নির্বাচিত কলাম
আন্তর্জাতিক
রক্তপাত নাকি শান্তি কোন পথে ট্রাম্প!
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবারসম্প্রতি ট্রাম্পের ‘রক্তপাতের’ হুঁশিয়ারি বিশ্ব জুড়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। তিনি একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট। এ বছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হচ্ছেন। দলটির প্রাইমারি নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই তার প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়েছে। ফলে ৫ই নভেম্বর ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আবার মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে যাচ্ছেন। তার আগে তাকে নির্বাচিত করা না হলে ‘রক্তপাত’ হবে- এমন হুঁশিয়ারি কোনো সাধারণ অর্থ বহন করে না। যদি তিনি সাধারণ অর্থেও এমন কথা বলেন, তাহলেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন শব্দচয়ন বড্ড বেমানান। ট্রাম্প ওহাইওতে ডেটনে এক র্যালিতে বলেন, যদি আমি নির্বাচিত না হই, তাহলে রক্তগঙ্গা বয়ে যেতে পারে। দেশের জন্য এটা হবে রক্তপাত। তার এমন কথায় অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে। কিন্তু তিনি অটোমোবাইল কারখানা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেছেন। এরপর তিনি আবার নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের যানবাহন আমদানি বন্ধের হুমকি দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কিসের ইঙ্গিত দিলেন! তিনি আরেকটি রক্তপাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাও স্বাভাবিকভাবে সেই হুঁশিয়ারি নয়। সরাসরি তাকে নির্বাচিত করতেই হবে এমন এক সতর্কতা। যদি নির্বাচিত করা না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে রক্তপাত ঘটবে বলে তিনি সতর্কতা দিয়েছেন। কীভাবে সেই রক্তপাত ঘটবে সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত বিশ্লেষণ তিনি দেননি। তবে কি ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির মতো বা তার চেয়েও ভয়াবহ কোনো দাঙ্গার ইঙ্গিত দিলেন ট্রাম্প? আগামী ৫ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন। আবার কখনো তিনি শান্তির বার্তা দিচ্ছেন। বলছেন, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। একই সঙ্গে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেছেন।
বলেছেন, দ্রুত গাজা যুদ্ধ শেষ করতে। বিশ্ব জুড়ে শান্তি ফেরানোর পথ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের মানুষ ট্রাম্প। তিনি নিজের জীবনকে উপভোগ করেছেন সব দিক দিয়ে। তিনি রেসলিংয়ে উপস্থিত হয়েছেন। জোশ প্রদর্শন করে ভিন্স ম্যাকমোহনের মাথা টাক করে দিয়েছেন। চারদিক থেকে তখন উল্লাসধ্বনি। তিনি টেলিভিশন রিয়েলিটি শোতে উপস্থিত হয়েছেন। এমন শো করেছেন। তবে সে সময়ে নারীদের প্রতি তার আচরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। তিনি কলাম লেখিকা ক্যারলকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে পর্নো তারকা স্টর্মি ডানিয়েলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের। ঠিক ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে স্টর্মি ডানিয়েল যাতে এই সম্পর্ক নিয়ে মুখ না খোলেন, সে জন্য তার মুখ বন্ধ করতে বিপুল অর্থ দিয়েছেন। তার আইনজীবী মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে সেই অর্থ হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু অনেকটা পরে এসে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন স্টর্মি ডানিয়েল। তিনি হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন। বলেছেন, তার সঙ্গে ট্রাম্পের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। তাকে অর্থ দিয়ে এ সম্পর্কের কথা প্রকাশ না করতে বলা হয়েছে। এখানে এসেই শেষ নয়। ট্রাম্প তার ট্রাম্প অর্গানাইজেশন চালাতে গিয়ে সরকারের খাতায় কখনো সম্পদ বাড়িয়ে আবার কখনো একেবারে লোকসান দেখিয়েছেন। নতুন নতুন ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পদ বাড়িয়ে দেখিয়েছেন। আবার আয়কর মাফ পাওয়ার জন্য সম্পদ কম দেখিয়েছেন। এসব ঘটনা নিয়ে একের পর এক মামলা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হওয়ার পর যে দাঙ্গা হয় যুক্তরাষ্ট্রে তা বিরল।
২০২১ সালের ৬ই মার্চ যখন নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে স্বীকৃতি দিতে ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেসের উভয়কক্ষের যৌথ অধিবেশন বসে- তখন তার উস্কানিতে তার সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে মধ্যযুগীয় কায়দায় হামলা চালায়। সেদিন অল্পের জন্য রক্ষা পান স্পিকার, সিনেটর, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা। কমপক্ষে ৫ জন নিহত হন সেদিন। ক্যাপিটল হিল রক্তাক্ত হয়। মূল্যবান আসবাবপত্র, ডকুমেন্ট, কম্পিউটার তছনছ করা হয়। প্রতিনিধি পরিষদের তখনকার স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির চেয়ারে পা তুলে দাঙ্গাকারীদের বিজয়ী বেশে ছবি তুলতে দেখা যায়। এসব ভূমিকায় ব্যাপক বিতর্কিত ডনাল্ড ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও রিপাবলিকানদের কাছে তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয়। তার সময়ে শুধু যে উগ্রপন্থার উত্থান দেখা গেছে এমন নয়, একই সঙ্গে মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে দেয়াল তুলে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। মুসলিম অভিবাসীদের বের করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ থেকে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন। ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক ২০১৫ সালের চুক্তি বাতিল করেন। আব্রাহাম চুক্তির অধীনে বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ বেশ কিছু মুসলিম দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ভূমিকা রাখেন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের করে নেন যুক্তরাষ্ট্রকে। এমনিতরো আরও অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়ে দৃশ্যত চীন ও রাশিয়াকে পথ পরিষ্কার করে দেন। এর মধ্যদিয়ে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। তবে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সৃষ্ট অচলাবস্থা ভাঙার চেষ্টা করেছেন তিনি। সামিটে বসেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে। কিন্তু চীনের সঙ্গে ঠিকই দা-কুমড়ো সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেন। অর্থনীতি নিয়ে সৃষ্ট একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় এ সম্পর্ক আরও কঠোর থেকে কঠোর হয়।
কিন্তু সম্প্রতি ট্রাম্পের ‘রক্তপাতের’ হুঁশিয়ারি বিশ্ব জুড়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। তিনি একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট। এ বছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হচ্ছেন। দলটির প্রাইমারি নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই তার প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়েছে। ফলে ৫ই নভেম্বর ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আবার মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হতে যাচ্ছেন। তার আগে তাকে নির্বাচিত করা না হলে ‘রক্তপাত’ হবে- এমন হুঁশিয়ারি কোনো সাধারণ অর্থ বহন করে না। যদি তিনি সাধারণ অর্থেও এমন কথা বলেন, তাহলেও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন শব্দচয়ন বড্ড বেমানান। ট্রাম্প ওহাইওতে ডেটনে এক র্যালিতে বলেন, যদি আমি নির্বাচিত না হই, তাহলে রক্তগঙ্গা বয়ে যেতে পারে। দেশের জন্য এটা হবে রক্তপাত। তার এমন কথায়
অনেকেরই চোখ কপালে উঠেছে। কিন্তু তিনি অটোমোবাইল কারখানা নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেছেন। এরপর তিনি আবার নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের যানবাহন আমদানি বন্ধের হুমকি দেন। পলিটিকোর মতে, অব্যাহতভাবে দেশকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিচ্ছেন ট্রাম্প। যতই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, ততই তা প্রখর হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারির মতো দাঙ্গা ঘটাতে পারেন ট্রাম্প। ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের এই প্রার্থী প্রচারণাগুলোতে ওই ৬ই জানুয়ারির ইভেন্টকে মাঝে মধ্যেই টেনে আনছেন। চার বছর আগে ওই নির্বাচনে তিনি পরাজয়ের বিরুদ্ধে এখনও কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভোট চুরি করে তাকে পরাজিত করা হয়েছে। তবে কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি। উল্টো শনিবার ওহাইওর ওই র্যালির শুরু করেন ৬ই জানুয়ারির বন্দিদের জাতীয় সংগীত গাওয়ার রেকর্ডিং শুরুর মাধ্যমে। তার যেসব সমর্থক ‘জিম্মি’ আছে বলে তিনি দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে প্রথম দিনেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ট্রাম্প বলেন, আপনারা জিম্মিদের উদ্দীপনা দেখতে পারেন। এ জন্যই তাদেরকে ‘জিম্মি’ করা হয়েছে। র্যালির উদ্বোধন করে এ কথা বলেন ট্রাম্প। এবারও বাইডেন-ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিতর্ক হতে পারে। তারা উভয়েই ক্যাপিটল হিলের সেই দাঙ্গার বিষয়ে জোরালো কথাবার্তা বলছেন। গণতন্ত্রে নভেম্বরের নির্বাচনের গুরুত্ব জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন জো বাইডেন। রিপাবলিকানরা এবং ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির রাজনীতির ওপর বড় হুমকি বলে মনে করেন তিনি। বাইডেন বলেন- এই সেই ডনাল্ড ট্রাম্প: তিনি একজন পরাজিত ব্যক্তি। কমপক্ষে ৭০ লাখ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তারপর রাজনৈতিক সহিংসতার হুমকি দ্বিগুণ করেছেন। ফলে ট্রাম্প রক্তপাতের পথেই হাঁটবেন নাকি বিশ্ব জুড়ে শান্তির পথে- সে এক বড় প্রশ্ন হয়ে আছে।
অসাধারণ লেখা জনাব আবুল হোসেন ভাই। মানবতার ফেরিওয়ালা সে যুক্তরাষ্ট্রেই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা। তবে আমরা মানবতার মুক্তি চাই, রক্তপাতহীন শান্তিপূর্ণ বিশ্ব চাই।
Trump is mentally sick and jocker...
স্রেফ পাগলের প্রলাপ । শ্বেতাঙ্গ রা ব্লু ব্লাডের মানসিকতা থেকে বের হতে পারেনি ।
পুতিন বলেছেন এক হাজার ডলার করে নাকি ভোট কেনা যায়।