন খবর আমরা নিয়মিত পাই।  সড়ক পথে একটা বিচ্ছিন্ন জনপদ সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হওয়া নিশ্চিতভাবেই ভালো। 

কিন্তু আমাদের এটা মনে রাখতে হবে এই যুক্ত হওয়াটাই জাদু দেখিয়ে দেয় না, অর্থাৎ বাকি কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ করবে না। এই সংযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব কতোটা পড়বে, কীভাবে পড়বে এবং সেই প্রভাবের কতোটা সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে পর্যন্ত পৌঁছাবে সেটার সঙ্গে খুব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নীতি এবং সক্ষমতা জড়িত। তাই পদ্মা সেতু হয়েছে, এই আত্মতৃপ্তিতে না ভুগে এই সেতুর সুফল দেশের সকল মানুষের, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের কাছে যেন পৌঁছে, সেই পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের ওপর চাপ জারি রাখতে হবে। 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status